Best Homeo Doctor

বিলম্বে দাঁত ওঠা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

বিলম্বে দাঁত ওঠা (Delayed Tooth Eruption) এমন একটি অবস্থা, যেখানে শিশুর দাঁত স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দেরিতে ওঠে। এটি সাধারণত ৬ মাস থেকে ১২ মাসের মধ্যে শুরু হওয়া শিশুর প্রথম দাঁত (দুধ দাঁত) ওঠার সময়ের ক্ষেত্রে ঘটে। দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া যদি খুব দেরিতে শুরু হয় বা অতিরিক্ত বিলম্বিত হয়, তাহলে এটি বিলম্বে দাঁত ওঠা বলে পরিচিত।

কারণ:

বিলম্বে দাঁত ওঠার বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে, যেমন:

  1. জিনগত বা পারিবারিক ইতিহাস:
    • অনেক সময় শিশুদের দাঁত ওঠার সময় তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দাঁত ওঠার সময়ের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। অর্থাৎ, যদি বাবা-মা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের দাঁত ওঠার সময় বিলম্বিত হয়ে থাকে, তবে সেই শিশুদের ক্ষেত্রেও বিলম্বে দাঁত ওঠার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
  2. পুষ্টির অভাব (Nutritional Deficiency):
    • পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব (বিশেষ করে ভিটামিন D, ক্যালসিয়াম, এবং ফসফরাস) দাঁতের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। শিশুদের সঠিক পুষ্টি না পাওয়ার কারণে দাঁত ওঠার সময় বিলম্বিত হতে পারে।
  3. হরমোনাল সমস্যা:
    • কোনো ধরনের হরমোনাল সমস্যা, যেমন থাইরয়েড সমস্যার কারণে দাঁতের ওঠা বিলম্বিত হতে পারে।
  4. জন্মগত কারণ (Congenital Conditions):
    • কিছু জন্মগত সমস্যা, যেমন এমিনোসেটিক ডিস্ট্রোফি বা অন্যান্য জেনেটিক অবস্থার কারণে দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে।
  5. শারীরিক বা স্বাস্থ্যগত সমস্যা:
    • কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যেমন রক্তস্বল্পতা (Anemia) বা অবসন্নতা (Hypothyroidism), দাঁতের ওঠা বিলম্বিত করতে পারে।
  6. গর্ভাবস্থার সমস্যা:
    • গর্ভাবস্থার প্রথম বা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের কোনো ধরনের সমস্যা, যেমন মা যদি তীব্র রোগে আক্রান্ত হন বা টক্সিন ব্যবহারের কারণে শিশুর দাঁতের উন্নতি ব্যাহত হয়, তবে দাঁত ওঠাতে বিলম্ব হতে পারে।
  7. দ্বৈত বা অতিরিক্ত দাঁত (Supernumerary teeth):
    • অতিরিক্ত দাঁত বা একাধিক দাঁতের কারণে দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে দাঁত ওঠার সময় বিলম্বিত হয়।

লক্ষণ:

বিলম্বে দাঁত ওঠার কিছু লক্ষণ হতে পারে:

  1. দাঁতের না ওঠা:
    • ১২ মাস বয়স পর্যন্ত শিশু যদি কোনো দাঁত না ওঠে, তবে এটি একটি লক্ষণ হতে পারে যে দাঁত ওঠায় বিলম্ব হচ্ছে।
  2. শিশুর মুখে কোনো পরিবর্তন নেই:
    • দাঁত ওঠার জন্য সাধারণত শিশুর মুখে সামান্য ফুলে ওঠা বা অস্বস্তি সৃষ্টি হয়, কিন্তু বিলম্বে দাঁত ওঠার ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনটি দেখা যায় না।
  3. স্বাভাবিক ক্রমে দাঁত উঠছে না:
    • দাঁতগুলো যদি সাধারণ ক্রমে না ওঠে, যেমন প্রথম দাঁত বা কেন্দ্রীয় দাঁত প্রথমে না উঠে, তবে এটি বিলম্বিত দাঁতের একটি লক্ষণ হতে পারে।
  4. শিশুর দেহে অন্যান্য শারীরিক লক্ষণ:
    • যদি শিশুর বিকাশে অন্যান্য বিলম্ব থাকে (যেমন, বসা, হাঁটা বা কথা বলা), তবে দাঁত ওঠাতেও বিলম্ব হতে পারে।

প্রতিকার:

বিলম্বে দাঁত ওঠা সাধারণত একটি স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে, তবে কখনো কখনো এটি চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন হতে পারে। এর জন্য কিছু প্রতিকার এবং পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

  1. সঠিক পুষ্টি:
    • শিশুকে সঠিক পুষ্টি দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন D, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার শিশুদের দাঁত উঠতে সহায়তা করতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, যেমন দুধ, মাছ, ডিম, শাকসবজি, ফল, এবং সাইট্রাস ফল শিশুদের জন্য উপকারী।
  2. ডেন্টিস্টের পরামর্শ:
    • যদি ১২ মাসের মধ্যে দাঁত ওঠার কোনো লক্ষণ দেখা না দেয়, তবে ডেন্টিস্ট বা পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তারা শিশুর দাঁতের উন্নতি এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারেন।
  3. দাঁতের প্রতি যত্ন:
    • শিশুর দাঁতের যত্ন নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। দাঁত ওঠার আগেই শিশুকে ভালোভাবে মৌখিক স্বাস্থ্য শেখানো উচিত, যেমন মাড়ি পরিষ্কার রাখা, এমনকি দাঁত ওঠার পরও নিয়মিত ব্রাশ করা।
  4. শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা:
    • যদি কোনো শারীরিক সমস্যা (যেমন, থাইরয়েড, রক্তস্বল্পতা, বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা) থাকার কারণে দাঁত ওঠায় বিলম্ব হয়, তাহলে সেগুলি চিকিৎসা করা জরুরি। এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  5. ধৈর্য্য পর্যবেক্ষণ:
    • যদি কোনো বড় সমস্যা না থাকে, তবে কিছুটা ধৈর্য ধারণ করা প্রয়োজন। অনেক সময় দাঁত ওঠার সময় স্বাভাবিকভাবে বিলম্বিত হতে পারে এবং কিছুতেই এটি স্বাভাবিকভাবে উন্নতি হয়।

কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে:

  1. যদি ১২-১৮ মাস বয়সে দাঁত ওঠা শুরু না হয়।
  2. যদি দাঁতের ওঠায় খুব বেশি বিলম্ব হয় বা কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
  3. যদি দাঁত ওঠা নিয়ে উদ্বেগ থাকে বা কোনো গম্ভীর শারীরিক লক্ষণ থাকে।

উপসংহার:

বিলম্বে দাঁত ওঠা একটি সাধারণ বিষয় হতে পারে, তবে কখনো কখনো এটি শারীরিক বা পুষ্টিগত সমস্যার কারণে হতে পারে। যথাযথ পরামর্শ ও চিকিৎসা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে শিশুর স্বাভাবিক দাঁতের উন্নতি ঘটে এবং ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা না হয়।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *