Best Homeo Doctor

রক্তপ্রসাব কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

রক্তপ্রসাব (Hematuria) কী?

রক্তপ্রসাব (Hematuria) হল এমন একটি অবস্থা, যেখানে মুত্রের মধ্যে রক্ত উপস্থিত থাকে। এটি দুই ধরনের হতে পারে:

  1. মাইক্রোস্কোপিক রক্তপ্রসাব: যেখানে মুত্রের মধ্যে রক্ত আছে, কিন্তু সেটি চোখে দেখা যায় না। এটি শুধুমাত্র মুত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে।
  2. ম্যাক্রোস্কোপিক রক্তপ্রসাব: যেখানে মুত্রের মধ্যে রক্ত এত পরিমাণে থাকে যে, তা চোখে স্পষ্টভাবে দেখা যায় এবং মুত্র সাধারণত লাল বা গোলাপী রঙের হতে পারে।

কারণ:

রক্তপ্রসাবের কিছু সাধারণ কারণ হল:

  1. মুত্রনালী বা মুত্রথলীর সংক্রমণ:
    • ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI): মুত্রনালী বা মুত্রথলীতে সংক্রমণ হলে রক্তপ্রসাব হতে পারে।
  2. কিডনি সমস্যা:
    • কিডনি পাথর: কিডনিতে পাথর বা শিলার কারণে মুত্রনালীতে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে রক্তপ্রসাব ঘটে।
    • কিডনি ইনফেকশন (Pyelonephritis): কিডনির সংক্রমণও রক্তপ্রসাবের কারণ হতে পারে।
  3. প্রস্টেট সমস্যা (পুরুষদের জন্য):
    • বৃদ্ধ প্রস্টেট: বৃদ্ধ প্রস্টেট বা প্রস্টেট ক্যান্সারের কারণে মুত্রনালীতে বাধা সৃষ্টি হয় এবং রক্তপ্রসাব হতে পারে।
  4. গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস (Glomerulonephritis): কিডনির গ্লোমেরুলার ফিল্টার সিস্টেমের প্রদাহ বা ক্ষতির কারণে রক্তপ্রসাব হতে পারে।
  5. ট্রমা বা আঘাত: মুত্রথলী বা কিডনিতে আঘাত পাওয়ার কারণে রক্তপ্রসাব হতে পারে।
  6. দীর্ঘমেয়াদী ফার্মাকোলজিক্যাল প্রভাব: কিছু ওষুধ, যেমন ব্লাড থিনার (আন্তরিকতা কমানোর ঔষধ), মুত্রপ্রবাহে রক্ত প্রবাহিত করতে পারে।
  7. ক্যান্সার: মুত্রথলী, কিডনি বা প্রস্টেট ক্যান্সারের কারণে রক্তপ্রসাব হতে পারে।
  8. কিডনি রোগ: যেমন কিডনির সিস্ট বা অন্য কোনো সমস্যা।
  9. ভাস্কুলাইটিস (Vasculitis): এটি রক্তনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে রক্তপ্রসাব হতে পারে।

লক্ষণ:

রক্তপ্রসাবের লক্ষণগুলো হল:

  1. মুত্রের রঙ লাল বা গোলাপী হওয়া: রক্তপ্রসাবের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো মুত্রের রঙ পরিবর্তন হয়ে লাল বা গোলাপী হয়ে যাওয়া।
  2. মুত্রের মধ্যে রক্তের উপস্থিতি: চোখে দেখা যায় এমন রক্ত বা মুত্র পরীক্ষায় মাইক্রোস্কোপে রক্ত পাওয়া যেতে পারে।
  3. পেট বা পিঠে ব্যথা: বিশেষত কিডনির বা মুত্রথলীর সমস্যায় ব্যথা হতে পারে।
  4. মুত্র ত্যাগের সময় অস্বস্তি বা ব্যথা: রক্তপ্রসাবের সঙ্গে মুত্র ত্যাগের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হতে পারে।
  5. দীর্ঘসময় ধরে মুত্রবাহিনীর সমস্যার অনুভূতি: যেমন, প্রস্টেট বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন থেকে রক্তপ্রসাব হতে পারে, সাথে সঙ্গতিপূর্ণ লক্ষণগুলো থাকতে পারে।

প্রতিকার:

রক্তপ্রসাবের চিকিৎসা এর কারণের উপর নির্ভর করে এবং এটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হতে হবে। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি:

  1. অ্যান্টিবায়োটিকস: যদি রক্তপ্রসাব ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) এর কারণে হয়ে থাকে, তবে অ্যান্টিবায়োটিকস দেয়া হতে পারে।
  2. কিডনি পাথর: যদি কিডনির পাথরের কারণে রক্তপ্রসাব হয়, তবে পাথরটি অপসারণের জন্য সার্জারি বা অন্যান্য চিকিৎসা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
  3. প্রস্টেট সমস্যার চিকিৎসা: প্রস্টেট সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ বা প্রস্টেট সার্জারি করা হতে পারে।
  4. কিডনি ইনফেকশন বা গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস: এই ধরনের কিডনি সমস্যা হলে, কিডনি সুরক্ষিত রাখতে বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, এবং তা বিশেষজ্ঞ কিডনি চিকিৎসকের মাধ্যমে করা উচিত।
  5. ক্যান্সার: ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, চিকিৎসক কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি বা সার্জারি সিফারিশ করতে পারেন।
  6. বেদনা উপশম: যদি রক্তপ্রসাব ব্যথার কারণে হয়, তবে ব্যথা উপশমের জন্য ওষুধ যেমন আইবুপ্রোফেন বা প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে।
  7. সাধারণ সতর্কতা:
    • প্রচুর পানি পান করা।
    • মুত্রের প্রবাহ ঠিক রাখতে যত্ন নেওয়া।
    • দীর্ঘদিন ধরে মুত্র আটকে না রাখা।

রক্তপ্রসাবের কারণ যদি গুরুতর কিছু হয়, যেমন কিডনি সমস্যা বা ক্যান্সার, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *