বিষখাওয়া (Poisoning) এমন একটি অবস্থা যেখানে কোনো ব্যক্তি বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণ করে, যা শারীরিক ক্ষতি বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিষ খাওয়া সাধারণত দুর্ঘটনাবশত ঘটে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি আত্মহত্যার প্রচেষ্টা বা হত্যার উদ্দেশ্যে হতে পারে। বিষের প্রকার, পরিমাণ, এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে বিষখাওয়ার গুরুতরতা পরিবর্তিত হতে পারে।
কারণ:
বিষ খাওয়ার প্রধান কারণ হলো বিষাক্ত পদার্থের অপ্রত্যাশিত বা ইচ্ছাকৃত ব্যবহার। এটি বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে:
- দুর্ঘটনাবশত বিষাক্ত পদার্থ খাওয়া:
- শিশুরা খেলতে গিয়ে বা ভুলক্রমে কোনো বিষাক্ত পদার্থ (যেমন, রাসায়নিক দ্রব্য, সাফাই পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল ওষুধ) খেয়ে ফেলতে পারে।
- খাবারে বিষাক্ত উপাদান মিশে গেলে, তা খেয়ে বিষক্রিয়া হতে পারে।
- কিছু প্রাকৃতিক খাবার বা মাশরুম, যা বিষাক্ত হতে পারে, ভুল করে খেয়ে ফেলা।
- আত্মহত্যার প্রচেষ্টা:
- কিছু মানুষ মানসিক চাপে বা হতাশায় বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
- হত্যার উদ্দেশ্যে বিষ প্রয়োগ:
- ইতিহাসে এমন কিছু ঘটনা রয়েছে যেখানে কাউকে হত্যা করতে বিষ খাওয়ানো হয়েছে।
- বিষাক্ত গ্যাস বা পদার্থ শ্বাসে নেয়া:
- কখনও কখনও বিষাক্ত গ্যাস (যেমন, মিথেন, কার্বন মনোক্সাইড) শ্বাসের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
লক্ষণ:
বিষখাওয়ার লক্ষণগুলি বিষের প্রকার, পরিমাণ এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- শরীরের লক্ষণ:
- তীব্র পেটব্যথা, বমি বা ডায়রিয়া।
- শ্বাসকষ্ট, শ্বাসের গতি পরিবর্তন বা দ্রুত শ্বাস নেওয়া।
- মাথা ঘোরা, মস্তিষ্কের কাজের সমস্যা (যেমন অজ্ঞান হওয়া বা বিভ্রান্তি)।
- অস্বাভাবিক ত্বকের রঙ (হালকা বা সাদা ত্বক, নীলচে ত্বক)।
- প্রচন্ড ঘাম বা শুষ্ক ত্বক।
- হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া বা অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন।
- শরীরের কোনো অংশে অবশ হয়ে যাওয়া বা পক্ষাঘাত।
- দৃষ্টি ঝাপসা বা অস্বাভাবিক দেখা।
- মনোসামাজিক লক্ষণ:
- হতাশা, আতঙ্ক, বা উদ্বেগ।
- বিভ্রান্তি, অস্বাভাবিক আচরণ বা অস্বাভাবিক কথা বলা।
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা কনফিউশন।
- যদি বিষাক্ত পদার্থ গ্যাস বা বিষাক্ত বাষ্পে থাকে:
- শ্বাসকষ্ট, কাশি, গলা ব্যথা বা শ্বাস নিতে অসুবিধা।
- চোখে জ্বালা বা তীব্র গলাচেপে যাওয়ার অনুভূতি।
প্রতিকার:
বিষ খাওয়ার পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিকার রয়েছে, তবে সেগুলি বিষের প্রকার অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। সাধারণ কিছু প্রতিকার হলো:
- বিষের ধরন চিহ্নিত করা:
- প্রথমে বিষের ধরন সনাক্ত করা জরুরি। যা বিষাক্ত পদার্থ খাওয়া হয়েছে, তা জানা থাকলে, চিকিৎসক বা হাসপাতালের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে।
- যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানো:
- বিষ খাওয়ার পরে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পৌঁছানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষের শিকার হলে, চিকিৎসা দ্রুত শুরু না করলে শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।
- বমি করানো:
- কিছু বিষ (যেমন সুরক্ষিত পদ্ধতিতে, যখন তা দুর্ঘটনাবশত খাওয়া হয়েছে) বমি করানো যেতে পারে। তবে, সব ধরনের বিষের জন্য এটি উপযুক্ত নয়। যদি বিষের প্রকার জানা না থাকে, তখন বমি করানো উচিত নয়, কারণ কিছু বিষ বমি করার মাধ্যমে আরো বেশি বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
- গরম বা ঠাণ্ডা পানি পান:
- কিছু বিষের ক্ষেত্রে, গরম বা ঠাণ্ডা পানি পান করা হতে পারে। তবে, এটি সমস্ত বিষের জন্য উপযুক্ত নয় এবং ডাক্তারের পরামর্শের মাধ্যমে একে অনুসরণ করা উচিত।
- এন্টিডোট (Antidote):
- কিছু বিষের জন্য বিশেষ এন্টিডোট (Antidote) থাকতে পারে, যা বিষের কার্যকারিতা নষ্ট করে। যেমন, সায়ানাইডের জন্য সোডিয়াম নাইট্রেট অথবা অ্যাসিড বিষের জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসা।
- ভূতত্ত্ব বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা:
- বিষের গ্যাস বা বাষ্প শ্বাসে ঢুকলে, আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত বাতাসে বা খোলা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। এই ধরনের সমস্যা হলে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে বা হাসপাতালে দ্রুত পৌঁছাতে হবে।
- প্রতিরোধ:
- বিষাক্ত পদার্থ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত।
- খাদ্য, পানীয় বা অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
- জীবাণুনাশক, সাফাই দ্রব্য, রাসায়নিক, বা অন্যান্য বিপজ্জনক পদার্থ সঠিকভাবে ব্যবহার এবং সংরক্ষণ করা উচিত।
- পানির পরিমাণ বৃদ্ধি:
- যদি বিষ খাওয়ার পর অতিরিক্ত ডিহাইড্রেশন (শরীর থেকে পানি চলে যাওয়া) দেখা দেয়, তবে নিয়মিত পানি পান করা উচিত। তবে, কিছু বিষের ক্ষেত্রে (যেমন, তেল বা রাসায়নিক বিষ) পানি পান করা নিরুৎসাহিত হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ:
বিষের ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা ভিন্ন হবে, তাই প্রথমে বিষের সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে এবং তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো বিষাক্ত পদার্থ খাওয়া হয়েছে, তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে বা স্থানীয় জরুরি সেবা (হেল্পলাইন) যোগাযোগ করতে হবে।