Best Homeo Doctor

লিভার বড় হওয়া কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

লিভার বড় হওয়া (Hepatomegaly) হল লিভারের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়ে যাওয়া। এটি কোনো নির্দিষ্ট রোগ নয়, বরং এটি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার একটি উপসর্গ হিসেবে দেখা যায়। লিভার বড় হওয়ার বিভিন্ন কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার রয়েছে, যেগুলি নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

কারণ:

লিভার বড় হওয়ার বিভিন্ন কারণ হতে পারে, যেমন:

  1. ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (Fatty Liver Disease):
    • এটি তখন ঘটে যখন লিভারের কোষে অতিরিক্ত চর্বি জমে। সাধারণত অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ দুটি ধরনের হয়ে থাকে।
  2. হেপাটাইটিস (Hepatitis):
    • হেপাটাইটিস হল লিভারের প্রদাহ, যা ভাইরাস, অ্যালকোহল বা অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান দ্বারা হতে পারে। এটি লিভার বড় হওয়ার একটি সাধারণ কারণ।
  3. লিভার সিরোসিস (Cirrhosis):
    • এটি এক ধরনের লিভারের স্থায়ী ক্ষতি, যেখানে লিভার সুতীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় এবং তার ফলে লিভার বড় হতে পারে। সিরোসিসের কারণ হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী অ্যালকোহল সেবন বা হেপাটাইটিস ইনফেকশন।
  4. হেপাটিক ক্যান্সার (Liver Cancer):
    • লিভারে ক্যান্সার বা ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে লিভার বড় হয়ে যেতে পারে।
  5. হেমোক্রোমাটোসিস (Hemochromatosis):
    • এটি একটি জেনেটিক রোগ যেখানে শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমে যায়, এবং সেই কারণে লিভার বড় হয়ে যেতে পারে।
  6. লিভার এনজাইমের সমস্যা:
    • কিছু এনজাইমের ঘাটতি বা সমস্যা যেমন গ্যাল্যাকটোসেমিয়া, গ্লাইকোজেন সঞ্চয় রোগের কারণে লিভার বড় হতে পারে।
  7. হার্ট ফেইলিওর (Heart Failure):
    • যদি হৃৎপিণ্ডে সমস্যা থাকে, যেমন হার্ট ফেইলিওর, তাও লিভারের আকার বড় হওয়ার কারণ হতে পারে। কারণ এতে লিভারের রক্ত সরবরাহে সমস্যা হয় এবং এটি ফুলে যায়।
  8. পৃথিবীজুড়ে প্রাপ্ত বিভিন্ন সংক্রমণ:
    • টিউবারকিউলোসিস (TB) বা ম্যালেরিয়া প্রভৃতি সংক্রমণও লিভারের আকার বড় হতে পারে।
  9. গ্যালস্টোন (Gallstones):
    • পিত্তথলিতে পাথর জমে গেলে বা পিত্তনালীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে লিভারের আকার বড় হয়ে যেতে পারে।
  10. এডিসন ডিজিজ (Addison’s Disease):
    • এটি একটি হরমোনজনিত সমস্যা, যেখানে অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের সমস্যা হয় এবং তার ফলে লিভার বড় হতে পারে।

লক্ষণ:

লিভার বড় হওয়ার কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে:

  1. পেটের ওপর ডান পাশে ব্যথা বা অস্বস্তি:
    • লিভার বড় হলে পেটের ডান পাশে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে, বিশেষত খাবার খাওয়ার পর।
  2. অরুচি:
    • খাবারের প্রতি অরুচি অনুভূত হতে পারে, এবং খাবার খেতে ইচ্ছা কমে যেতে পারে।
  3. পেট ফুলে যাওয়া বা ফাঁপা অনুভূতি:
    • লিভার বড় হওয়ার কারণে পেট ফুলে যেতে পারে বা ফাঁপা অনুভূতি হতে পারে।
  4. বমি বা বমির অনুভূতি:
    • কিছু লোক লিভার বড় হওয়ার কারণে বমি বা বমির অনুভূতি অনুভব করতে পারে।
  5. শরীরের ত্বকে হলুদ আভা (জন্ডিস):
    • যদি লিভার সমস্যা গুরুতর হয়ে থাকে, তবে ত্বকে হলুদ হয়ে যেতে পারে, এটি জন্ডিস নামে পরিচিত।
  6. দুর্বলতা বা ক্লান্তি:
    • লিভারের সমস্যা শরীরের শক্তি কমিয়ে দিতে পারে, ফলে দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
  7. ওজন কমে যাওয়া:
    • লিভারের সমস্যা, বিশেষত সিরোসিস বা ক্যান্সারের কারণে, শরীরের ওজন কমে যেতে পারে।
  8. বাড়তি রক্তক্ষরণ:
    • লিভারের কার্যকারিতা কমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে সমস্যা হতে পারে, ফলে সহজেই রক্তপাত হতে পারে।

প্রতিকার:

লিভারের আকার বড় হওয়ার চিকিৎসা মূলত তার কারণের ওপর নির্ভর করে। তবে কিছু সাধারণ প্রতিকার:

  1. হেপাটাইটিস বা সিরোসিসের চিকিৎসা:
    • যদি লিভারের প্রদাহ (হেপাটাইটিস) বা সিরোসিসের সমস্যা হয়, তবে চিকিৎসক উপযুক্ত অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে পারেন।
    • অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ: যেমন হেপাটাইটিস বি বা সি এর জন্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
    • লিভার ট্রান্সপ্লান্ট: সিরোসিস বা গুরুতর লিভার সমস্যা হলে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট (লিভার প্রতিস্থাপন) প্রয়োজন হতে পারে।
  2. ফ্যাটি লিভার ডিজিজ:
    • ফ্যাটি লিভারের জন্য সাধারণত জীবনযাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার, স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  3. মদ্যপান কমানো:
    • যদি অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বা সিরোসিস থাকে, তবে অ্যালকোহল সেবন বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। এতে লিভারের ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।
  4. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
    • স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া, যার মধ্যে প্রচুর শাকসবজি, ফল, আঁশযুক্ত খাবার এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন অলিভ অয়েল) রয়েছে, লিভারের সুরক্ষায় সহায়ক।
  5. ওজন কমানো (Fatty liver-এর ক্ষেত্রে):
    • যদি অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা থাকে, তবে ধীরে ধীরে ওজন কমানোর প্রচেষ্টা করা উচিত।
  6. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
    • যদি ডায়াবেটিস থাকে, তবে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন, কারণ এটি ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  7. এন্টিপ্রোটোজোয়াল বা অ্যান্টিফাংগাল থেরাপি:
    • যদি লিভারের বড় হওয়ার কারণ পরজীবী সংক্রমণ বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়, তবে চিকিৎসক উপযুক্ত অ্যান্টি-প্রোটোজোয়াল বা অ্যান্টি-ফাংগাল চিকিৎসা দিতে পারেন।
  8. চিকিৎসকের পরামর্শ:
    • লিভার বড় হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি সঠিক পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা প্রস্তাব করতে পারবেন।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • যদি পেটের ডান দিকে তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব হয়।
  • যদি ত্বকে হলুদ আভা বা জন্ডিস দেখা দেয়।
  • যদি শরীর দুর্বল হয়ে যায় বা ক্লান্তি অনুভূত হয়।
  • যদি বমি বা খাওয়ার প্রতি অরুচি অনুভূত হয়।
  • যদি লিভার বড় হওয়া এবং তার সাথে অন্যান্য লক্ষণ (যেমন জ্বর, রক্তপাত) থাকে।

লিভার বড় হওয়া কখনও কখনও গুরুতর সমস্যা হতে পারে, তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন দ্বারা এটি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *