Best Homeo Doctor

বাত গেটেবাত সন্ধিবাত কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

বাতগেটেবাতসন্ধিবাত (Osteoarthritis) বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস হল একটি সাধারণ আর্থ্রাইটিসের ধরন, যেখানে জয়েন্ট (অস্থি ও অস্থির সংযোগস্থল) গুলিতে ক্ষয় এবং প্রদাহ দেখা দেয়। এটি সবচেয়ে বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়, বিশেষত মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে।

কারণ:

বাতগেটেবাতসন্ধিবাতের প্রধান কারণগুলি হল:

  1. বয়স:
    • বয়স বাড়ার সাথে সাথে জয়েন্টের কার্টিলেজ ক্ষয় হতে থাকে, যা বাতগেটেবাতসন্ধিবাতের মূল কারণ। বয়স বৃদ্ধির সাথে জয়েন্টের কর্মক্ষমতা কমে যায়।
  2. জয়েন্টের অতিরিক্ত ব্যবহার:
    • অতিরিক্ত বা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক পরিশ্রম, বিশেষত হালকা বা ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে জয়েন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যার ফলে জয়েন্টের ক্ষয় হয়ে যায়।
  3. প্রতিবন্ধকতা বা আঘাত:
    • জয়েন্টে পূর্বে আঘাত পেলে বা বিভিন্ন আঘাতের কারণে জয়েন্টের কাঠামো নষ্ট হয়ে বাতগেটেবাতসন্ধিবাত হতে পারে।
  4. জিনগত বা পারিবারিক ইতিহাস:
    • যদি পরিবারে কেউ বাতগেটেবাতসন্ধিবাত থাকে, তবে আপনিও এটি হতে পারেন। এটি একটি জিনগত বা বংশগত রোগ হতে পারে।
  5. ওজন বেশি হওয়া:
    • অতিরিক্ত শরীরের ওজন বা স্থূলতা (অতিরিক্ত মেদ) জয়েন্টগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করে, বিশেষ করে হাঁটু, কনুই এবং পিঠের জয়েন্টে।
  6. হরমোনের পরিবর্তন:
    • মহিলাদের মধ্যে মেনোপজ (মাসিক বন্ধ) পরবর্তী হরমোনের পরিবর্তনের কারণে জয়েন্টের ক্ষয় হতে পারে।
  7. দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বা প্রদাহজনিত রোগ:
    • কিছু প্রদাহজনিত রোগ (যেমন রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস) বা অন্যান্য রোগের কারণে জয়েন্টের ক্ষয় হতে পারে।

লক্ষণ:

বাতগেটেবাতসন্ধিবাতের সাধারণ লক্ষণগুলি হল:

  1. যন্ত্রণার অনুভূতি:
    • জয়েন্টে ব্যথা বা যন্ত্রণা অনুভূতি, বিশেষত শারীরিক কাজ বা চলাফেরার সময়। এটি সাধারণত দিনে বেশি হয়।
  2. জয়েন্টের ফুলে যাওয়া:
    • ক্ষতিগ্রস্ত জয়েন্টটি ফুলে যেতে পারে এবং এটি টেনশনের কারণে ব্যথা বাড়াতে পারে।
  3. গতি সীমিত হওয়া (মোবিলিটি সীমাবদ্ধতা):
    • জয়েন্টের মোবিলিটি কমে যেতে পারে, অর্থাৎ কিছু কিছু পদক্ষেপে বা চলাফেরায় অস্বস্তি বা কষ্ট অনুভূত হতে পারে।
  4. গিঁটের শব্দ শোনা (ক্র্যাকিং সাউন্ড):
    • জয়েন্টে গিঁটের শব্দ শোনা যেতে পারে (ক্র্যাকিং সাউন্ড), যখন আপনি চলাচল করেন বা জয়েন্টে কোনো চাপ দেন।
  5. পেশীর দুর্বলতা:
    • দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং সীমিত গতি কারণে জয়েন্টের আশপাশের পেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
  6. থাকা বা বসে থাকার পর স্থিতিস্থাপকতা বা শক্ত হওয়া:
    • দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরে, বিশেষ করে সকালে উঠে, জয়েন্টে শক্ততা বা শক্ত হয়ে যেতে পারে।

প্রতিকার:

বাতগেটেবাতসন্ধিবাতের প্রতিকার বা চিকিৎসা বিভিন্ন উপায়ে হতে পারে:

  1. ওষুধ:
    • অ্যানালজেসিকস (যেমন প্যারাসিটামল) ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
    • এন্টিইনফ্লেমেটরি ওষুধ (যেমন ইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোকসেন) প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
    • কোর্টিকোস্টেরয়েড ইনজেকশন (যদি ব্যথা গুরুতর হয়) জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়।
    • হাইয়ালুরোনিক অ্যাসিড ইনজেকশন জয়েন্টের তরল বৃদ্ধি করে এবং চলাচলের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  2. ফিজিক্যাল থেরাপি:
    • ফিজিক্যাল থেরাপি জয়েন্টের গতি বৃদ্ধি করতে এবং পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটি ব্যথা হ্রাস করতে এবং চলাফেরায় সুবিধা দিতে সাহায্য করতে পারে।
  3. ওজন কমানো:
    • শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমালে জয়েন্টগুলির উপর চাপ কমে যায় এবং ব্যথা কমে। বিশেষ করে হাঁটু এবং কোমরের জয়েন্টের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  4. প্রতিরোধমূলক ব্যায়াম:
    • স্ট্রেচিং, অক্সিডাইজিং এবং মোটর ফাংশন ব্যায়াম জয়েন্টের নমনীয়তা এবং গতি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ইয়োগা বা পানির ব্যায়াম (পুল থেরাপি) করতে পারেন।
  5. হট কোল্ড থেরাপি:
    • গরম পানি বা বরফ দিয়ে ব্যথা বা প্রদাহ কমাতে সাহায্য হতে পারে। হট কম্প্রেস অথবা কোল্ড কম্প্রেস ব্যবহার করা যেতে পারে।
  6. সহজ ব্যথানাশক সমাধান:
    • কিছু মানুষ প্রাকৃতিক উপাদান যেমন অ্যালো ভেরা, আদা, মধু, কুচি বা ঘরোয়া প্রাকৃতিক সলিউশন ব্যবহার করে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমানোর চেষ্টা করেন।
  7. অপারেশন (যদি প্রয়োজন হয়):
    • যদি বাতগেটেবাতসন্ধিবাত অত্যন্ত গুরুতর হয়ে যায় এবং অন্যান্য চিকিৎসা কার্যকর না হয়, তবে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি বা আর্থ্রোপ্লাস্টি করা হতে পারে।
  8. জয়েন্ট সাপোর্ট এবং অর্গানিক প্যাডস:
    • বিভিন্ন সাপোর্ট প্যাড, বুট, বা সহায়ক উপকরণ (যেমন হাঁটু বা কোমর সাপোর্ট) ব্যবহার করে জয়েন্টের চাপ কমানো এবং চলাফেরায় সহায়তা করা যেতে পারে।

প্রতিরোধ:

  1. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
    • সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম রাখা উচিত, যাতে জয়েন্টের চাপ কমে এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  2. সতর্কতার সঙ্গে কাজ করা:
    • অতিরিক্ত ভারী কাজ থেকে বিরত থাকা এবং চলাফেরা বা শারীরিক পরিশ্রমে সাবধানে থাকা।
  3. সঠিক বসা এবং চলা:
    • সঠিক পোজিশন বা পদক্ষেপ নেয়া, বিশেষত বসা বা দাঁড়ানোর সময়, যাতে জয়েন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
  4. বয়সের সাথে সাথে নিয়মিত চেকআপ:
    • বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং জয়েন্টের সুস্থতা পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ।

বাতগেটেবাতসন্ধিবাত সাধারণত একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, তবে সঠিক চিকিৎসা, জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন, এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করলে অনেকাংশে ব্যথা কমানো এবং চলাফেরায় সুবিধা পাওয়া সম্ভব।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *