Best Homeo Doctor

বিষফোড়া কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

বিষফোড়া (Carbuncle) একটি গুরুতর ধরনের ত্বক সংক্রমণ, যা সাধারণত ফোড়া (Boil) এর মতো কিন্তু একটু বড় আকারে এবং একাধিক ফোড়া একসাথে মিলিত হয়ে গঠিত হয়। এটি মূলত ত্বক এবং ত্বকের নিচের স্তরে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ফলে ঘটে। বিষফোড়া ত্বকের উপর বড় বড় লাল, ফুলে ওঠা এবং পুঁজভর্তি গোলাকার ফোলাভাব সৃষ্টি করে এবং এটি খুবই ব্যথাযুক্ত হয়। বিষফোড়া সাধারণত স্‍ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus) ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে ঘটে।

বিষফোড়ার কারণ:

  1. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: বিষফোড়া সাধারণত স্‍ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (Staphylococcus aureus) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়। এই ব্যাকটেরিয়া ত্বকের নিচে প্রবেশ করে এবং ত্বকের বিভিন্ন অংশে পুঁজভর্তি ফোলাভাব সৃষ্টি করে।
  2. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: অপরিষ্কার ত্বক, অতিরিক্ত ঘাম, বা ময়লা ত্বকের সংস্পর্শে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটাতে পারে, যা বিষফোড়া সৃষ্টি করে।
  3. দূষিত পরিবেশ: অস্পষ্ট বা অনিরাপদ পরিবেশ, যেখানে ত্বকে সহজে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে, সেখানে বিষফোড়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
  4. অতিরিক্ত ঘর্ষণ: শারীরিকভাবে অতিরিক্ত ঘর্ষণ বা ঘাম যখন ত্বকে দীর্ঘসময় ধরে থাকে, তখন ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।
  5. দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা অটোইমিউন সমস্যা: ডায়াবেটিস, অটোইমিউন রোগ বা অন্য কোনও রোগের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে বিষফোড়া হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  6. অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি: ত্বক পরিষ্কার না রাখা বা অপরিষ্কার হাত দিয়ে ত্বক স্পর্শ করলে ব্যাকটেরিয়া ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করে এবং বিষফোড়া সৃষ্টি করতে পারে।
  7. পুষ্টির অভাব: পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে ত্বক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজেই সংক্রমিত হয়।

বিষফোড়ার লক্ষণ:

  1. ফুলে ওঠা এবং লাল হয়ে যাওয়া: বিষফোড়া সাধারণত ত্বকের নিচে বড় আকারে ফুলে ওঠে এবং লাল হয়ে যায়। এটি অনেকটা বড় ফোড়া এবং একাধিক ফোড়া একত্রিত হয়ে তৈরি হয়।
  2. পুঁজভর্তি ফোলাভাব: বিষফোড়ায় প্রচুর পরিমাণ পুঁজ বা তরল জমে এবং এটি পরে বাইরে বের হয়ে যেতে পারে।
  3. ব্যথা এবং অস্বস্তি: বিষফোড়া অত্যন্ত ব্যথাযুক্ত হতে পারে এবং আক্রান্ত স্থানে অস্বস্তি বা চাপ অনুভূত হতে পারে।
  4. গরম অনুভূতি: ফোড়ার জায়গায় গরম অনুভূতি থাকতে পারে, এটি ইনফেকশন বা প্রদাহের কারণ।
  5. শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি: বিষফোড়া তীব্র হলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা জ্বরের আকারে প্রকাশ পায়।
  6. সামগ্রিক অসুস্থতা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিষফোড়া গুরুতর হলে শরীরের অবস্থা খারাপ হতে পারে, যেমন দুর্বলতা, অস্থিরতা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি।

বিষফোড়ার প্রতিকার:

  1. গরম সেঁক দেওয়া: আক্রান্ত স্থানে গরম সেঁক দিন (যেমন, গরম পানি দিয়ে একটি কাপড় ভিজিয়ে লাগানো)। এটি পুঁজ বের করার জন্য সহায়ক হতে পারে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  2. অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার: ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম বা ট্যাবলেট ব্যবহার করতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে ইনফেকশন আরও গুরুতর হলে, অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশনও দেওয়া হতে পারে।
  3. ফোড়া ফেটে যাওয়ার পর পরিষ্কার রাখা: যদি বিষফোড়া ফেটে যায়, তবে তা পরিষ্কারভাবে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। হাইড্রোজেন পারক্সাইড বা পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে।
  4. ব্যথানাশক ওষুধ: ব্যথা উপশম করতে প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
  5. ডাক্তারের পরামর্শ: যদি বিষফোড়া খুব বড় হয়ে যায় বা শরীরের অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, তখন দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক ফোড়া অপসারণ বা অপারেশন করতে পারেন।
  6. পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখা: আক্রান্ত অংশটি পরিষ্কার এবং শুকনো রাখা উচিত। যাতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ না বাড়ে।

সতর্কতা:

  • বিষফোড়া চেপে বা ফাটানোর চেষ্টা করবেন না, কারণ এটি ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে দিতে পারে এবং ইনফেকশন আরও গুরুতর হতে পারে।
  • ফোড়া ফেটে গেলে সঠিকভাবে তা পরিষ্কার করা উচিত যাতে সংক্রমণ না ছড়ায় এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

বিষফোড়া একটি গুরুতর সমস্যা হলেও সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে এটি খুব সহজেই সেরে উঠতে পারে। তবে, ফোড়া বড় হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *