লালা মূত্রে এলবুমিন (Albumin in Urine) কী?
এলবুমিন হলো একটি প্রোটিন, যা আমাদের শরীরে রক্তে প্রধান প্রোটিন হিসেবে কাজ করে। এটি সাধারণত কিডনির মাধ্যমে ফিল্টার করা হয় এবং সাধারণভাবে মূত্রে এলবুমিন থাকা উচিত নয়। তবে, যখন কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন এলবুমিন রক্ত থেকে মূত্রে চলে যেতে পারে। এই অবস্থাকে আলবুমিনিউরিয়া (Albuminuria) বলা হয়।
এটি প্রাথমিকভাবে কিডনির কর্মক্ষমতা বা গঠনগত সমস্যার কারণে ঘটে, এবং এর মাধ্যমে কিডনি ক্ষতির পূর্বাভাস পাওয়া যেতে পারে। এলবুমিনিউরিয়া সাধারণত কিডনির সমস্যা বা ডায়াবেটিসের কারণে হয়।
কারণ:
লালা মূত্রে এলবুমিন হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ:
- ডায়াবেটিস:
- দীর্ঘস্থায়ী ডায়াবেটিসের কারণে কিডনির ক্ষতি হতে পারে, এবং এতে কিডনি ফিল্টারের গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এলবুমিন মূত্রে চলে যায়।
- হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ):
- উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি করতে পারে এবং এলবুমিনুরিয়া সৃষ্টি করতে পারে, কারণ রক্তচাপের কারণে কিডনির ফিল্টার সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- কিডনি রোগ:
- গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস (Glomerulonephritis): কিডনির ফিল্টার সিস্টেমে প্রদাহ বা সমস্যার কারণে এলবুমিন মূত্রে থাকতে পারে।
- পলিসিস্টিক কিডনি রোগ (Polycystic Kidney Disease): কিডনিতে সিস্ট বা ফোলা গঠনের কারণে এলবুমিন মূত্রে বের হতে পারে।
- হৃদরোগ:
- কিছু হৃদরোগ যেমন কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউর (congestive heart failure) কিডনির কাজের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং এলবুমিনুরিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- গর্ভাবস্থা:
- গর্ভাবস্থায় কখনও কখনও এলবুমিন মূত্রে বের হতে পারে, বিশেষত প্রিক্লাম্পসিয়া (Preeclampsia) অবস্থায়, যা উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রোটিনিউরিয়ার সাথে সম্পর্কিত।
- পুষ্টির অভাব:
- প্রোটিনের অভাব বা পুষ্টিহীনতা এলবুমিনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে এবং শরীর থেকে এলবুমিন ফিল্টার হতে পারে।
- অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম:
- অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা শারীরিক চাপে কখনও কখনও এলবুমিন মূত্রে পাওয়া যেতে পারে, তবে এটি সাধারণত অস্থায়ী এবং সুস্থ হওয়া উচিত।
লক্ষণ:
এলবুমিন মূত্রে থাকার কিছু সাধারণ লক্ষণ হতে পারে:
- মূত্রে ফেনা: যদি এলবুমিনের পরিমাণ বেশি হয়, মূত্রে ফেনা বা সাদা ভাব দেখা যেতে পারে।
- পায়ের ফোলা: এলবুমিনের ক্ষতি হলে শরীরে পানি জমে যেতে পারে, যার ফলে পায়ের অথবা হাতের ফোলাভাব দেখা দেয়।
- প্রোটিনের অভাব: যদি এলবুমিন শরীর থেকে বেশি পরিমাণে বের হয়ে যায়, শরীরের পুষ্টির অভাব হতে পারে, যার কারণে দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
- ওজন বাড়া: শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে গেলে এটি ওজন বাড়ানোর কারণ হতে পারে।
- কিডনির সমস্যা: যদি এলবুমিনুরিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে এটি কিডনির কাজের হ্রাস হতে পারে, যার ফলে পেশী দুর্বলতা, বমি, বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
প্রতিকার:
এলবুমিন মূত্রে থাকার জন্য চিকিৎসার পদ্ধতি এর কারণের উপর নির্ভর করে:
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ:
- ডায়াবেটিস হলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি, যাতে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। নিয়মিত ইনসুলিন বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ সেবন করা উচিত।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
- উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার জন্য অ্যাংজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম (ACE inhibitors) বা অ্যাংজিওটেনসিন রিসেপ্টর ব্লকারস (ARBs) ব্যবহার করা যেতে পারে, যা কিডনির কর্মক্ষমতা রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- পুষ্টির পরামর্শ:
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এবং সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে কিডনির সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে।
- কিডনি সুরক্ষা:
- কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ।
- এলবুমিনরোধী ওষুধ:
- কিছু বিশেষ ওষুধ যেমন ACE ইনহিবিটর বা ARBs ব্যবহার করা যেতে পারে, যা কিডনির প্রোটিন ফিল্টারিং ক্ষমতা বাড়ায় এবং এলবুমিন মূত্রে বের হওয়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থার সময় চিকিৎসা:
- গর্ভাবস্থায় এলবুমিন মূত্রে দেখা দিলে প্রিক্লাম্পসিয়া থেকে বিরত থাকার জন্য দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।
পরিশেষ:
এলবুমিন মূত্রে থাকা সাধারণত কিডনির সমস্যার সূচনা হতে পারে এবং এটি গুরুতর অবস্থা হতে পারে যদি তা দীর্ঘকালীন হয়। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ ও পরীক্ষা এবং সুস্থ জীবনযাপন কিডনির সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।