Best Homeo Doctor

শিশুদের কলিক বেদনা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

শিশুদের কলিক বেদনা (Infantile Colic) একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে নবজাতক শিশুদের মধ্যে, যা পেটের ব্যথার কারণে অস্বস্তি বা কাঁদা সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত প্রথম ৩-৪ মাস বয়সী শিশুর মধ্যে দেখা যায় এবং বেশিরভাগ সময়ই অস্থায়ী। কলিক বেদনা প্রধানত পেটে গ্যাস বা হজমের সমস্যার কারণে ঘটে।

কলিক বেদনার কারণ:

  1. পেটের গ্যাস:
    • শিশুদের হজম পদ্ধতি এখনও পুরোপুরি উন্নত হয় না, তাই খাওয়ার সময় বা পরে গ্যাস জমা হতে পারে। গ্যাসের কারণে পেটে চাপ পড়ে, যা কলিক বা পেটের ব্যথা সৃষ্টি করে।
  2. অপ্রত্যাশিত খাবার বা শোষণ সমস্যা:
    • কিছু শিশু একে অপরের চেয়ে খাবার শোষণে সমস্যা অনুভব করে, যা গ্যাস বা পেটের অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে শিশু অতিরিক্ত কাঁদে।
  3. অনিয়ন্ত্রিত বা বেশি খাওয়া:
    • শিশু বেশি দুধ খেলে বা খুব তাড়াতাড়ি খেলে গ্যাস তৈরি হতে পারে এবং পেট ফুলে যেতে পারে, যা কলিক বেদনার কারণ হতে পারে।
  4. মায়ের খাবার:
    • মায়ের খাদ্যাভ্যাসও শিশুর পেটে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যদি মায়ের দুধে কোন ধরনের অ্যালার্জেন বা গ্যাস উৎপন্নকারী উপাদান থাকে (যেমন মশলাদার খাবার, দুধ, শাকসবজি)।
  5. মানসিক চাপ বা উদ্বেগ:
    • শিশু যখন মানসিক চাপ অনুভব করে (যেমন অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরমের মধ্যে রাখা, ঘুম না আসা) তখন কলিকের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  6. অস্থিরতা বা পরিবেশগত পরিবর্তন:
    • শিশুর পরিবেশের পরিবর্তন, যেমন পরিবারের সদস্যদের অস্থিরতা বা নতুন পরিবেশে স্থানান্তর, শিশুর মধ্যে কলিকের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
  7. পরিপক্বতার অভাব:
    • কিছু ক্ষেত্রে, শিশুর পাচন বা পাচনতন্ত্র পুরোপুরি পরিপক্ব না হওয়া পর্যন্ত এটি কলিকের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

কলিক বেদনার লক্ষণ:

  1. অতিরিক্ত কাঁদা:
    • কলিকের প্রধান লক্ষণ হলো, শিশুর হঠাৎ করে অতিরিক্ত কাঁদা। এই কান্না সাধারণত একটানা ৩ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে হতে পারে এবং মূলত দুপুর বা সন্ধ্যায় হয়।
  2. পেটের ভিতরে গ্যাস বা ফুলে যাওয়া:
    • শিশুর পেটে গ্যাস জমে যাওয়ায় পেট ফুলে যেতে পারে এবং শিশুটি তীব্র অস্বস্তি অনুভব করতে পারে। পেট চেপে ধরে বা পা মুড়ে রাখতে পারে।
  3. খাবার গ্রহণের পর অস্বস্তি:
    • কলিক বেদনায় আক্রান্ত শিশুটি খাবার খাওয়ার পর অস্বস্তি বা খিদে কম অনুভব করতে পারে এবং সে খাবার খাওয়ার প্রতি অনীহা দেখাতে পারে।
  4. অস্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস এবং বিরক্তি:
    • শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যেতে পারে এবং সে বিরক্ত বা অস্থির থাকতে পারে, এমনকি ঘুমেও সমস্যা হতে পারে।
  5. গা ঘেঁষানো বা শরীর মোচড়ানো:
    • কলিকের ব্যথায় শিশুর শরীর ঘেঁষানো বা শরীর মোচড়ানো হতে পারে, যা পেটের ব্যথা বা অস্বস্তি প্রদর্শন করে।
  6. গরম বা ঠান্ডা অনুভূতি:
    • শিশুর শরীরে গরম বা ঠান্ডা অনুভূতি থাকতে পারে এবং তার ত্বকও হয়তো বেশি রেগে যেতে পারে।

কলিক বেদনার প্রতিকার:

  1. পেট ম্যাসাজ:
    • শিশুর পেট আলতোভাবে ম্যাসাজ করা গ্যাস বা শূল বেদনা কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে বাচ্চার পেটের নিচের দিকে গোলাকার গতিতে ম্যাসাজ করলে উপকার পাওয়া যায়।
  2. গরম সেক:
    • শিশুর পেটে একটি গরম সেক প্রয়োগ করলে পেটের ব্যথা কমতে পারে। এটি গ্যাস বা অস্বস্তি হালকা করতে সহায়তা করতে পারে।
  3. হালকা আন্দোলন বা হাঁটা:
    • শিশুকে পেটের উপরে দিয়ে হাঁটাতে বা তাকে হালকা ভল্টে রাখতে সাহায্য করতে পারে। এতে গ্যাস বের হয়ে পেটের চাপ কমে যেতে পারে।
  4. শিশুকে শান্ত রাখুন:
    • শিশুকে শান্ত রাখতে এবং তার উদ্বেগ কমাতে, অভিভাবকরা শিশুকে কোলে নিতে, সঙ্গ দিতে বা শান্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারেন।
  5. পুষ্টির প্রতি নজর দিন:
    • মা যদি দুধ পান করান, তবে তাকে খাবারের প্রতি নজর দিতে হবে। গ্যাস বা অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে এমন খাবার (যেমন দুধ, মশলা) এড়িয়ে চলুন।
  6. শিশুর খাদ্য পরীক্ষা করুন:
    • শিশুর খাদ্য ও পানীয় (যেমন ফর্মুলা দুধ) পর্যালোচনা করা উচিত, কারণ কিছু খাবার শিশুর পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  7. পেটের গ্যাস দূর করার জন্য ঔষধ:
    • কিছু ক্ষেত্রে, শিশুর ডাক্তার গ্যাস বা পাচন সমস্যা কমানোর জন্য ঔষধ পরামর্শ দিতে পারেন, তবে এ ধরনের ঔষধ শুধু চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা উচিত।
  8. শিশুর দৈনন্দিন রুটিন:
    • শিশুর একটি রুটিন তৈরি করা এবং সঠিক সময়ে তাকে খাওয়ানো ও শোওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা কলিক সমস্যা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  9. মানসিক চাপ কমানো:
    • শিশুর মানসিক চাপ কমানোর জন্য মৃদু শব্দে গান গাওয়া বা শিশুর সঙ্গে সময় কাটানো, তাকে আরামদায়ক পরিবেশে রাখা প্রয়োজন।
  10. চিকিৎসকের পরামর্শ:
    • যদি কলিক বেদনা গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কখনও কখনও এটি অন্য কোন স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে, তাই পেডিয়াট্রিশিয়ান পরামর্শ নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

শেষ কথা:

কলিক বেদনা একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা, যা প্রায় সব শিশুর মধ্যেই কিছু সময় দেখা দেয়। সাধারণত এটি অস্থায়ী এবং সময়ের সঙ্গে কমে আসে। তবে, যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা যদি গুরুতর উপসর্গ থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *