Best Homeo Doctor

মাকড়সার কামড় কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

মাকড়সার কামড় (Spider Bite) হলো একটি ঘটনা যেখানে একটি মাকড়সা (Spider) মানুষের ত্বকে কামড় দেয়। সাধারণত মাকড়সার কামড় বিপজ্জনক না হলেও, কিছু মাকড়সার কামড়ে বিষক্রিয়া হতে পারে যা প্রাণঘাতীও হতে পারে। এর মধ্যে কিছু মাকড়সা যেমন বিষাক্ত, তাদের কামড় জীবনের জন্য বিপদজনক হতে পারে।

কারণ:

মাকড়সার কামড় সাধারণত মাকড়সার আত্মরক্ষার জন্য হয়ে থাকে। মাকড়সারা সাধারণত কামড় দেয় যদি তারা শত্রু হিসেবে অনুভব করে, বা তারা নিজেদের অঞ্চল রক্ষা করতে চায়। যদিও বেশিরভাগ মাকড়সা বিষাক্ত নয়, তবে কিছু মাকড়সার কামড়ে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে। বিষাক্ত মাকড়সাগুলোর মধ্যে প্রধান কিছু হলো:

  1. ব্ল্যাক উইডো (Black Widow): এই মাকড়সার কামড় বিষাক্ত এবং তীব্র ব্যথা, পেশী দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট এবং এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
  2. ব্রাউন রিক্লুস (Brown Recluse): এই মাকড়সা কামড় দিলে ত্বকে গর্ত বা ক্ষত হতে পারে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে।
  3. ইউরোপিয়ান ইঁদুর মাকড়সা (European House Spider): এদের কামড় সাধারণত কম বিষাক্ত, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ব্যথা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়া, অধিকাংশ মাকড়সার কামড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না এবং সহজে নিরাময় হয়ে যায়।

লক্ষণ:

মাকড়সার কামড়ের লক্ষণটি কামড়ের প্রকার, মাকড়সার বিষাক্ততা, এবং কামড়ের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো:

  1. কামড়ের স্থান প্রদাহিত হওয়া: কামড়ের জায়গায় লাল হয়ে যাওয়া বা ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
  2. তীব্র ব্যথা: বিশেষ করে বিষাক্ত মাকড়সার কামড়ে তীব্র ব্যথা হতে পারে যা ধীরে ধীরে বেড়ে যেতে পারে।
  3. ত্বকে ক্ষত বা গর্ত সৃষ্টি হওয়া: ব্রাউন রিক্লুস মাকড়সার কামড়ে ত্বকে গর্ত বা ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।
  4. চামড়ার পরিবর্তন: কামড়ের জায়গায় রঙ পরিবর্তন হতে পারে, যেমন সাদা, নীল বা কালো হয়ে যেতে পারে।
  5. পেশী দুর্বলতা বা তীব্র ব্যথা: বিষাক্ত কামড়ের কারণে পেশী দুর্বলতা বা সারা শরীরে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  6. বমি বা মেজাজ পরিবর্তন: কিছু ক্ষেত্রে বিষক্রিয়ার কারণে বমি, মাথাব্যথা, অথবা অস্বাভাবিক মেজাজ পরিবর্তন হতে পারে।
  7. শ্বাসকষ্ট বা হৃদস্পন্দনে পরিবর্তন: বিষাক্ত মাকড়সার কামড়ের ফলে শ্বাসকষ্ট, হৃদস্পন্দনে পরিবর্তন বা চাপ অনুভূত হতে পারে।
  8. ফিভার বা জ্বর: বিষাক্ত মাকড়সার কামড়ে শরীরে জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

প্রতিকার:

মাকড়সার কামড়ের চিকিৎসা কামড়ের ধরন, কামড়ের অবস্থান এবং বিষাক্ততার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণ কিছু প্রতিকার হলো:

  1. কামড়ের জায়গা পরিষ্কার করা: প্রথমত, কামড়ের স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে, যাতে কোন ব্যাকটেরিয়া বা ইনফেকশন না হয়। একটি পরিষ্কার কাপড় বা সাবান ও পানির সাহায্যে কামড়ের জায়গা ধুয়ে ফেলুন।
  2. শীতল প্যাক ব্যবহার: কামড়ের স্থান ফোলাভাব বা প্রদাহ কমানোর জন্য বরফ বা ঠান্ডা পানি দিয়ে কমপেস দিন। এটি ব্যথা কমাতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  3. পেইন কিলার (Painkiller): সাধারণ ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন মতো সাধারণ পেইন কিলার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটি ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  4. অ্যান্টিহিস্টামিন: মাকড়সার কামড়ে যদি চুলকানি বা অ্যালার্জির মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অ্যান্টিহিস্টামিন (যেমন ডিফেনহাইড্রামিন) ব্যবহৃত হতে পারে।
  5. অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম: যদি কামড়ের জায়গায় ইনফেকশন বা ক্ষত সৃষ্টি হয়ে থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
  6. ডাক্তারের কাছে যাওয়া: যদি কামড় বিষাক্ত মাকড়সার, যেমন ব্ল্যাক উইডো বা ব্রাউন রিক্লুস মাকড়সার কামড় হয়, তবে তৎক্ষণাৎ একজন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এসব মাকড়সার কামড় অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে এবং এর চিকিৎসা দরকার হতে পারে, যেমন অ্যান্টিভেনম (venom antidote) দেওয়া।
  7. হাসপাতাল ভর্তি: যদি কামড়ের পর গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন শ্বাসকষ্ট, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, অজ্ঞান হওয়া, বা পেশী দুর্বলতা, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত।

প্রতিরোধ:

মাকড়সার কামড় থেকে বাঁচতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে:

  1. ঘরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: ঘরের কোণ, বিশেষ করে গুদামঘর, সেলফ এবং অন্ধকার জায়গাগুলিকে নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। মাকড়সা সাধারণত অন্ধকার ও অপরিষ্কার জায়গায় থাকে।
  2. ভালো কাপড় পরা: যদি আপনি প্রকৃতিতে বা কোনো জায়গায় মাকড়সার উপস্থিতি বেশি থাকে, তবে ভালো কাপড় পরুন যাতে মাকড়সা কামড় দিতে না পারে।
  3. মাকড়সার বিষাক্ত প্রজাতির পরিচিতি: যেখানে মাকড়সার কামড়ের ঝুঁকি বেশি, সেখানে বিষাক্ত প্রজাতির মাকড়সা চিহ্নিত করা এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
  4. ঘরের বাইরে বাইরে কাজ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা: মাকড়সা বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকতে পারে, তাই বাহিরে কাজ করার সময় সাবধানে পা রাখা বা হ্যান্ড গ্লোভস পরা ভালো।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

যদি কোনো মাকড়সা কামড় দেয় এবং গুরুতর উপসর্গ (যেমন তীব্র ব্যথা, ফোলাভাব, শ্বাসকষ্ট) দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *