ব্রেন টিউমার হলো মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি বা টিউমার। এটি মস্তিষ্কের যেকোনো অংশে ঘটতে পারে এবং এটি benign (ভাল) বা malignant (মন্দ) হতে পারে। ব্রেন টিউমার সাধারণত মস্তিষ্কের কোষ, স্নায়ু বা মস্তিষ্কের আশেপাশের অন্যান্য টিস্যু থেকে তৈরি হয়। ব্রেন টিউমার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং জীবনের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
ব্রেন টিউমার (Brain Tumor) এর কারণ:
ব্রেন টিউমারের সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু ঝুঁকির কারণ রয়েছে যা এটি হতে পারে:
- জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস: কিছু লোকের ক্ষেত্রে পরিবারের মধ্যে ব্রেন টিউমার বা ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে তাদের ঝুঁকি বেশি হতে পারে।
- বিকিরণ (Radiation): অতিরিক্ত বিকিরণ বা রেডিয়েশন, যেমন এক্স-রে বা চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত রেডিওথেরাপি, মস্তিষ্কে টিউমার সৃষ্টি করতে পারে।
- বয়স: বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বাড়ে, তবে এটি শিশুদের মধ্যেও হতে পারে।
- প্রতিবন্ধক বা ভাইরাল সংক্রমণ: কিছু ভাইরাস বা ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা মস্তিষ্কের টিউমার সৃষ্টি করতে পারে।
- ধূমপান এবং অ্যালকোহল: গবেষণায় কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, ধূমপান এবং অ্যালকোহল অতিরিক্ত সেবন ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ব্রেন টিউমার (Brain Tumor) এর লক্ষণ:
ব্রেন টিউমারের লক্ষণ টিউমারের অবস্থান এবং আকারের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:
- মাথাব্যথা: দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র মাথাব্যথা, বিশেষ করে সকালে উঠে বা রাতে শোয়ার আগে।
- মূর্ছনা এবং বমি: বিশেষত সকালে, মাথাব্যথার সাথে সাথে বমি আসতে পারে।
- দৃষ্টি সমস্যা: চোখে ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।
- মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো: চলার সময় ভারসাম্য হারানো বা মাথা ঘোরা অনুভূতি।
- ব্যথা বা প্যারালাইসিস (অংশিক পক্ষাঘাত): শরীরের এক দিকের পক্ষাঘাত বা শক্তি কমে যাওয়া।
- মেমরি বা স্মৃতিশক্তির সমস্যা: স্মৃতি হারানো বা মনোযোগের ঘাটতি।
- বোল বা আচরণের পরিবর্তন: আচরণের বা চিন্তাভাবনার পরিবর্তন হতে পারে, যেমন উদ্বেগ বা হতাশা।
- স্পিচ প্রোবলেম: কথা বলতে সমস্যা বা ভাষাগত অক্ষমতা।
- আস্ফালন বা অবচেতনতা: মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা আচরণের পরিবর্তন।
ব্রেন টিউমার (Brain Tumor) এর প্রতিকার:
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা সাধারণত এর ধরণ, আকার, অবস্থান, এবং গাম্ভীর্য অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। কিছু সাধারণ চিকিৎসার পদ্ধতি হলো:
- সার্জারি (অপারেশন):
- ব্রেন টিউমারের অস্ত্রোপচার প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতি। সার্জারির মাধ্যমে টিউমারটি অপসারণ করা হয়, তবে টিউমারের অবস্থান এবং প্রভাবের ওপর নির্ভর করে এটি সহজ নয়।
- কেমোথেরাপি:
- কেমোথেরাপি ব্রেন টিউমারের ম্যালিগন্যান্ট (মন্দ) কোষ ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। এটি বিশেষ করে মস্তিষ্কের গভীরে থাকা টিউমারের চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে।
- রেডিওথেরাপি:
- রেডিওথেরাপি বা এক্স-রে রশ্মি টিউমার কোষ ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি টিউমারের আকার কমাতে বা ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সহায়তা করে।
- ইমিউনোথেরাপি:
- ইমিউনোথেরাপি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, যাতে এটি ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
- স্টেরয়েডস (Steroids):
- স্টেরয়েডস ব্যবহার করা হতে পারে টিউমারের কারণে মস্তিষ্কে যে ফুলে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়, তা কমানোর জন্য। এটি রোগীর অবস্থা সাময়িকভাবে উন্নত করতে পারে।
- এন্টি–এডিমা থেরাপি:
- মস্তিষ্কের ফুলে যাওয়ার সমস্যাগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে এন্টি-এডিমা থেরাপি ব্যবহৃত হতে পারে।
প্রতিরোধ:
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
- সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন, ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
- বিকিরণ (Radiation) থেকে বিরত থাকা:
- অতিরিক্ত বিকিরণ এড়ানো এবং কম সময়ে এক্স-রে বা অন্যান্য রেডিয়েশন সংক্রান্ত পরীক্ষাগুলি করানো উচিত।
- নিয়মিত চেকআপ:
- যদি ব্রেন টিউমারের কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা বিশেষত ৫০ বছর বয়সের পর গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা:
ব্রেন টিউমার একটি জটিল এবং গুরুতর রোগ হতে পারে, তবে এটি যদি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা করা হয়, তাহলে এর চিকিৎসা সম্ভব। যদি মাথাব্যথা, মূর্ছনা, দৃষ্টি সমস্যা বা অন্যান্য অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নেওয়া উচিত।