রক্তদুষিত বা হেমাটুরিয়া হলো একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে মূত্রে রক্ত মিশে যায়। এটি সাধারণত মূত্রনালী, মূত্রথলি বা কিডনির কোনো সমস্যা বা ক্ষতির কারণে হতে পারে। মূত্রে রক্তের উপস্থিতি সাধারণত শরীরের একটি অস্বাভাবিক সংকেত, যা কিছু গুরুতর সমস্যা বা সংক্রমণের দিকে ইঙ্গিত করতে পারে।
কারণ:
রক্তদুষিত হওয়ার বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণ রয়েছে, যার মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হলো:
- কিডনি বা মূত্রথলির সংক্রমণ (UTI): মূত্রনালীর সংক্রমণ, কিডনি বা মূত্রথলির সংক্রমণ হলে মূত্রে রক্ত দেখা যেতে পারে।
- কিডনি স্টোন (Kidney Stones): কিডনিতে পাথর বা স্টোন জমে গেলে তা মূত্রনালীতে বা কিডনির মধ্যে আঘাত করতে পারে, যার ফলে রক্ত মিশে যায়।
- গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস: এটি কিডনির একটি প্রদাহজনিত রোগ, যা মূত্রে রক্তের উপস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
- কিডনি টিউমার বা মূত্রথলির টিউমার: কিডনিতে বা মূত্রথলিতে টিউমার থাকলে সেটি রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে।
- মূত্রথলির বা কিডনির আঘাত: দুর্ঘটনায় বা কোনো প্রকার আঘাতের কারণে কিডনি বা মূত্রথলিতে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
- প্রোস্টেট গ্রন্থির সমস্যা: পুরুষদের ক্ষেত্রে, প্রোস্টেটের সমস্যা বা প্রোস্টেট বৃদ্ধি হলে মূত্রে রক্ত দেখা দিতে পারে।
- ব্যায়াম বা শারীরিক চাপ: অতিরিক্ত ব্যায়াম বা শারীরিক চাপের কারণে মূত্রে সাময়িক রক্ত প্রবাহিত হতে পারে।
- এন্টি–কোঅগুলান্ট ড্রাগস: কিছু ওষুধ, বিশেষত রক্ত পাতলা করার ওষুধ, মূত্রে রক্তের উপস্থিতি বাড়িয়ে দিতে পারে।
লক্ষণ:
রক্তদুষিত হওয়ার বিভিন্ন লক্ষণ থাকতে পারে, যেমন:
- মূত্রের রঙ পরিবর্তন: মূত্রের রঙ হালকা গোলাপি, লাল বা বাদামী হয়ে যেতে পারে, যা রক্তের উপস্থিতির ইঙ্গিত।
- মূত্রের মাঝে রক্তের শিরা বা দানা: মূত্রে কণিকা বা শিরা দেখা দিতে পারে, যা রক্তের উপস্থিতি জানায়।
- পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি: কিডনি বা মূত্রথলির সমস্যার কারণে পেটে বা কোমরে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- মূত্রত্যাগে কষ্ট বা জ্বালা: মূত্রত্যাগের সময় জ্বালা বা কষ্ট অনুভূত হতে পারে, বিশেষত মূত্রনালীর সংক্রমণ থাকলে।
- শরীরে অবসাদ বা দুর্বলতা: দীর্ঘসময় ধরে রক্তক্ষরণ হলে শরীরে অবসাদ, দুর্বলতা বা চাহিদার অভাব দেখা দিতে পারে।
- বমি বা মাথাব্যথা: গুরুতর কিডনি সমস্যা বা টিউমার থাকলে বমি বা মাথাব্যথা হতে পারে।
প্রতিকার:
রক্তদুষিত হওয়া সাধারণত underlying সমস্যার কারণে হয়ে থাকে, তাই এর প্রতিকার মূল সমস্যার চিকিৎসার উপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ প্রতিকার হলো:
- চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া: মূত্রে রক্ত দেখলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক রক্তদুষিত হওয়ার কারণ জানার জন্য পরীক্ষা করতে পারেন, যেমন: রক্ত পরীক্ষা, ইউরিন পরীক্ষা, আলট্রাসাউন্ড বা সিটি স্ক্যান।
- অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধ: যদি সংক্রমণ বা অন্য কোনো জীবাণু সমস্যার কারণে রক্তদুষিত হয়, তবে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য উপযুক্ত ওষুধ দিতে পারেন।
- কিডনি স্টোনের চিকিৎসা: যদি কিডনিতে পাথর থাকে, তবে সেটি অপসারণের জন্য সার্জারি বা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা হতে পারে।
- অতিরিক্ত জল খাওয়া: পানির পরিমাণ বাড়ানো শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ কমাতে পারে।
- বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত ঘুম: যদি মূত্রে রক্ত আসার কারণ শারীরিক চাপ বা অতিরিক্ত ব্যায়াম হয়ে থাকে, তবে বিশ্রাম নেওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে পারে।
- ডায়েট পরিবর্তন: কিছু খাদ্য যেমন সঠিক পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং মিনারেল গ্রহণ কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক হতে পারে।
- প্রোস্টেট সমস্যার চিকিৎসা: পুরুষদের প্রোস্টেট সমস্যার জন্য চিকিৎসক নির্দিষ্ট ঔষধ বা সার্জারির পরামর্শ দিতে পারেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ:
যদি মূত্রে রক্ত দেখা যায় এবং তা যদি অনেক দিন ধরে চলে অথবা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয় (যেমন, ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বা দুর্বলতা), তবে দ্রুত একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেয়া উচিত। এটি কিডনি বা মূত্রথলির কোনো গুরুতর সমস্যা, সংক্রমণ, বা টিউমারের লক্ষণ হতে পারে, এবং যথাযথ চিকিৎসা না করলে এটি আরও জটিল হতে পারে।