Best Homeo Doctor

লো প্রেসার কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

লো প্রেসার (Low Blood Pressure) বা হাইপোটেনশন হলো রক্তচাপের নিম্নস্তর, যা শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ব্যাহত করতে পারে। এটি রক্তনালীর মধ্যে রক্তের চাপ খুব কম হলে ঘটে এবং শরীরের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান যেমন মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, এবং কিডনি যথাযথভাবে রক্ত পায় না, ফলে সেগুলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। সাধারণভাবে, রক্তচাপ ৯০/৬০ মিমি এইচজি বা তার কম হলে তাকে লো প্রেসার বলা হয়।

লো প্রেসারের কারণ:

লো প্রেসার হতে পারে বিভিন্ন কারণে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. ডিহাইড্রেশন (Dehydration):
    • যখন শরীর পর্যাপ্ত পানি পান করে না, তখন রক্তে পানির পরিমাণ কমে যায় এবং রক্তচাপ কমে যেতে পারে। এতে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে রক্ত সরবরাহ কমে যায়।
  2. হার্টের সমস্যা (Heart Problems):
    • কিছু হৃদরোগ যেমন, হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack), হার্ট ফেইলিওর (Heart Failure) বা আলসারেশন (Valve Problems) লো প্রেসারের কারণ হতে পারে। হৃদপিণ্ড যদি ঠিকমতো রক্ত পাম্প করতে না পারে, তবে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
  3. হরমোনের অস্বাভাবিকতা (Hormonal Imbalance):
    • থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বা এড্রেনাল গ্ল্যান্ড এর সমস্যা যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism) বা এডিসন রোগ (Addison’s Disease) লো প্রেসারের কারণ হতে পারে।
  4. তীব্র রক্তক্ষরণ (Severe Blood Loss):
    • গুরুতর আঘাত, আভ্যন্তরীণ রক্তপাত, অথবা বড় ধরনের অস্ত্রোপচার রক্তের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে।
  5. অত্যধিক ইনফেকশন (Severe Infection):
    • সেপটিসেমিয়া (Septicemia) বা গুরুতর সংক্রমণ যা রক্তে ছড়িয়ে পড়েছে, তা শরীরের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্ষমতা ব্যাহত করতে পারে এবং রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে।
  6. ড্রাগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Medication Side Effects):
    • কিছু ঔষধ যেমন ডাইইউরেটিকস (Diuretics), অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস (Antidepressants), বিটাব্লকারস (Beta-blockers) বা আলফাব্লকারস (Alpha-blockers) রক্তচাপ কমাতে পারে।
  7. খাদ্যাভ্যাস বা অপুষ্টি (Malnutrition):
    • যদি শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন বি১২, ফোলিক অ্যাসিড বা প্রোটিনের অভাব থাকে, তবে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
  8. তীব্র শারীরিক কার্যকলাপ বা ঘুমের ঘাটতি (Prolonged Bed Rest or Physical Inactivity):
    • দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকা, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা বা অসুস্থতার কারণে লো প্রেসার হতে পারে।
  9. গর্ভাবস্থা (Pregnancy):
    • গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, যেটি সাধারণত অস্থায়ী এবং পরবর্তীতে স্বাভাবিক হয়ে যায়।

লো প্রেসারের লক্ষণ:

লো প্রেসারের লক্ষণ সাধারণত খুব তীব্র হতে না পারে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি জীবনযাত্রার জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. চক্কর বা মাথা ঘোরা (Dizziness or Lightheadedness):
    • লো প্রেসার থাকার সময় বিশেষ করে দাঁড়িয়ে উঠলে বা হঠাৎ বসা থেকে ওঠার সময় মাথা ঘোরা বা অস্থিরতা অনুভূত হতে পারে।
  2. শ্বাসকষ্ট বা অস্বস্তি (Shortness of Breath or Unusual Fatigue):
    • রক্তচাপ কম হলে শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেন পৌঁছানো কঠিন হয়, ফলে শ্বাসকষ্ট বা অতিরিক্ত ক্লান্তি হতে পারে।
  3. মাথাব্যথা (Headache):
    • রক্তচাপ কম হলে মাথা ব্যথার অনুভূতি হতে পারে, বিশেষ করে চাপ কমে গেলে।
  4. নাক বন্ধ হওয়া বা ঘাম কম হওয়া (Cold, Clammy Skin):
    • রক্তচাপ কমলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে, যার ফলে হাত-পা ঠাণ্ডা বা আর্দ্র হতে পারে।
  5. অলসতা বা ক্লান্তি (Fatigue or Weakness):
    • শরীরে রক্ত সঞ্চালন কম হলে, শরীরের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
  6. নিদ্রাহীনতা বা অস্থিরতা (Fainting or Syncope):
    • রক্তচাপ খুব কম হলে, বিশেষ করে দাঁড়িয়ে থাকার সময় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

লো প্রেসারের প্রতিকার:

লো প্রেসার যদি কোনও বড় সমস্যা সৃষ্টি না করে তবে এটি সাধারণত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করে না। তবে, যদি এটি সাধারণ দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে কিছু সহজ প্রতিকার রয়েছে:

  1. প্রচুর পানি পান করা (Drink Plenty of Fluids):
    • ডিহাইড্রেশন রক্তচাপ কমানোর একটি প্রধান কারণ। অতএব, পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  2. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া (Healthy Eating Habits):
    • সুষম খাবার খাওয়া, যাতে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান থাকে, যেমন ভিটামিন বি১২ এবং ফোলিক অ্যাসিড। খাবারে বেশি পরিমাণে লবণ নেওয়া, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী।
  3. হালকা নিয়মিত ব্যায়াম (Light Exercise):
    • নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত, যা রক্তসঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করবে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে। তবে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা একসাথে দীর্ঘ সময় বসে থাকা এড়িয়ে চলা উচিত।
  4. ধীরে উঠুন বা বসুন (Rise Slowly):
    • হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে না ওঠা বা বসে থাকলে রক্তচাপ কমতে পারে। তাই ধীরে ধীরে উঠুন বা বসুন।
  5. শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ (Control Body Temperature):
    • শরীর শীতল হলে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
  6. স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা (Healthy Lifestyle):
    • ধূমপান বা অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করা, কারণ এগুলো রক্তচাপ কমাতে সহায়ক।
  7. প্রয়োজনীয় ওষুধ (Medication):
    • কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তারের পরামর্শে কিছু ঔষধ যেমন এলডোস্টেরন (Aldosterone) বা ফ্লুদোকরটিসন (Fludrocortisone) ব্যবহৃত হতে পারে, যা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন:

  • যদি লো প্রেসার ঘনঘন সমস্যা সৃষ্টি করে, বিশেষ করে মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
  • যদি শরীরের কোনো অংশে অসামঞ্জস্য বা অস্বস্তি অনুভূত হয়, যেমন শ্বাসকষ্ট বা অতিরিক্ত ক্লান্তি।
  • যদি আপনি নতুন ওষুধ গ্রহণ করছেন এবং লো প্রেসারের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
  • যদি আপনি দীর্ঘস্থায়ী ডিহাইড্রেশন বা গুরুতর রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার সম্মুখীন হন।

লো প্রেসার সাধারণত একটি ছোট সমস্যা হলেও এটি যদি নিয়মিত হয় বা গুরুতর লক্ষণ সৃষ্টি করে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *