মাসিক না হওয়া (Amenorrhea) হল একটি অবস্থা, যেখানে মহিলার ঋতুস্রাব (মাসিক) একাধিক মাস বা এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে যায়। এটি সাধারণত দুটি প্রকারে ভাগ করা যায়:
- প্রাথমিক মাসিক না হওয়া: যখন কোনো মেয়ের বয়স ১৬ বছর হওয়ার পরও প্রথম মাসিক শুরু না হয়।
- দ্বিতীয়ক মৌসুমী মাসিক না হওয়া: যখন কোনো মহিলা যিনি আগে নিয়মিত ঋতুস্রাব করতেন, হঠাৎ মাসিক বন্ধ হয়ে যায় বা অনুপস্থিত থাকে।
মাসিক না হওয়ার কারণ:
মাসিক না হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ নিচে দেওয়া হলো:
- গর্ভাবস্থা: গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ হিসেবে মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
- হরমোনের সমস্যা:
- থাইরয়েড সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা যেমন হাইপোথাইরয়ডিজম বা হাইপারথাইরয়ডিজম মাসিক না হওয়ার কারণ হতে পারে।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS): এই অবস্থায় ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু সঠিকভাবে মুক্ত হয় না, এবং হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যার ফলে মাসিক না হওয়া সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- প্রোজেস্টেরন বা এস্ট্রোজেনের অভাব: হরমোনের অস্বাভাবিকতা মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক বা শারীরিক চাপ মাসিকের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং ঋতুচক্রে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
- অতিরিক্ত বা কম শারীরিক ওজন: খুব কম বা খুব বেশি ওজন থাকা, যেমন উচ্চতা অনুযায়ী অতিরিক্ত ওজন বা অতি কম শারীরিক ওজন, মাসিক না হওয়ার কারণ হতে পারে।
- বিরোধী ঔষধের প্রভাব: কিছু গর্ভনিরোধক পিল বা অন্যান্য ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মাসিক বন্ধ হতে পারে।
- গর্ভপাত বা প্রসব পরবর্তী: গর্ভধারণ বা গর্ভপাতের পর মাসিক পুনরায় শুরু হতে কিছু সময় নেয়। প্রসবের পরও কিছু সময় মাসিক ফিরে আসতে দেরি হতে পারে।
- এন্ডোমেট্রিওসিস: জরায়ুর অভ্যন্তরীণ স্তর (endometrium) জরায়ুর বাইরে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মাসিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- মেনোপজ: ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে মহিলাদের মেনোপজ শুরু হয়, যা মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ হয়ে থাকে।
- বিরল শারীরিক সমস্যা: কিছু বিরল রোগ যেমন, আদিসন ডিজিজ, হাইপোথ্যালামিক ডিসফাংশন বা গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা মাসিক না হওয়ার কারণ হতে পারে।
মাসিক না হওয়ার লক্ষণ:
- ঋতুচক্রের দীর্ঘ অনুপস্থিতি: যদি কোনো মহিলা এক মাস বা তারও বেশি সময় ধরে মাসিক না পান, তবে এটি মাসিক না হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
- গর্ভাবস্থার লক্ষণ: যদি গর্ভাবস্থা হয়, তবে মর্নিং সিকনেস, স্তন ফুলে যাওয়া, বা বমি বমি ভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- শারীরিক বা মানসিক পরিবর্তন: ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ত্বকের পরিবর্তন (যেমন পিম্পল), বা হরমোনের পরিবর্তন হতে পারে।
- গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যা: তলপেটে বা পেটে ব্যথা, অস্বস্তি, বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা লক্ষ্য করা যেতে পারে।
মাসিক না হওয়ার প্রতিকার:
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পানি পান করা, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা মাসিক চক্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- হরমোন থেরাপি: হরমোনের ভারসাম্য ঠিক করার জন্য চিকিৎসক হরমোন থেরাপি নির্ধারণ করতে পারেন। যেমন, গর্ভনিরোধক পিল বা অন্যান্য হরমোন্যাল চিকিৎসা।
- স্ট্রেস কমানো: মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কমানোর জন্য মেডিটেশন, ইয়োগা, বা শিথিলকরণ প্রযুক্তি (relaxation techniques) ব্যবহার করা যেতে পারে।
- প্রযুক্তিগত পরীক্ষা: যদি মাসিক না হওয়ার কারণ ঠিকভাবে নির্ধারণ করা না যায়, তবে চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যা খুঁজে বের করতে পারেন, যেমন হরমোনের পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা থাইরয়েডের পরীক্ষা।
- গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ: মাসিক না হওয়া যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে বা গুরুতর কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
মাসিক না হওয়া সাধারণত কোনো শারীরিক বা হরমোনাল সমস্যা হতে পারে, তবে এটি যদি নিয়মিত বা দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।