রিকেটস (Rickets) হলো একটি রোগ যা মূলত ভিটামিন D, ক্যালসিয়াম, এবং ফসফেটের অভাবে শিশুদের হাড়ের বিকৃতি বা দুর্বলতা সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায়, বিশেষ করে যারা সঠিক পুষ্টি পায় না বা সূর্যের আলো থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন D পায় না।
রিকেটস এর কারণ:
- ভিটামিন D এর অভাব:
- ভিটামিন D হাড়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট শোষণকে সাহায্য করে। ভিটামিন D এর অভাব হলে হাড় সঠিকভাবে শক্ত হতে পারে না এবং শিশুদের হাড় দুর্বল হয়ে যায়।
- ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের অভাব:
- যদি শিশুর খাদ্যে ক্যালসিয়াম বা ফসফেটের অভাব থাকে, তবে হাড়ের গঠন সঠিকভাবে হয় না, ফলে রিকেটস সৃষ্টি হয়।
- সূর্যের আলোতে পর্যাপ্ত সময় না কাটানো:
- ভিটামিন D প্রধানত সূর্যের আলো থেকে শরীরে তৈরি হয়। যদি শিশু বা তার মা সূর্যের আলোতে পর্যাপ্ত সময় কাটান না, তবে ভিটামিন D এর অভাব হতে পারে।
- অতিরিক্ত ফসফেটের অভাব:
- কোনো বিশেষ ধরনের খাদ্য বা অসুস্থতার কারণে শরীরে ফসফেটের অভাব হতে পারে, যা রিকেটসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- জন্মগত কারণে বা অন্য কোন চিকিৎসাগত সমস্যা:
- কিছু ক্ষেত্রে, শিশুর জন্মগত সমস্যার কারণে বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন কিডনি রোগ বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, রিকেটস হতে পারে।
- অধিক ক্যালসিয়াম পরিপূরক বা ড্রাগের ব্যবহারের কারণে:
- কিছু ক্ষেত্রে, কিছু শিশু অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম পরিপূরক ব্যবহার করলে শরীরে ভারসাম্যহীনতা হতে পারে, যা রিকেটসের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
রিকেটস এর লক্ষণ:
- হাড়ের বিকৃতি:
- শিশুদের হাড়ে বিকৃতি দেখা দেয়, বিশেষ করে পা এবং হাতের হাড় দুর্বল হয়ে যায়। হাঁটার সময় পায়ের হাঁটু ভিতরের দিকে বেঁকে যেতে পারে, অথবা পায়ের পাতার আঙ্গুলের দিকে আচ্ছন্ন হতে পারে।
- হাড়ে ব্যথা:
- শিশুর হাড়ে বা জোড়ায় ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে, বিশেষ করে পা বা মেরুদণ্ডে।
- খাড়া মাথা বা পাঁজরের আকারের পরিবর্তন:
- পাঁজর বা শরীরের কিছু অংশ যেমন মাথার আকৃতিতে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে, যেমন মাথা বড় হয়ে যাওয়া (হাইড্রোকেফালাস), বা পাঁজর ভেতরে চ্যাপ্টা হয়ে যেতে পারে।
- শরীরের দুর্বলতা:
- শিশুর শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, হাঁটতে বা চলাফেরা করতে অসুবিধা হতে পারে, বা সাধারণ দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- পেশির দুর্বলতা:
- শিশুর পেশির দুর্বলতা বা মাংসপেশির টান থাকতে পারে, যেটা তাকে চলাফেরা বা খেলাধুলায় অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
- পেটের বা হাড়ের অসুখ:
- রিকেটসের কারণে শিশুর পেটের সমস্যা, যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতে পারে।
- পৃথক পৃথক পদ্ধতিতে বৃদ্ধি এবং শারীরিক উন্নতি কমে যাওয়া:
- শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও উন্নতি সঠিকভাবে না হওয়া, উচ্চতা বা ওজন বৃদ্ধির হ্রাস।
রিকেটস এর প্রতিকার:
- ভিটামিন D এর পরিপূরক:
- শিশুদের ভিটামিন D এর পরিপূরক দেওয়া উচিত। ডাক্তার সাধারণত ভিটামিন D এর পরিপূরক দেয়, বিশেষত যখন সূর্যের আলো পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না বা শিশুদের খাবারে ভিটামিন D কম থাকে।
- ভিটামিন D সমৃদ্ধ খাবার:
- ডিম, মাছ, দুধ, দই, এবং ভিটামিন D সমৃদ্ধ খাবার (যেমন, সামুদ্রিক মাছ, সয়া মিল্ক, স্যুপ) শিশুর খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- সূর্যের আলোতে সময় কাটানো:
- শিশুকে প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলোতে রাখা উচিত (সকাল বা বিকেলের সময়) যাতে শরীরে ভিটামিন D উৎপন্ন হয়।
- ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য:
- ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন দুধ, দই, পনির, শাকসবজি, সয়া এবং বাদাম শিশুর খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
- বিশেষ চিকিৎসা এবং পরামর্শ:
- যদি শিশুর রিকেটস গুরুতর হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন D এর পরিপূরক দেওয়া হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, চিকিৎসক শরীরের পুষ্টির অবস্থা এবং ভিটামিন D এর পরিমাণ পরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারেন।
- খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন:
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, পুষ্টির অভাব পূরণের জন্য খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন করা এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা:
রিকেটস একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ, যদি শিশুকে সঠিক পুষ্টি, ভিটামিন D এবং ক্যালসিয়াম দেওয়া হয় এবং সূর্যের আলোতে পর্যাপ্ত সময় কাটানো হয়। তবে যদি শিশুর রিকেটস উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।