বাথাযুক্ত ঋতুস্রাব (Menstrual Discharge with Clots) বলতে বোঝানো হয়, যখন একজন মহিলার ঋতুস্রাবের সাথে রক্তের অল্প বা বড়ো বড়ো আঁটসাঁট রক্ত জমাট (clots) বের হয়। এটি স্বাভাবিক ঋতুস্রাবের একটি পরিবর্তিত রূপ এবং কিছু ক্ষেত্রে এটি ঋতুস্রাবের সময়ে রক্ত প্রবাহের পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা নির্দেশ করে।
বাথাযুক্ত ঋতুস্রাবের কারণ:
বাথাযুক্ত ঋতুস্রাবের জন্য বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, যেমন:
- হরমোনের অস্বাভাবিকতা: যদি একজন মহিলার শরীরে হরমোনের ভারসাম্য হ্রাস পায়, যেমন প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের অভাব, তাহলে ঋতুস্রাবের সময় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS): এই রোগে, ওভারি থেকে ডিম্বাণু মুক্ত হতে পারে না এবং হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, ফলে ঋতুস্রাবের সময় রক্ত জমাট হয়ে থাকতে পারে।
- গর্ভাবস্থা বা গর্ভপাত: গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায়ে বা গর্ভপাতের পরে রক্ত জমাট হতে পারে। এটি অনেক সময় “গর্ভপাত” বা “গর্ভধারণের অকাল শেষ” এর একটি লক্ষণ।
- থাইরয়েড সমস্যা: হাইপোথাইরয়ডিজম বা হাইপারথাইরয়ডিজমের কারণে শারীরিক পরিবর্তন হতে পারে, যার ফলে ঋতুস্রাবের সময় জমাট রক্ত দেখা দিতে পারে।
- এন্ডোমেট্রিওসিস: এই অবস্থায়, জরায়ুর অভ্যন্তরীণ স্তর (endometrium) জরায়ুর বাইরে বৃদ্ধি পায়, যা মাসিকের সময় অস্বাভাবিক রক্তস্রাবের সাথে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।
- ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড: জরায়ুর দেয়ালে ফাইব্রয়েড বা টিউমার থাকতে পারে, যার কারণে ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।
- বিরক্তিকর শারীরিক সমস্যা: শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় শারীরিক চাপ বা অসুস্থতা, যেমন অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অথবা অন্য কোনো রোগের কারণে রক্ত জমাট হতে পারে।
বাথাযুক্ত ঋতুস্রাবের লক্ষণ:
- অতিরিক্ত রক্তপাত: ঋতুস্রাবের সময় সাধারণের চেয়ে বেশি রক্তপাত হতে পারে, যা রক্ত জমাটের সাথে যুক্ত।
- অলংকৃত রক্ত জমাট: ঋতুস্রাবের সময় বড় বা ছোট আকারের রক্ত জমাট বের হতে পারে, যা দেখতে অনেকটা আঁটসাঁট বা গা dark ় হতে পারে।
- ব্যথা: পেট বা তলপেটের ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব হতে পারে, যা সাধারণত ঋতুস্রাবের সময় দেখা দেয়।
- ক্লটের আকার ও পরিমাণ: ক্লটের আকার যদি বেশ বড় হয় অথবা খুব বেশি পরিমাণে ক্লট বের হয়, এটি সাধারণত অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা অন্য কোনো সমস্যা নির্দেশ করে।
বাথাযুক্ত ঋতুস্রাবের প্রতিকার:
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পানি, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম ঋতুস্রাবের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- হরমোন থেরাপি: হরমোনের ভারসাম্য ঠিক করতে চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ বা থেরাপি নেওয়া যেতে পারে।
- ঔষধের ব্যবহার: থাইরয়েড বা অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ ব্যবহার করা উচিত। যেমন, PCOS বা এন্ডোমেট্রিওসিসের জন্য চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে।
- ডায়েট এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই সঠিক ডায়েট ও শারীরিক ব্যায়াম করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ: যদি বাথাযুক্ত ঋতুস্রাব দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে বা খুব বেশি অস্বস্তি সৃষ্টি করে, তবে একজন গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
এভাবে, বাথাযুক্ত ঋতুস্রাব সাধারণত কোন সমস্যা বা শারীরিক অবস্থার কারণে হতে পারে, এবং এটি চিকিৎসা বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।