Best Homeo Doctor

মল শ্লেষ্মা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

মল শ্লেষ্মা (Mucus in Stool) হল একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে মলের সঙ্গে শ্লেষ্মা (mucus) বের হয়। শ্লেষ্মা সাধারণত অন্ত্রের শ্লেষ্মা ঝিল্লি দ্বারা উৎপন্ন হয়, যা পেট এবং অন্ত্রকে রক্ষা করে। তবে, কিছু শারীরিক সমস্যা বা রোগের কারণে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা মলে উপস্থিত হতে পারে। এটি সাধারণত কোনও অন্ত্রের সমস্যা বা রোগের লক্ষণ হতে পারে।

কারণ:

মলে শ্লেষ্মা উপস্থিত হওয়ার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS):
    IBS হল একটি সাধারণ অন্ত্রের রোগ যেখানে অন্ত্রের কার্যক্রম অস্বাভাবিক হয়ে যায়। এর ফলে মলের সঙ্গে শ্লেষ্মা বের হতে পারে। সাধারণত, IBS-এ কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া থাকতে পারে।
  2. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন:
    ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশন যেমন কলেরা, শিগেলা, স্যালমোনেলা, ক্যাম্পিলোব্যাকটার ইত্যাদি অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে শ্লেষ্মা মলে উপস্থিত হতে পারে।
  3. কোলাইটিস বা কোলন ইনফ্লেমেশন:
    কোলন বা বৃহদন্ত্রের প্রদাহ (যেমন, আলসারেটিভ কোলাইটিস বা ক্রোন’স ডিজিজ) মলে শ্লেষ্মা তৈরি করতে পারে। এই রোগগুলি সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করে।
  4. ক্রোন ডিজিজ:
    ক্রোন’স ডিজিজ একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ, যেখানে শ্লেষ্মা এবং মলের মধ্যে রক্তও থাকতে পারে। এটি অন্ত্রের বিভিন্ন অংশে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
  5. ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য:
    ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য আক্রান্ত রোগীদের মলে শ্লেষ্মা থাকতে পারে, বিশেষত IBS বা অন্য অন্ত্রের সমস্যার কারণে।
  6. পাইলস বা অর্শ্ব:
    পাইলস বা অর্শ্বের কারণে মলত্যাগের সময় শ্লেষ্মা বের হতে পারে। এটি সাধারণত মলের সঙ্গে লাল রক্তের উপস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত।
  7. ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স:
    দুধজাত খাবারের প্রতি অ্যালার্জি বা অসহিষ্ণুতা (যেমন, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স) মল শ্লেষ্মার সৃষ্টি করতে পারে। এটি অন্ত্রের সমস্যার পাশাপাশি শ্লেষ্মা তৈরি করতে পারে।
  8. এন্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
    কিছু সময় এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের পর অন্ত্রের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া অস্বাভাবিক হয়ে যায়, ফলে অন্ত্রে প্রদাহ বা শ্লেষ্মার সৃষ্টি হতে পারে।
  9. ক্যান্সার:
    কলন বা রেকটাল ক্যান্সারের কারণে অন্ত্রে শ্লেষ্মার উপস্থিতি হতে পারে। এটি সাধারণত অন্যান্য লক্ষণের সঙ্গে (যেমন রক্তস্রাব, অবিচ্ছিন্ন ব্যথা) দেখা যায়।
  10. অ্যালার্জি:
    কিছু খাবারের প্রতি অ্যালার্জি বা অন্ত্রের সিস্টেমের সারা শরীরে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া শ্লেষ্মার উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে।

লক্ষণ:

মল শ্লেষ্মার অন্যান্য সাধারণ লক্ষণগুলো হতে পারে:

  1. মলের মধ্যে শ্লেষ্মা বা জেলির মতো পদার্থ:
    মল শ্লেষ্মা সাধারণত সাদা বা পাঁজা রঙের হতে পারে এবং এটি মলের সাথে মিশে থাকতে পারে।
  2. ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য:
    অনেক সময় মলে শ্লেষ্মার সঙ্গে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকতে পারে।
  3. পেটের ব্যথা বা অস্বস্তি:
    অন্ত্রের প্রদাহ বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
  4. রক্তস্রাব:
    কিছু ক্ষেত্রে, মলের সঙ্গে শ্লেষ্মার সাথে রক্তও বের হতে পারে, বিশেষত পাইলস বা কোলাইটিসের ক্ষেত্রে।
  5. ফুলে যাওয়ার অনুভূতি বা গ্যাস:
    অন্ত্রের সমস্যার কারণে পেটে গ্যাস বা ফুলে যাওয়ার অনুভূতি থাকতে পারে।
  6. বমি বা বমির অনুভূতি:
    অন্ত্রের রোগ বা প্রদাহজনিত কারণে বমি বা বমির অনুভূতি দেখা দিতে পারে।

প্রতিকার:

মল শ্লেষ্মার কারণে যদি স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা রোগের সম্ভাবনা থাকে, তবে নিম্নলিখিত প্রতিকারগুলো সাহায্য করতে পারে:

  1. পুষ্টিকর খাবার:
    স্বাস্থ্যকর, সুষম খাবার খাওয়া জরুরি। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, ফল, মসুর ডাল অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  2. পানি বেশি পান করা:
    পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়া মলের নিয়মিততা বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বা অন্যান্য অন্ত্রের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
  3. এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের সময় সতর্কতা:
    যদি মল শ্লেষ্মার কারণ ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয় এবং এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন এবং কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা জানাবেন।
  4. ফাইবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো:
    সুষম খাদ্যাভ্যাস, বিশেষত ফাইবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো অন্ত্রের কার্যক্রম উন্নত করে এবং মল শ্লেষ্মা কমাতে সহায়তা করতে পারে।
  5. স্ট্রেস কমানো:
    অতিরিক্ত মানসিক চাপ IBS বা অন্যান্য অন্ত্রের সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। নিয়মিত যোগব্যায়াম বা ধ্যান স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
  6. ঔষধ ব্যবহার:
    যদি শ্লেষ্মার কারণ IBS বা অন্য কোনো অন্ত্রের সমস্যা হয়, তবে চিকিৎসক কিছু ঔষধ যেমন অ্যান্টাস্পাসমোডিক, প্রো-বায়োটিকস বা অন্যান্য মেডিকেশন সুপারিশ করতে পারেন।
  7. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া:
    যদি মলে শ্লেষ্মা দীর্ঘস্থায়ী বা একাধিক লক্ষণের সাথে দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কখনও কখনও, অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ বা ক্যান্সারের কারণে মল শ্লেষ্মা দেখা দিতে পারে।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • যদি মলের সঙ্গে রক্ত দেখা যায়।
  • যদি পেটে তীব্র ব্যথা থাকে।
  • যদি দীর্ঘদিন ধরে মলে শ্লেষ্মা থাকে এবং তা কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ বা রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়।
  • যদি অস্বাভাবিক মল বা ডায়রিয়া দেখা দেয়।

মল শ্লেষ্মা যদি সাধারণ কারণে হয়, তবে এটি তেমন বড় সমস্যা নয়, তবে যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ওঠে বা গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *