Best Homeo Doctor

মাথায় টিউমার কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

মাথায় টিউমার (Brain Tumor) হলো মাথার ভিতরে বা মস্তিষ্কের চারপাশে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বা শরীরের অন্যান্য অংশে প্রভাব ফেলতে পারে। টিউমারটি বিনাইন (benign) হতে পারে, অর্থাৎ তা ক্ষতিকর নয়, বা ম্যালিগন্যান্ট (malignant) বা ক্যান্সারের মতো হতে পারে, যা খুবই বিপজ্জনক। মাথায় টিউমারের মধ্যে নানা ধরণের টিউমার থাকতে পারে, যেমন গ্লিওমা, মেনিনজিওমা, আ্যাস্ট্রোসাইটোমা, পিটুইটারি টিউমার, এবং আরও অনেক।

মাথায় টিউমারের কারণ:

মাথায় টিউমার হওয়ার কারণ অনেকগুলো হতে পারে, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর সঠিক কারণ জানা যায় না। তবে কিছু কারণ রয়েছে যা টিউমারের সৃষ্টি করতে পারে:

  1. জেনেটিক বা বংশগত কারণ:
    • কিছু মানুষদের মধ্যে বংশগতভাবে টিউমারের ঝুঁকি বেশি হতে পারে। যেমন, নিওফ্রোমাটোসিস (Neurofibromatosis) নামক একটি বংশগত রোগের কারণে মস্তিষ্কে টিউমার হতে পারে।
  2. অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি:
    • মস্তিষ্কের কোষগুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা মিউটেশন (mutation) ঘটলে এটি টিউমার সৃষ্টি করতে পারে। কোষের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কখনও মস্তিষ্কে ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।
  3. বয়স:
    • বয়সের সাথে সাথে কিছু ধরণের টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, বিশেষত ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে।
  4. তীব্র রেডিয়েশন (Radiation):
    • অতিরিক্ত রেডিয়েশন বা বিকিরণ (যেমন, ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি) মস্তিষ্কের কোষে মিউটেশন ঘটাতে পারে, যা টিউমারের সৃষ্টি করতে পারে।
  5. প্রাকৃতিক পরিবেশ বা কিছু রাসায়নিক:
    • কিছু রাসায়নিক পদার্থ বা পরিবেশগত উপাদান মস্তিষ্কের কোষে ক্ষতি করতে পারে এবং এতে টিউমারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
  6. ভাইরাল সংক্রমণ:
    • কিছু ভাইরাস (যেমন, হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV)) বা অন্যান্য সংক্রমণ মস্তিষ্কে কোষের মিউটেশন ঘটাতে পারে।
  7. প্রজনন হরমোন:
    • কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে মহিলাদের মধ্যে প্রজনন হরমোনের প্রভাব মস্তিষ্কে টিউমারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

মাথায় টিউমারের লক্ষণ:

মাথায় টিউমারের লক্ষণগুলি তার অবস্থান এবং আকারের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:

  1. অস্বাভাবিক মাথাব্যথা (Headaches):
    • টিউমারের কারণে মস্তিষ্কের ভিতরের চাপ বাড়তে পারে, যা ক্রমশ তীব্র মাথাব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় বা রাতে ব্যথা বাড়তে পারে।
  2. মাথা ঘোরা (Dizziness):
    • মাথায় টিউমার থাকলে অস্বাভাবিক মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো অনুভূতি হতে পারে।
  3. অস্বাভাবিক দৃষ্টি (Vision Problems):
    • টিউমার মস্তিষ্কের সেই অংশে চাপ ফেলতে পারে যা দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, ডাবল ভিশন বা দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।
  4. তীব্র ক্লান্তি (Fatigue):
    • মাথায় টিউমার থাকার কারণে শরীরে শক্তির অভাব হতে পারে, যার ফলে অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অবসাদ অনুভূত হতে পারে।
  5. মেমরি লস (Memory Loss):
    • মস্তিষ্কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এটি স্মৃতি বা চিন্তা শক্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
  6. অস্বাভাবিক চলাফেরা (Abnormal Movements):
    • টিউমার মস্তিষ্কের অংশে চাপ সৃষ্টি করলে, বিশেষ করে মস্তিষ্কের কোর্ডিনেশন (coordination) নিয়ন্ত্রণকারী অংশে, এটি শারীরিক চলাফেরায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হাত বা পা তোলার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে, বা শ্বেততার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
  7. অতিউত্তেজনা (Seizures):
    • মস্তিষ্কে টিউমার থাকলে স্নায়ুর উপর চাপ তৈরি হতে পারে, যার ফলে সিজার (seizure) বা আতঙ্কজনক আকস্মিক শারীরিক প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে।
  8. মনোভাবের পরিবর্তন (Personality Changes):
    • টিউমারের কারণে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন বা আচরণের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যেমন অতিরিক্ত বিরক্তি বা অস্থিরতা।

মাথায় টিউমারের প্রতিকার:

মাথায় টিউমারের চিকিৎসা তার ধরণ (বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট), আকার, অবস্থান এবং রোগীর স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। এখানে কিছু সাধারণ চিকিৎসার পদ্ধতি দেওয়া হলো:

  1. সার্জারি (Surgery):
    • যদি টিউমারটি মস্তিষ্কের যে অংশে রয়েছে সেখান থেকে অপসারণযোগ্য হয়, তবে এটি সার্জারি করে অপসারণ করা যেতে পারে। এটি একমাত্র পদ্ধতি হতে পারে, বিশেষ করে যদি টিউমারটি খুব বড় বা ব্যথা সৃষ্টি করে।
  2. কেমোথেরাপি (Chemotherapy):
    • ম্যালিগন্যান্ট (malignant) বা ক্যান্সার জাতীয় টিউমারের জন্য কেমোথেরাপি প্রয়োগ করা হতে পারে, যা টিউমারের কোষগুলিকে ধ্বংস করে।
  3. রেডিওথেরাপি (Radiotherapy):
    • টিউমারটি ক্যান্সার জাতীয় হলে এবং অপসারণ সম্ভব না হলে, রেডিওথেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে, যা টিউমারের কোষগুলিকে মারাত্মক ক্ষতি করে।
  4. স্টেরয়েড (Steroids):
    • টিউমারের কারণে মস্তিষ্কে শ্বাসকষ্ট বা চাপ বাড়লে, স্টেরয়েড ব্যবহার করা হতে পারে, যা শ্বাস প্রশ্বাসে সহায়তা এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  5. লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা:
    • মাথাব্যথা বা সিজারের জন্য বিশেষ ধরনের ওষুধ দেওয়া হতে পারে, যা সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  6. বিকল্প চিকিৎসা:
    • কিছু ক্ষেত্রে, টিউমার ছোট হলে এবং বিনাইন হলে, পর্যবেক্ষণ বা নিয়মিত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

প্রতিরোধ:

মাথায় টিউমার হওয়া এড়িয়ে যাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট উপায় নেই, তবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে যা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে:

  1. রেডিয়েশন থেকে রক্ষা:
    • অতিরিক্ত রেডিয়েশন থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন, যেমন অপ্রয়োজনীয় এক্স-রে এড়ানো।
  2. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
    • নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং মানসিক চাপ কমানো টিউমারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  3. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ:
    • যদি মাথাব্যথা বা অন্য কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে তৎকালীন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

শেষ কথা:

মাথায় টিউমার একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে, তবে দ্রুত শনাক্ত এবং সঠিক চিকিৎসা নেওয়ার মাধ্যমে এর চিকিৎসা সম্ভব। যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *