Best Homeo Doctor

রক্তশূণ্যতা বা রক্তহীনতা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

রক্তশূণ্যতা বা রক্তহীনতা (Anemia) হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে রক্তে হিমোগ্লোবিন বা রক্তের লাল কণিকার সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। হিমোগ্লোবিন হলো একটি প্রোটিন যা রক্তের লাল কণিকাতে উপস্থিত থাকে এবং তা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পরিবহণে সাহায্য করে। যখন হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়, তখন শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, যার ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্তশূণ্যতা সাধারণত স্বল্প হিমোগ্লোবিনের কারণে হয়, তবে এর আরও কিছু কারণ থাকতে পারে।

কারণ:

রক্তশূণ্যতার অনেক ধরনের কারণ রয়েছে, যার মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. লোহিত রক্তকণিকা (Red Blood Cells) তৈরি কম হওয়া:
    • লোহিত রক্তকণিকার অভাব: শরীরের অস্থি মজ্জা (bone marrow) থেকে যথেষ্ট রক্তকণিকা তৈরি না হওয়া।
    • ভিটামিন বা মিনারেল অভাব: যেমন ভিটামিন B12, ফোলিক অ্যাসিড বা আয়রন (লোহা) এর অভাব। এই উপাদানগুলো রক্তের তৈরি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়।
  2. লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হওয়া: কিছু রোগে বা শারীরিক অবস্থায় রক্তকণিকা দ্রুত ধ্বংস হতে পারে, যেমন:
    • থ্যালাসেমিয়া (Thalassemia): এটি একটি জেনেটিক অসুখ যেখানে রক্তকণিকা তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
    • আলসার (Ulcer), লিভার ডিজিজ বা কিডনি সমস্যা এর ফলে রক্তকণিকা দ্রুত ধ্বংস হতে পারে।
  3. রক্তক্ষরণ:
    • দীর্ঘকাল ধরে রক্তপাত বা প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে রক্তশূণ্যতা হতে পারে, যেমন পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত, অ্যাকিউট ইনজুরি বা আভ্যন্তরীণ রক্তপাত।
  4. অটোইমিউন ডিজিজ: কিছু অটোইমিউন রোগ যেমন লুপাস বা রক্তসংক্রান্ত রোগ রক্তকণিকা ধ্বংস করতে পারে।
  5. হরমোনের তারতম্য: বিশেষ করে এস্ট্রোজেন বা প্রজেস্টেরন হরমোনের ঘাটতি যেমন গর্ভাবস্থায় হতে পারে।
  6. গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় নারীদের জন্য রক্তশূণ্যতা এক সাধারণ সমস্যা। এই অবস্থায় ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অধিক রক্তের প্রয়োজন হয়, যা মায়ের শরীরে রক্তশূণ্যতা সৃষ্টি করতে পারে।
  7. সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাব: সঠিক পুষ্টির অভাব, যেমন সুষম খাবারের অভাব বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস রক্তশূণ্যতা সৃষ্টি করতে পারে।

লক্ষণ:

রক্তশূণ্যতার লক্ষণগুলি সাধারণত হালকা থেকে তীব্র হতে পারে এবং এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. থাক না থাকার মতো ক্লান্তি: শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছালে অবসাদ, দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
  2. শরীরের ত্বক চোখের সাদা অংশ ফ্যাকাশে হওয়া: রক্তশূণ্যতা হলে ত্বক বা চোখের সাদা অংশ ফ্যাকাশে বা হলুদ হতে পারে।
  3. শ্বাসকষ্ট হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি: হিমোগ্লোবিনের অভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পৌঁছাতে না পারলে শ্বাসকষ্ট ও হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পেতে পারে।
  4. মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরা: অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কে যথেষ্ট রক্ত পৌঁছাতে না পারলে মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরা হতে পারে।
  5. হাতপায়ের শীতল অনুভূতি: রক্তের অভাবে শরীরের পরিপূরক অংশগুলিতে রক্ত না পৌঁছালে হাত-পায়ের শীতল বা টনটন অনুভূতি হতে পারে।
  6. কনসেনট্রেশন বা মনোযোগের অভাব: হিমোগ্লোবিনের অভাবে মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম পৌঁছালে মনোযোগের অভাব হতে পারে এবং কিছু সময় ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  7. নড়াচড়ায় অসুবিধা: রক্তশূণ্যতার কারণে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয়, যার ফলে চলাফেরায় অসুবিধা হতে পারে।
  8. হার্টবিটের অসঙ্গতি: স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে অক্সিজেনের অভাব অনুভূত হলে হৃদস্পন্দনে সমস্যা হতে পারে, যেমন দ্রুত হৃদস্পন্দন বা অ্যারিথমিয়া (irregular heartbeat)।

প্রতিকার:

রক্তশূণ্যতার চিকিৎসা মূলত এর কারণ অনুসারে নির্ধারিত হয়। কিছু সাধারণ প্রতিকার হলো:

  1. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন:
    • লোহা সমৃদ্ধ খাবার: রক্তশূণ্যতা (আয়রন ডেফিসিয়েন্সি) হলে লোহা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন লাল মাংস, মুরগি, মাশরুম, সবুজ শাকসবজি (যেমন পালং শাক), ডাল, সয়াবিন, বীন, আলু, এবং শুকনো ফল (যেমন খেজুর)।
    • ভিটামিন B12 এবং ফোলিক অ্যাসিড: ভিটামিন B12 ও ফোলিক অ্যাসিডের অভাব রক্তশূণ্যতার কারণ হতে পারে। মাংস, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার এবং শাকসবজি থেকে এগুলো পাওয়া যেতে পারে।
  2. লোহা সাপ্লিমেন্ট:
    লোহা (Iron) সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা জরুরি হতে পারে যদি খাবার থেকে পর্যাপ্ত লোহা না পাওয়া যায়। তবে এটি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে।
  3. ভিটামিন মিনারেল সাপ্লিমেন্ট:
    • ভিটামিন B12 এবং ফোলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট প্রয়োগ করা যেতে পারে। এগুলি লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে সহায়ক।
  4. গর্ভাবস্থায় বিশেষ যত্ন: গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষ পুষ্টি উপাদান এবং আয়রন ও ফোলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়, যাতে তারা রক্তশূণ্যতা থেকে রক্ষা পায়।
  5. রক্তদান রক্তপ্রদান: যদি রক্তশূণ্যতা গুরুতর হয় এবং রক্তের পরিমাণ খুব কম হয়ে যায়, তবে রক্ত প্রদান করতে হতে পারে।
  6. অপারেশন: যদি আভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ বা কোনো শারীরিক আঘাতের কারণে রক্তশূণ্যতা হয়ে থাকে, তবে অস্ত্রোপচার বা চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
  7. অন্যান্য চিকিৎসা: যদি রক্তশূণ্যতা কোনো নির্দিষ্ট রোগের কারণে হয়ে থাকে (যেমন থ্যালাসেমিয়া, অটোইমিউন রোগ), তবে সেসব রোগের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

রক্তশূণ্যতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা লক্ষণগুলি তীব্র হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ডাক্তার সাধারণত রক্ত পরীক্ষা করে রক্তশূণ্যতার কারণ নির্ধারণ করেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারণ করেন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *