Best Homeo Doctor

শিশুদের দুশ্চিন্তা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

শিশুদের দুশ্চিন্তা (Childhood Anxiety) একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে শিশুরা অকারণে বা অতিরিক্তভাবে উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত বা ভয় অনুভব করে। এটি একটি সাধারণ মানসিক সমস্যা যা শিশুদের মধ্যে দেখা দিতে পারে এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন স্কুলে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে খেলা, বা সামাজিক পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণ।

শিশুদের দুশ্চিন্তার কারণ:

দুশ্চিন্তার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. পরিবেশগত পরিবর্তন:
    • পরিবারের কোনো পরিবর্তন, যেমন মা-বাবার মধ্যে সম্পর্কের সমস্যা, বিচ্ছেদ, বা নতুন সদস্যের আগমন (যেমন ভাই-বোন)।
    • স্থানান্তর (নতুন শহরে বা স্কুলে যাওয়া) বা নতুন পরিবেশে অবস্থান।
    • অতিরিক্ত চাপ, যেমন স্কুলের কঠিন কাজ বা পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ।
  2. পারিবারিক ইতিহাস:
    • যদি পরিবারের মধ্যে কেউ দুশ্চিন্তা বা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে সংগ্রাম করে থাকে, তাহলে শিশুদের মধ্যে এটি বেড়ে যেতে পারে। দুশ্চিন্তা জেনেটিক কারণে শিশুর মধ্যে হতে পারে।
  3. শারীরিক অসুস্থতা:
    • শিশু যদি দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক রোগ বা সমস্যা (যেমন অ্যাজমা বা হাঁপানি) নিয়ে থাকে, তবে তাদের মধ্যে উদ্বেগ হতে পারে।
  4. মিথ্যা ধারণা বা ভয়:
    • শিশুরা যদি কিছু ভয় বা আতঙ্কপূর্ণ চিন্তা করে (যেমন অন্ধকার, ভূত, প্রাণী ইত্যাদি), তাহলে তাদের মধ্যে উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা হতে পারে।
  5. অতিরিক্ত চাপ বা প্রত্যাশা:
    • স্কুলের পড়াশোনার চাপ, পারফরমেন্সের জন্য অভিভাবক বা শিক্ষক দ্বারা অত্যধিক প্রত্যাশা এবং পরিশ্রমী কাজ শিশুর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।
  6. অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা বা আবেগগত সমস্যা:
    • শিশুরা যদি অনুভব করে যে তারা নিরাপদ নয় বা তাদের প্রতি ভালোবাসা এবং সমর্থন কম, তবে তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়তে পারে।

শিশুদের দুশ্চিন্তার লক্ষণ:

শিশুদের মধ্যে দুশ্চিন্তার লক্ষণ প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে আলাদা হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. অতিরিক্ত ভয়:
    • শিশু যদি অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় ভয় বা আতঙ্ক অনুভব করে, যেমন অন্ধকার, স্কুল, বা সামাজিক পরিস্থিতি।
  2. অবাঞ্ছিত আচরণ:
    • শিশুরা যদি অস্থির হয়ে পড়ে বা অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে, যেমন বারবার একই প্রশ্ন করা বা কিছু নির্দিষ্ট কাজ বা পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা।
  3. শারীরিক সমস্যা:
    • দুশ্চিন্তার কারণে শিশুর শারীরিক সমস্যা হতে পারে, যেমন মাথাব্যথা, পেটব্যথা, বমি, বা ঘুমের সমস্যা।
  4. ভয় বা অস্বস্তি অনুভব করা:
    • বিশেষ করে নতুন পরিবেশে বা পরিস্থিতিতে শিশু শঙ্কিত বা অস্বস্তি অনুভব করতে পারে এবং সে পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে পারে।
  5. আতঙ্কিত হওয়া:
    • দুশ্চিন্তার কারণে শিশুর মাঝে অতিরিক্ত আতঙ্কের অনুভূতি তৈরি হতে পারে, যা সাধারণত কোন নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বা চিন্তা থেকে উদ্ভূত হয়।
  6. নতুন পরিবেশে আচরণগত পরিবর্তন:
    • স্কুল বা বন্ধুদের সঙ্গে খেলা বা অন্যদের সামনে গিয়ে শিশু যদি অস্বস্তি বা অবিচ্ছিন্ন ভয় অনুভব করে, তাহলে এটি দুশ্চিন্তার লক্ষণ হতে পারে।
  7. আত্মবিশ্বাসের অভাব:
    • শিশু যদি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী না থাকে এবং চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে ভয় পায়, তবে এটি দুশ্চিন্তার লক্ষণ হতে পারে।

শিশুদের দুশ্চিন্তার প্রতিকার:

শিশুদের দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ কমানোর জন্য কিছু কার্যকর প্রতিকার রয়েছে:

  1. আবেগগত সমর্থন:
    • শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের সহানুভূতি, ভালোবাসা ও সমর্থন দেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে বুঝতে দেওয়া যে তার অনুভূতিগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং তাকে ভালোবাসা হচ্ছে।
  2. আলাপআলোচনা:
    • শিশুর সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করা এবং তার উদ্বেগ বা ভয় নিয়ে কথা বলা। শিশুকে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে সাহায্য করা এবং তাকে বুঝানো যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
  3. মানসিক প্রশান্তি শিথিলকরণ:
    • শিশুকে শিথিলকরণ বা মেডিটেশন (যেমন শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম) শেখানো যাতে সে মানসিকভাবে শান্ত থাকতে পারে। এটি তার উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  4. আলোর মধ্যে রাখতে শিখানো:
    • শিশুদের ভয় বা দুশ্চিন্তা কাটাতে তাদের নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে শেখানো এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়া।
  5. প্রতিদিনের রুটিন:
    • শিশুদের জন্য একটি সুষম এবং নিয়মিত রুটিন থাকা প্রয়োজন। একটি পরিষ্কার সময়সূচি শিশুকে নিরাপত্তা এবং শান্তি প্রদান করতে পারে।
  6. পরীক্ষা বা স্কুলের চাপ কমানো:
    • শিশুদের পড়াশোনার চাপ কমানো, এবং পড়াশোনা বা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সমর্থন প্রদান করা।
  7. প্রফেশনাল সাহায্য:
    • যদি শিশু দুশ্চিন্তার কারণে দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করতে অক্ষম হয়, তবে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ (মनोবিদ) এর পরামর্শ নেওয়া উচিত। তারা কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) বা অন্যান্য থেরাপি দিতে পারে।
  8. চিকিৎসা (ঔষধ):
    • যদি শিশুর দুশ্চিন্তা খুবই গুরুতর হয় এবং অন্যান্য পদ্ধতি দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়, তবে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা, যেমন অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ঔষধ বা অন্যান্য থেরাপি প্রস্তাব করতে পারেন।

শেষ কথা:

শিশুদের দুশ্চিন্তা একটি সাধারণ সমস্যা, তবে এটি যথাযথ সমর্থন, মনোযোগ, এবং চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। যদি আপনি মনে করেন যে আপনার শিশু অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন, তবে দ্রুত একজন পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *