Best Homeo Doctor

বয়োব্রণ কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

বয়োব্রণ (Acne or Pimples) হলো ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা, যা মুখ, পিঠ, কাঁধ, এবং অন্যান্য অংশে ত্বকের তেলগ্রন্থির (sebaceous glands) ব্যাঘাতের ফলে ঘটে। এটি সাধারণত কৈশোর বয়সে বা বয়ঃসন্ধির সময় শুরু হয়, তবে অনেকের ক্ষেত্রে এটি পরিণত বয়সেও দেখা যেতে পারে। ব্রণ মূলত ত্বকে চুলকানি, সাদা দাগ বা সিস্টের (cyst) আকারে দেখা যায় এবং ত্বককে পুড়ে বা লাল করে দিতে পারে।

বয়োব্রণের কারণ:

  1. হরমোনাল পরিবর্তন: বয়োব্রণ সাধারণত হরমোনের কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির সময়, পুরুষ হরমোন (এন্ড্রোজেন) বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ত্বকে তেল উৎপাদন বেড়ে যায়, যা ত্বকের পোরস বন্ধ করে দিয়ে ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে।
  2. তেল গ্রন্থির সমস্যা: ত্বকের তেল গ্রন্থি (sebaceous glands) অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করলে, এই তেল ত্বকের পোরস বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া জমে গিয়ে ব্রণ তৈরি হয়।
  3. ব্যাকটেরিয়া: ত্বকের উপর থাকা ব্যাকটেরিয়া, বিশেষ করে প্রোপিওনিব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনে (Propionibacterium acnes), ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে। যখন ত্বকের পোরস বন্ধ হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত তেল জমে, তখন এই ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে।
  4. স্ট্রেস: মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরের হরমোনের পরিবর্তন ঘটিয়ে ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে।
  5. খাদ্যাভ্যাস: খুব বেশি তেলযুক্ত, চিনি বা ডেইরি পণ্য (যেমন দুধ, পনির) খাওয়ার কারণে ত্বকের পোরস ব্লক হতে পারে এবং ব্রণ তৈরি হতে পারে।
  6. পরিস্কার না রাখা: ত্বক পরিষ্কার না রাখলে বা কম্পিউটার, মোবাইল ফোন বা ফোনের মাধ্যমে পদ্ধতিগতভাবে মুখে তেল বা ধূলাবালি জমে গেলে, ত্বক আক্রমণ করতে পারে এবং ব্রণ সৃষ্টি হয়।
  7. দীর্ঘস্থায়ী ওষুধ ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু মেডিকেশন, বিশেষ করে স্টেরয়েড বা অ্যানabolic স্টেরয়েড ব্যবহার করার ফলে ব্রণ হতে পারে।

বয়োব্রণের লক্ষণ:

  1. মুখে ব্রণ: মুখের ত্বক, বিশেষ করে মনের, নাকের পাশে, বা থুতনির নিচে এক বা একাধিক ছোট দাগ বা সিস্ট (pimple) দেখা যায়। এই দাগগুলি লালচে বা সাদা হতে পারে।
  2. পিঠে বা কাঁধে ব্রণ: অনেক সময় পিঠ, কাঁধ বা বুকেও ব্রণ দেখা দেয়, যা বেশ ব্যথাযুক্ত হতে পারে।
  3. ব্রণের আকার: ব্রণ সাধারণত বিভিন্ন আকারে হতে পারে — সাদা মুঠি (whiteheads), কালো মুঠি (blackheads), ফোলা পিম্পলস বা সিস্ট (cysts)।
  4. চুলকানি বা ব্যথা: কিছু ব্রণ তীব্রভাবে চুলকাতে পারে অথবা ব্যথাযুক্ত হতে পারে। সিস্টের আকারে ব্রণ হলে তা আরও যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।
  5. লালচে বা স্ফীত ত্বক: ব্রণ সাধারণত ত্বককে লালচে করে দেয় এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। কিছু ব্রণ ফোলা বা স্ফীত হতে পারে।
  6. দাগ বা পিগমেন্টেশন: ব্রণ শুকানোর পর কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে দাগ বা কালো দাগ থাকতে পারে যা কিছু সময়ের মধ্যে চলে যায়, তবে অনেক সময় স্থায়ী দাগও রেখে যায়।

বয়োব্রণের প্রতিকার:

  1. তেলমুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার: ব্রণ নিরাময়ের জন্য তেলমুক্ত এবং অ্যাকনে সোপ বা ক্লিনজার ব্যবহার করা জরুরি। এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল এবং ধুলাবালি পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।
  2. অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্রিম: ব্রণ চিকিত্সার জন্য বেঞ্জোয়াল পারক্সাইড (Benzoyl Peroxide) বা সালিসিলিক অ্যাসিড (Salicylic Acid) ভিত্তিক ক্রিম বা গেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলি ত্বকের ব্যাকটেরিয়া হত্যা করে এবং পোরসের ভিতরে জমে থাকা তেল বের করতে সাহায্য করে।
  3. রেটিনয়েড ক্রিম: রেটিনয়েড (Retinoids) যেমন রেটিন (Retin-A) বা অ্যাডাপেলিন (Adapalene) ত্বকের কোষের পুনর্নবীকরণে সাহায্য করে এবং ব্রণ কমাতে কার্যকর।
  4. অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ: কখনো কখনো ত্বকের ইনফেকশন কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শে অরাল অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন ডক্সিসাইক্লিন বা টেট্রাসাইক্লিন) ব্যবহার করা যেতে পারে।
  5. অ্যাম্বার বা লেজার থেরাপি: কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষত গুরুতর ব্রণের ক্ষেত্রে, লেজার থেরাপি বা ব্লু লাইট থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে যা ত্বকের ব্যাকটেরিয়া কমাতে এবং ব্রণ নিরাময়ে সাহায্য করে।
  6. অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ক্রিম: ত্বকের প্রদাহ কমাতে হাইড্রোকোর্টিসোন ক্রিম বা অন্য কোনো অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এটি ডাক্তারি পরামর্শে হতে হবে।
  7. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
    • স্বাস্থ্যকর খাদ্য: ব্রণ কমানোর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য যেমন শাকসবজি, ফলমূল এবং স্বাস্থ্যকর প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। খুব বেশি তেলযুক্ত বা চিনিযুক্ত খাবার ব্রণ বৃদ্ধি করতে পারে।
    • প্রচুর পানি পান: শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে প্রচুর পানি পান করুন, যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
    • নিয়মিত স্নান: ঘাম বা ময়লা জমা হয়ে ত্বকে ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে, তাই নিয়মিত স্নান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  8. ফেস মাস্ক ব্যবহার: চারকোল মাস্ক, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড মাস্ক, বা মধু দারুচিনি মাস্ক ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এগুলি ব্যবহার করার আগে ত্বকের পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
  9. মানসিক চাপ কমানো: স্ট্রেস বা মানসিক চাপ ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে, তাই যোগব্যায়াম বা প্রাকৃতিক উপায়ে চাপ কমানো দরকার।

বয়োব্রণ প্রতিরোধ:

  1. মুখ পরিষ্কার রাখা: নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখুন, বিশেষ করে মেকআপ পরলে তা পরিষ্কারভাবে তুলে ফেলুন।
  2. অতিরিক্ত তেল থেকে বিরত থাকা: ত্বকে অতিরিক্ত তেল জমা না হওয়ার জন্য তেলমুক্ত সর্ফ বা ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
  3. মুখে হাত না দেওয়া: ব্রণ হওয়ার স্থান বা মুখে অযথা হাত না দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে ব্যাকটেরিয়া ও ময়লা ত্বকে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
  4. পোশাক পরিষ্কার রাখা: বিশেষ করে কাঁধ, পিঠে ব্রণ হয়ে থাকলে পোশাক নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন এবং ঘাম জমতে না দিন।
  5. জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তন: স্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শারীরিক কার্যকলাপ ব্রণ প্রতিরোধে সহায়ক।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:

  • যদি ব্রণ খুব বেশি হয়ে থাকে এবং তা গায়ের বা মুখের ত্বকে গুরুতর আঘাত সৃষ্টি করতে থাকে।
  • যদি ব্রণ থেকে দাগ বা তীব্র পিগমেন্টেশন (কালো দাগ) সৃষ্টি হয়, যা যায় না।
  • যদি সিস্ট বা গুরুতর ব্রণ দেখা দেয়, যা দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হয়।

বয়োব্রণ যদিও একটি সাধারণ সমস্যা, তবে সঠিক যত্ন এবং চিকিৎসা নিলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *