Best Homeo Doctor

বিছানায় প্রস্রাব করা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

বিছানায় প্রস্রাব করা (Bedwetting) বা এনকিউরেসিস (Enuresis) হলো একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে ব্যক্তি ঘুমের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রস্রাব করে ফেলে। এটি শিশুদের মধ্যে সাধারণ হলেও, বড়দের মধ্যে এটি একটি সমস্যা হতে পারে এবং এটি নানা কারণে হতে পারে।

বিছানায় প্রস্রাব করার কারণ:

  1. শিশুদের মধ্যে স্বাভাবিক উন্নয়ন: ছোট শিশুদের মূত্রাশয়ের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তাদের মাঝে বিছানায় প্রস্রাব করার প্রবণতা থাকে। এই বয়সে এটি সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সে দেখা যায় এবং সাধারণত সময়ের সাথে সাথে এটি স্বাভাবিকভাবেই ঠিক হয়ে যায়।
  2. জীবনযাত্রার চাপ: মানসিক চাপ বা উদ্বেগ, যেমন স্কুলে সমস্যা বা পরিবারে পরিবর্তন, শিশুদের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করার কারণ হতে পারে। বড়দের মধ্যে এটি চাপের কারণে ঘটতে পারে, যেমন কাজের চাপ বা সম্পর্কের সমস্যা।
  3. মূত্রাশয়ের সংক্রমণ বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা: মূত্রাশয়ে সংক্রমণ, যেমন ইউটিআই (Urinary Tract Infection), কিডনি সমস্যা বা হরমোনের অস্বাভাবিকতা (যেমন, অ্যান্টি-ডিউরেটিক হরমোনের অভাব) বিছানায় প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।
  4. মূত্রাশয়ের দুর্বলতা: মূত্রাশয়ের পেশি দুর্বল হওয়া বা অপর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ বিছানায় প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।
  5. নিউরোলজিক্যাল সমস্যা: স্নায়ু সমস্যার কারণে মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে মস্তিষ্ক এবং মূত্রাশয়ের মধ্যে সঠিক যোগাযোগ না হলে।
  6. হরমোনাল পরিবর্তন: কিছু হরমোন যেমন অ্যান্টি-ডিউরেটিক হরমোনের অভাব, যা মূত্রের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, বিছানায় প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।
  7. জীবনযাত্রার অনিয়মিততা: অতিরিক্ত তরল বা কফি, চা, বা অন্য ক্যাফিনযুক্ত পানীয়ের ব্যবহার বিছানায় প্রস্রাবের প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
  8. জন্মগত কারণে: কিছু ক্ষেত্রে, শিশু জন্মগতভাবে মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রণে সমস্যা পেতে পারে, যেমন স্নায়ু বা শারীরিক সমস্যা।

বিছানায় প্রস্রাবের লক্ষণসমূহ:

  1. নিদ্রার মধ্যে প্রস্রাব: এটি সাধারণত গভীর ঘুমের সময় ঘটে, এবং ব্যক্তি জাগ্রত অবস্থায় এটি অনুভব করতে পারেন না।
  2. প্রস্রাবের পর অনুভূতি: বিছানায় প্রস্রাবের পর অস্বস্তি বা লজ্জা অনুভূত হতে পারে।
  3. ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা: শিশুরা বা বড়রা যদি বিছানায় প্রস্রাব করে, তবে এটি তাদের শারীরিক বা মানসিক অবস্থার পরিবর্তন বা চাপের প্রভাবে হতে পারে।
  4. বিশ্রামকালীন প্রস্রাব: রাতে ঘুমানোর সময় বা বিশ্রাম নিতে গিয়ে প্রস্রাব ঘটে থাকলে এটি সম্ভবত নিয়ন্ত্রণের অভাব বা অতিরিক্ত তরল পানির কারণে হতে পারে।

বিছানায় প্রস্রাব করার প্রতিকার:

  1. হরমোন থেরাপি: যদি হরমোনের অভাবের কারণে বিছানায় প্রস্রাব হয়, তবে চিকিৎসক অ্যান্টি-ডিউরেটিক হরমোন (যেমন ডেসমোপ্রেসিন) দিয়ে চিকিৎসা দিতে পারেন, যা মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  2. মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রণ প্রশিক্ষণ: কেগেল ব্যায়াম বা মূত্রাশয়ের পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম করা যেতে পারে, যা প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
  3. মনোযোগী শিথিলতা: শিশুদের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করার পেছনে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থাকতে পারে। তাদের আরামদায়ক পরিবেশে রাখলে এবং সঠিক মনোবল তৈরি করলে সমস্যা কিছুটা কমে যেতে পারে।
  4. বিছানায় প্রস্রাবের জন্য ট্রেনিং: অনেক শিশুর জন্য কিছু বিশেষ পদ্ধতি যেমন বিছানায় প্রস্রাব না করার জন্য পদ্ধতিগত ট্রেনিং দেয়া যেতে পারে, যেমন সঠিক সময়ে প্রস্রাব করা, বিছানায় যাওয়ার আগে মনে করিয়ে দেয়া।
  5. পানি কম পান করা: রাতে অতিরিক্ত তরল পান করা কমিয়ে দেওয়া উচিত। বিশেষ করে সাদা পানি বা চা/কফির মতো ক্যাফিনযুক্ত পানীয় কম পান করা উচিত।
  6. ভালো খাদ্যাভ্যাস: খাওয়ার সময় প্রোটিন বা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়ার পাশাপাশি খনিজ এবং লবণের পরিমাণ কমানো দরকার, যা মূত্রাশয়ের জন্য উপকারী।
  7. এনক্রিপশন ম্যানেজমেন্ট: ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে তাদের মধ্যে যদি শারীরিক বা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা থাকে, তবে সঠিক চিকিৎসা বা থেরাপি শুরু করা যেতে পারে।
  8. বিশেষ উপকরণ ব্যবহার: বিশেষভাবে তৈরি করা বিছানার প্যাড বা ডায়পার শিশুদের জন্য একটি ভালো সমাধান হতে পারে যখন তারা বিছানায় প্রস্রাব করে।

বিছানায় প্রস্রাব শিশুর জন্য একসময় স্বাভাবিক হতে পারে, তবে এটি যদি কোনো বড়দের মধ্যে হয়, বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *