ম্যালেরিয়া জ্বর হল একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং প্রাথমিকভাবে মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়া প্লাজমোডিয়াম (Plasmodium) নামক প্যারাসাইটের সংক্রমণের ফলে ঘটে। ম্যালেরিয়া সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়, যেখানে মশা বেশি থাকে।
ম্যালেরিয়া জ্বরের কারণ:
ম্যালেরিয়া জ্বর মূলত প্লাজমোডিয়াম নামক এক ধরনের পরজীবী (parasite) দ্বারা হয়। এই পরজীবী মূলত আনোফিলিস মশা (Anopheles mosquito) দ্বারা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। মশার কামড়ে এই পরজীবী মানুষের শরীরে ঢুকে এবং তার রক্তে প্রবাহিত হয়।
প্লাজমোডিয়াম একাধিক ধরনের হতে পারে, যার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ প্রজাতি হলো:
- Plasmodium falciparum (যা সবচেয়ে গুরুতর ম্যালেরিয়া সৃষ্টি করে)
- Plasmodium vivax
- Plasmodium ovale
- Plasmodium malariae
ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ:
ম্যালেরিয়ার লক্ষণগুলি সাধারণত মশার কামড় খাওয়ার পরে ৭-৩০ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। ম্যালেরিয়ার সাধারণ লক্ষণগুলি হল:
- জ্বর: ম্যালেরিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল জ্বর, যা কখনও উচ্চ তাপমাত্রায় উঠতে পারে।
- ঠাণ্ডা লাগা এবং তীব্র ঘাম: জ্বর ওঠার পর শীতলতা অনুভূত হতে পারে এবং তীব্র ঘাম আসতে পারে।
- মাথাব্যথা: প্রচণ্ড মাথাব্যথা হতে পারে।
- শরীরে ব্যথা ও দুর্বলতা: সাধারণভাবে শরীরের প্রতিটি অংশে ব্যথা ও দুর্বলতা অনুভূত হয়।
- বিশেষ করে তলপেটের ব্যথা: পেটের ভেতরের অংশে ব্যথা এবং পেট ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
- বমি বমি ভাব ও ক্ষুধামন্দা: মাঝে মাঝে বমি হওয়ার উপসর্গও দেখা দেয়।
- হতাশা বা অস্থিরতা: রোগী অস্থির বা হতাশ অনুভব করতে পারে।
- রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া): ম্যালেরিয়া প্লাজমোডিয়াম রক্তকণিকাগুলিকে ধ্বংস করতে পারে, যার ফলে রক্তস্বল্পতা হতে পারে।
ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রতিকার:
ম্যালেরিয়া অত্যন্ত গুরুতর রোগ, তবে এর চিকিৎসা সম্ভব। মূলত তিনটি দিক থেকে ম্যালেরিয়ার প্রতিকার করা যায়:
- ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা:
- অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ: ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যেমন:
- কুইনিন
- আরটিমিসিনিন বেসড কম্বিনেশন থেরাপি (ACT)
- হলোথ্রোইন (Plasmodium vivax এর জন্য)
- চ্লোরোকুইন (তবে প্লাজমোডিয়াম falciparum ক্ষেত্রে এটি কম কার্যকর)
- অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ: ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যেমন:
এই ওষুধগুলি রোগীকে দ্রুত সুস্থ করতে সাহায্য করে এবং রোগের বিস্তার রোধে সহায়তা করে।
- প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
- মশারি ব্যবহার: ম্যালেরিয়া ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হচ্ছে মশা, তাই মশারি ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে রাতে।
- মশা তাড়ানোর অঙ্গরাগ: মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশা তাড়ানোর ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করা।
- মশা নিধন: ঘর-বাড়ি বা আশপাশের পরিবেশে মশা নিধন করতে হবে, যেমন পানি জমে থাকা স্থান পরিষ্কার করা।
- বিশ্রাম এবং সঠিক ডায়েট:
- বিশ্রাম নেওয়া: রোগীকে ভালো বিশ্রাম নিতে হবে, কারণ ম্যালেরিয়া শরীরে দুর্বলতা সৃষ্টি করে।
- পুষ্টিকর খাবার খাওয়া: রোগীকে হালকা, পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে যাতে শরীর শক্তি পায় এবং সুস্থ হতে পারে।
সারাংশ:
ম্যালেরিয়া একটি প্রাণঘাতী রোগ, তবে এটি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। তাই, ম্যালেরিয়ার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।