অর্বুদ (Tumor) মাথায় একটি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রক্রিয়া, যেখানে কোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভাজিত হতে থাকে। এটি সাধারণত দেহের যেকোনো অংশে, যেমন মাথার অংশেও, সৃষ্টি হতে পারে। মাথায় অর্বুদের (মস্তিষ্কের টিউমার) বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, এবং এগুলি গূরুতর ও অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
কারণ:
মস্তিষ্কের অর্বুদ বা টিউমারের কারণ সঠিকভাবে জানা না গেলেও, কিছু সাধারণ কারণ যা মস্তিষ্কে অর্বুদ সৃষ্টি করতে পারে:
- জেনেটিক কারণ: যদি পরিবারের মধ্যে মস্তিষ্কের টিউমার বা ক্যান্সার থাকে, তবে এটি উত্তরাধিকারের মাধ্যমে হতে পারে।
- বংশগতী: কিছু জেনেটিক রোগের কারণে অর্বুদ হতে পারে, যেমন নিউরোফাইব্রোমাটোসিস বা টুরেসের সিনড্রোম।
- আবহাওয়া বা পরিবেশগত কারণ: রেডিয়েশন এক্সপোজার, টক্সিনস, অথবা কিছু রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে মস্তিষ্কের টিউমার হতে পারে।
- শরীরের অন্যান্য অর্বুদের বিস্তার: কখনও কখনও মস্তিষ্কে অর্বুদ অন্য কোনো অঙ্গ থেকে মেটাস্ট্যাসিস (বিস্তার) করতে পারে, যেমন ফুসফুস, স্তন বা অন্ত্র থেকে।
- অজানা কারণ: কিছু মস্তিষ্কের অর্বুদ কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াও অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের কারণে তৈরি হতে পারে।
লক্ষণ:
মস্তিষ্কে অর্বুদ বা টিউমারের লক্ষণ নির্ভর করে তার আকার, অবস্থান এবং বিস্তারের উপর। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- মাথাব্যথা: বিশেষত সকালের দিকে বা ধীরে ধীরে তীব্রতা বাড়তে থাকা মাথাব্যথা হতে পারে।
- মাথার ভারী অনুভূতি বা চাপ: মাথার ভিতরে চাপ বা ভারী অনুভূতি হতে পারে।
- দৃষ্টি সমস্যা: অস্বচ্ছ বা ঝাপসা দৃষ্টি, অথবা এক চোখে বা উভয় চোখে দৃষ্টির সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
- মৌখিক সমস্যা: কথা বলা, শ্বাস নেওয়া বা গিলতে সমস্যা হতে পারে।
- মেমরি সমস্যা বা কনফিউশন: স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে বা মনোযোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- মতিভ্রষ্টতা বা অস্বাভাবিক আচরণ: মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন, যেমন অস্বাভাবিক অস্থিরতা বা বিষণ্ণতা।
- মাথা ঘোরা বা দুলুনি: ভারসাম্য হারানো বা ঘোরানোর অনুভূতি হতে পারে।
- মাথার কাঁপুনি বা সিজার: যদি টিউমার মস্তিষ্কের সেই অংশে হয় যেখানে স্নায়ু কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ হয়, তবে সিজার বা কাঁপুনি দেখা দিতে পারে।
- অস্বাভাবিক শরীরের পঙক্তি বা পক্ষাঘাত: অর্বুদ যদি মস্তিষ্কের এমন অংশে থাকে যা শারীরিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে, তবে শরীরের একপাশে পক্ষাঘাত বা অসাড়তা হতে পারে।
প্রতিকার:
মস্তিষ্কের টিউমারের চিকিৎসা তার ধরনের ওপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ চিকিৎসার উপায় হলো:
- সার্জারি: যদি টিউমারটি অপসারণযোগ্য হয়, তবে অস্ত্রোপচার করা হয়। সার্জারি মাধ্যমে টিউমারটি বের করা হতে পারে, তবে এটি কিছু ঝুঁকি নিয়ে আসে।
- রেডিয়েশন থেরাপি: টিউমারটি যদি অপসারণ করা না যায়, তবে রেডিয়েশন ব্যবহার করা যেতে পারে, যা টিউমারের কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
- কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপি টিউমারের কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে, বিশেষত যদি টিউমার ক্যান্সারী হয়।
- স্টেরয়েডস: টিউমারের কারণে মস্তিষ্কে ফুলে যাওয়া বা চাপ বৃদ্ধি পেলে স্টেরয়েডস ব্যবহৃত হতে পারে।
- টার্গেটেড থেরাপি: কিছু টিউমারের জন্য বিশেষ ধরনের চিকিৎসা হতে পারে, যা টিউমারের বৃদ্ধির জন্য দায়ী নির্দিষ্ট প্রোটিন বা কোষের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করে কাজ করে।
- পালিয়েটিভ কেয়ার: যেসব টিউমার অপসারণ বা চিকিৎসা সম্ভব নয়, তাদের জন্য গুণগত জীবন উন্নত করার জন্য পালিয়েটিভ কেয়ার দেওয়া হয়।
বিশেষ সতর্কতা:
মস্তিষ্কের টিউমারের লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, কারণ এটি কখনও কখনও জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ডাক্তার মস্তিষ্কের স্ক্যান (যেমন MRI বা CT স্ক্যান) এবং অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারেন এবং সঠিক চিকিৎসা প্রয়োগ করতে পারেন।
Top of Form
Get smarter responses, uploa
Bottom of Form