Best Homeo Doctor

বসন্ত কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

বসন্ত (Chickenpox) হলো একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ, যা সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে বয়স্ক ব্যক্তিরাও এতে আক্রান্ত হতে পারে। এটি ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং এর মাধ্যমে শরীরে গায়ে ফুসকুড়ি, জ্বর, এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়।

কারণ:

বসন্তের প্রধান কারণ হল ভ্যারিসেলা জোস্টার ভাইরাস (Varicella Zoster Virus), যা শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে ছড়ায়। ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির শ্লেষ্মা বা ফুসকুড়ির মধ্যে থেকে ছড়ায় এবং সহজেই একটি সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে।

  • বাতাসে ভাইরাসের মাধ্যমে: ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচি থেকে বাতাসে ছড়াতে পারে।
  • শরীরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ: আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসকুড়ি বা মলমূত্রের সাথে সরাসরি যোগাযোগ হলে ভাইরাসটি সংক্রামিত হতে পারে।

লক্ষণ:

বসন্তের লক্ষণ সাধারণত ভাইরাস সংক্রমণের ১০-২১ দিন পর দেখা দিতে শুরু করে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. জ্বর:
    • সাধারণত প্রথমে জ্বর আসে, যা বসন্তের এক প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
  2. গায়ে ফুসকুড়ি বা র্যাশ:
    • একে একে শরীরে ছোট ছোট ফুসকুড়ি বা র্যাশ ওঠে, যা প্রথমে লাল হয়ে পরে পরিণত হয় পানি ভর্তি ফুসকুড়িতে। এই ফুসকুড়ি সাধারণত শরীরের উপরের অংশে এবং মুখে প্রথমে দেখা দেয়, পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
  3. চুলকানি:
    • ফুসকুড়ি বা র্যাশ চুলকাতে পারে, যা রোগীকে অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
  4. শরীরের দুর্বলতা বা ক্লান্তি:
    • ফুসকুড়ি ও জ্বরের কারণে শরীর দুর্বল হতে পারে।
  5. মাথাব্যথা এবং ব্যথা:
    • কিছু রোগী মাথাব্যথা এবং শরীরের ব্যথার অনুভূতি করতে পারে।
  6. রোগীটির খিদে কমে যাওয়া:
    • খাবার খেতে ইচ্ছা কমে যেতে পারে।
  7. এনার্জি শারীরিক শক্তি হ্রাস:
    • রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে এনার্জি ও শারীরিক শক্তি কম হতে পারে।

প্রতিকার:

বসন্তের জন্য বর্তমানে কোনো বিশেষ অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই, তবে কিছু সাধারণ প্রতিকার রয়েছে যা লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে এবং রোগীকে আরাম দিতে পারে:

  1. জ্বর ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার:
    • জ্বর বা শরীরব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল (অথবা অন্য কোনো চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী) ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, অ্যাসপিরিন কোনো অবস্থাতেই ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এটি শিশুদের মধ্যে Reye’s Syndrome (একটি গুরুতর রোগ) সৃষ্টি করতে পারে।
  2. ফুসকুড়ি ঠান্ডা রাখার জন্য ঠান্ডা সেঁক ব্যবহার:
    • ফুসকুড়ির ওপর ঠান্ডা সেঁক দিলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায় এবং চুলকানি কমে যায়।
  3. চুলকানি কমাতে ওষুধ:
    • ফুসকুড়ি ও চুলকানি কমানোর জন্য ক্যালামাইন লোশন বা অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
  4. বিষণ্ণতা বা অস্বস্তি কমানোর জন্য হালকা পোশাক পরা:
    • র্যাশের উপর চাপ না পড়তে এবং চুলকানি কমাতে হালকা এবং নরম পোশাক পরা উচিত।
  5. গরম পানিতে গোসল না করা:
    • গরম পানিতে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এটি ফুসকুড়ি আরও খারাপ করতে পারে। ঠান্ডা বা তাজা পানিতে গোসল করা ভালো।
  6. অতি ঘন ঘন হাত ধোয়া:
    • রোগীকে তার হাত নিয়মিত ধোয়ার পরামর্শ দিতে হবে যাতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে না পড়ে।
  7. বিশ্রাম হাইড্রেশন (পানি পান করা):
    • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের ডিহাইড্রেশন রোধ করতে সাহায্য করবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে।
  8. বসন্তের টিকা:
    • বসন্তের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনেশন (Varicella Vaccine) একটি প্রক্রিয়া, যা শিশুরা সাধারণত ১২-১৫ মাস বয়সে এবং ৪-৬ বছর বয়সে নেয়। এটি বসন্তের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ভাইরাসটির তীব্রতা কমাতে সহায়ক।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

যদি রোগী বয়স্ক হয় বা কোনো অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগ (যেমন, অসুস্থ ইমিউন সিস্টেম) থাকে, অথবা বসন্তের সঙ্গে সোরা বা রক্তপাত যুক্ত থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বসন্তের কিছু জটিলতা যেমন নিউমোনিয়া, ব্রেইন ইনফেকশন বা ব্লাড ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে, যা গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

উপসংহার:

বসন্ত সাধারণত একটি সংক্রামক রোগ, তবে এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হালকা হতে দেখা যায় এবং চিকিত্সা ছাড়াও ভালো হয়ে যায়। তবে, সঠিক প্রতিকার এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে এই রোগ দ্রুত এবং কম সমস্যা সহ মোকাবিলা করা সম্ভব

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *