Best Homeo Doctor

শক খাওয়া বা বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়া কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

শক খাওয়া বা বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়া (Electric Shock) হল এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে শরীরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, যার ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এটি সাধারণত কোনো বৈদ্যুতিক ডিভাইসের সংস্পর্শে আসার ফলে ঘটে এবং খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়া বিভিন্ন মাত্রার হতে পারে, যেমন ক্ষণস্থায়ী হালকা শক থেকে শুরু করে মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী শকের মতো গুরুতর অবস্থা।

বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার কারণ:

  1. বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার:
    • বিদ্যুৎজনিত যন্ত্রপাতি বা ডিভাইসের শর্ট সার্কিট বা লুকানো ত্রুটি থেকে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হতে পারে।
    • ভুলভাবে তারে হাত দেয়া বা অস্থায়ী তারে পা পড়া ইত্যাদি কারণে বিদ্যুৎ প্রবাহ শরীরে প্রবাহিত হতে পারে।
  2. ভেজা অবস্থায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার:
    • শরীর বা হাত ভেজা অবস্থায় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সংস্পর্শে আসলে বিদ্যুৎ প্রবাহ শরীরে চলে আসতে পারে, কারণ পানি বিদ্যুৎ পরিবাহিত করে।
  3. বিদ্যুৎ লাইন বা তারে সরাসরি যোগাযোগ:
    • বিদ্যুৎ লাইনের তারে সরাসরি স্পর্শ বা পাওয়ার তারের কাছে যাওয়ার কারণে স্পৃষ্ট হতে পারে।
  4. বিদ্যুতের লাইন বা তারের ত্রুটি (Faulty wiring):
    • অতি পুরানো বা ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সিস্টেম ব্যবহারের ফলে শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে।
  5. অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি (Accidental contact):
    • মেরামত বা কাজ করার সময় ভুলক্রমে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের সংস্পর্শে আসা।
  6. বৈদ্যুতিক বজ্রপাত (Lightning Strike):
    • বজ্রপাতের কারণে বাহ্যিকভাবে ভয়ানক বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হতে পারে।

বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার লক্ষণ:

বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার পর শরীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে, তার মধ্যে সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

  1. বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যথা:
    • বিদ্যুৎ প্রবাহ শরীরের মাধ্যমে গেলে, তা তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে হাত বা পায়ের পেশিতে।
  2. অস্বাভাবিক শ্বাসকষ্ট (Breathing problems):
    • শক খাওয়ার ফলে শ্বাসনালি আক্রান্ত হতে পারে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  3. তীব্র মাংসপেশির খিঁচুনি (Muscle spasms):
    • বিদ্যুৎ প্রবাহ পেশিতে খিঁচুনি সৃষ্টি করতে পারে, যা কিছু সময়ের জন্য শরীরকে নিয়ন্ত্রণহীন করে ফেলতে পারে।
  4. মনোযোগের অভাব অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (Loss of consciousness):
    • মারাত্মক শকের কারণে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
  5. হৃদস্পন্দন ধীর বা দ্রুত হওয়া (Irregular heartbeat):
    • বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার ফলে হৃদয়ের সুস্থ কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে, যা অ্যারিথমিয়া বা হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক গতি সৃষ্টি করতে পারে।
  6. ভোগান্তি বা শক হওয়ার পরে মনোযোগহীনতা (Confusion):
    • শক খাওয়ার পর ব্যথা, অসুস্থতা এবং বিভ্রান্তি হতে পারে।
  7. শরীরের পোড়া বা জ্বালাপোড়া (Burns):
    • কিছু ক্ষেত্রে, বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে শরীরে পোড়া বা ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষত যেখানে তার বা বিদ্যুৎ প্রবাহের সংস্পর্শে এসেছে।
  8. হালকা বা গুরুতর নিউরোলজিক্যাল সমস্যা:
    • কিছু ক্ষেত্রে শরীরে তীব্র ঝাঁকুনি বা পেশির সমস্যা হতে পারে, যা দীর্ঘস্থায়ী নৃবিক বা স্নায়ুতান্ত্রিক ক্ষতি সৃষ্টি করতে পারে।

বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়ার প্রতিকার:

বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হলে কী করা উচিত এবং কীভাবে চিকিৎসা করা উচিত তা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিকার ও চিকিৎসা সঠিকভাবে জানলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব।

প্রাথমিক চিকিৎসা (First Aid):

  1. তত্ক্ষণাত্ বিদ্যুৎ সরানো:
    • বিদ্যুৎ সরিয়ে ফেলুন: যদি আপনি সেই ব্যক্তিকে সাহায্য করছেন, তবে প্রথমে বিদ্যুৎ সরিয়ে ফেলুন। কোনও বৈদ্যুতিক সুইচ বন্ধ করে দিন বা প্লাগের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন।
    • যদি বিদ্যুৎ সরানো সম্ভব না হয়, তবে আলোকিত বা সুকৌশল উপকরণ ব্যবহার করে তার বা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন (যেমন, রাবার গ্লাভস, কাঠের ছড়ি ইত্যাদি)।
  2. শরীর থেকে বিদ্যুৎ সরানো:
    • সাবধানে শরীর থেকে বিদ্যুৎ সরিয়ে ফেলুন, তবে নিশ্চিত করুন যে আপনি খালি পায়ে বা ভেজা অবস্থায় না আছেন। শক খাওয়ার লোকের কাছ থেকে দূরে সরতে হবে।
  3. অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসুন:
    • যদি সম্ভব হয়, তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসুন এবং কিছুটা বিশ্রাম দিন।
  4. বাঁচানোর জন্য CPR (Cardiopulmonary Resuscitation):
    • যদি ব্যক্তিটি অজ্ঞান হয়ে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তবে সিপিআর শুরু করুন (আপনার সঠিক প্রশিক্ষণ থাকলে)। প্রথমে 30টি সি-পি-আর সংকোচন করুন, তারপর 2টি শ্বাস দিন।
  5. তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা:
    • বিদ্যুৎ স্পৃষ্টের পর, যদি ব্যক্তির শরীরে ভোগান্তি বা জ্বর, পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন, বা হৃদস্পন্দন সমস্যা থাকে, তবে ডাক্তার বা চিকিৎসা কেন্দ্র তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করুন।

বিদ্যুৎ স্পৃষ্টের চিকিৎসা:

  1. হাসপাতালে চিকিত্সা:
    • প্রাথমিক চিকিৎসার পর, একজন চিকিৎসক বা অ্যাম্বুলেন্স এর মাধ্যমে হাসপাতালে নেওয়া উচিত, বিশেষত যদি ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস বা হৃদস্পন্দনে সমস্যা হয়।
  2. ব্যথা ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ:
    • বিদ্যুৎ স্পৃষ্টের কারণে পোড়া বা ক্ষত হলে, অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম এবং পেইন কিলার ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে। গুরুতর পোড়া বা ত্বকের ক্ষতি হলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
  3. হৃদরোগ বা নিউরোলজিক্যাল সমস্যার জন্য মনিটরিং:
    • বিদ্যুৎ স্পৃষ্টের পর, কিছু ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের সমস্যা বা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে, তাই প্রয়োজন হতে পারে স্নায়ুতন্ত্র বা হৃদযন্ত্র মনিটরিং এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা।

প্রতিরোধ:

  1. বিদ্যুৎ সুরক্ষা ব্যবস্থা:
    • বৈদ্যুতিক সিস্টেমের সঠিক অধিকারিক পরীক্ষা এবং ভাল মানের তার ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
  2. বিদ্যুৎ সরঞ্জাম ব্যবহারের সময় সতর্কতা:
    • ভেজা হাতে বা ভেজা শরীর অবস্থায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
  3. সঠিক প্রশিক্ষণ:
    • বিদ্যুৎ সম্পর্কে সচেতনতা এবং সুরক্ষিত উপায়ে বৈদ্যুতিক কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ নিন।
  4. বাচ্চাদের জন্য নিরাপত্তা:
    • বাচ্চাদের কাছ থেকে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম দূরে রাখুন, এবং বিদ্যুৎ লাইন বা তারগুলিকে সুরক্ষিত অবস্থায় রাখুন।

সারাংশ:

বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হওয়া মারাত্মক এবং জীবননাশক হতে পারে। এটি মূলত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বা তারের সঙ্গে শারীরিক সংস্পর্শে আসার ফলে ঘটে। বিদ্যুৎ স্পৃষ্টের লক্ষণগুলো অন্তর্ভুক্ত করে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, অজ্ঞান হওয়া এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা। প্রথমিক চিকিৎসা হিসেবে বিদ্যুৎ সরিয়ে ফেলা, সিপিআর (যদি প্রয়োজন হয়), এবং দ্রুত হাসপাতাল যোগাযোগ জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *