Best Homeo Doctor

বমি কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

বমি (Vomiting) হল এমন একটি অবস্থা যেখানে পাকস্থলী থেকে পেটের বিষয়বস্তু বাইরে বের হয়ে আসে। এটি একটি প্রতিরোধমূলক প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে এবং সাধারণত শরীরের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর উপাদান বা বিষাক্ত বস্তু সরানোর জন্য হয়। বমি করা যে কোনও রোগ বা শারীরিক সমস্যা হতে পারে এবং এটি অনেক কারণেই হতে পারে।

কারণ:

বমি হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, যেমন:

  1. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন:
    ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা প্যারাসাইট জনিত ইনফেকশন (যেমন, নোরোভাইরাস, শিগেলা, স্যালমোনেলা) গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলস্বরূপ বমি হতে পারে।
  2. খাদ্য বিষক্রিয়া:
    তাজা বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে খাবারে ব্যাকটেরিয়া বা বিষক্রিয়া হতে পারে, যার কারণে বমি হয়।
  3. মাইগ্রেন বা মাথাব্যথা:
    মাইগ্রেন বা তীব্র মাথাব্যথা মানুষের মাঝে বমি সৃষ্টি করতে পারে। মাইগ্রেনের সঙ্গে বমি সাধারণত সম্পর্কিত থাকে।
  4. গর্ভাবস্থা:
    গর্ভাবস্থায় বমি হওয়া সাধারণ সমস্যা (মর্নিং সিকনেস) হতে পারে, যা প্রথম ত্রৈমাসিকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
  5. মদ্যপান বা এলকোহল:
    অতিরিক্ত মদ্যপান বা এলকোহল সেবন করলেই বমি হতে পারে। এটি শরীরের বিষক্রিয়া সরাতে সাহায্য করে।
  6. এনেস্থেশিয়া বা অ্যানেস্থেটিকস:
    কিছু সময় অপারেশনের পর বা অ্যানেস্থেশিয়া ব্যবহারের পর বমি হতে পারে।
  7. শরীরের বিষক্রিয়া:
    শরীরের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ জমে গেলে, যেমন মাদকাসক্তি বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল, তা শরীর বের করে দেওয়ার জন্য বমি ঘটাতে পারে।
  8. মুক্তিযুদ্ধ বা মানসিক চাপ:
    অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা উদ্বেগজনিত কারণে বমি হতে পারে। কখনও কখনও, স্ট্রেস বা আঘাতের পরও এটি হতে পারে।
  9. হরমোনাল পরিবর্তন:
    হরমোনাল পরিবর্তন যেমন গর্ভাবস্থায় বা থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে বমি হওয়ার কারণ।
  10. অন্ত্রের ব্লকেজ বা স্ট্রেন:
    অন্ত্রে কোনো ধরনের ব্লকেজ বা স্ট্রেন, যেমন গ্যাস্ট্রিক আলসার বা অন্ত্রের প্রদাহ (কলাইটিস) বমি হতে পারে।
  11. ট্রাভেল সিকনেস (Motion Sickness):
    দীর্ঘ সময় গাড়ি, জাহাজ বা বিমানে চলাচল করার কারণে সমুদ্র বা আকাশে চলাচলের সময় বমি হতে পারে।
  12. ক্যান্সার বা ক্যান্সার চিকিৎসা:
    ক্যান্সারের কারণে, অথবা কেমোথেরাপি চিকিৎসার ফলে বমি হতে পারে।

লক্ষণ:

বমির কিছু সাধারণ লক্ষণ হতে পারে:

  1. মাথা ঘোরা বা অস্বস্তি:
    বমির আগে সাধারণত মাথা ঘোরা বা অস্বস্তি অনুভূত হয়।
  2. পেটের অস্বস্তি বা টানটান অনুভূতি:
    পেটের মধ্যে একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি সৃষ্টি হয়, যা বমি হওয়ার আগে হতে পারে।
  3. নসিয়াস (Nausea):
    বমির আগের একটি সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে নসিয়াস বা বমি হওয়ার অনুভূতি।
  4. বমির পরে ক্লান্তি বা দুর্বলতা:
    বমি করার পরে অনেকেই ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করে।
  5. মুখ থেকে খাবারের স্বাদ বা গন্ধের পরিবর্তন:
    বমি হওয়ার পর খাদ্য বা পানীয়ের স্বাদ বা গন্ধ সম্পর্কে পরিবর্তন অনুভূত হতে পারে।
  6. বমির পর মাথাব্যথা বা শরীরের ব্যথা:
    কিছু ক্ষেত্রে, বমি হওয়ার পরে মাথাব্যথা বা অন্যান্য শারীরিক ব্যথাও দেখা দিতে পারে।

প্রতিকার:

বমি কমানোর জন্য বেশ কিছু প্রতিকার রয়েছে, তবে মূলত বমির কারণ নির্ধারণ করা প্রয়োজন। নিচে কিছু সাধারণ প্রতিকার দেওয়া হল:

  1. পানি বা তরল খাবার গ্রহণ:
    বমি হওয়ার পর শরীরের জলীয় পদার্থ কমে যেতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পানি বা সল্ট এবং সুগার (ORS) সমৃদ্ধ তরল খাবার খাওয়া জরুরি।
  2. অ্যান্টিএমেটিক্স (Anti-emetics):
    বমি কমাতে অ্যান্টি-এমেটিক্স বা বমি বন্ধ করার ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন ডোমপেরিডোন (Domperidone), মেটোক্লোপ্রামাইড (Metoclopramide) ইত্যাদি। তবে, এই ওষুধগুলি শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা উচিত।
  3. বিশ্রাম নেওয়া:
    বমি হওয়ার পর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত যাতে শরীর পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং দুর্বলতা কমাতে সহায়তা হয়।
  4. হালকা খাদ্য গ্রহণ:
    বমি হওয়ার পর খুব তীব্র খাবার খাওয়া উচিত নয়। হালকা খাবার যেমন ভাত, সাদাসাধা রুটি, স্যুপ বা পুডিং খাওয়া যেতে পারে।
  5. গরম জল বা আদা চা:
    আদা বমি কমাতে সাহায্য করতে পারে। আদা চা বা গরম জল পান করলে কিছুটা উপশম হতে পারে।
  6. গ্যাস বা বুক জ্বালার জন্য অ্যান্টাসিড:
    যদি বমি গ্যাস বা বুক জ্বালার কারণে হয়, তবে অ্যান্টাসিড যেমন এলান্ট (Alant) বা রেনিটিডিন (Ranitidine) ব্যবহার করা যেতে পারে।
  7. ভ্রমণ জনিত বমি (Motion sickness):
    দীর্ঘ ভ্রমণের সময় বমি এড়াতে অ্যান্টিহিস্টামিন বা অন্যান্য মেডিসিন যেমন ডিমেনহাইড্রিনেট (Dimenhydrinate) নেওয়া যেতে পারে।
  8. গর্ভাবস্থায় বমি:
    গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস বা বমির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে, প্রাকৃতিক উপায়ে বিশ্রাম ও হালকা খাদ্য গ্রহণও উপকারি।
  9. গরম তেল বা মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা:
    যদি বমি গ্যাস্ট্রিক কারণে হয়, তবে গরম তেল বা মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • যদি বমি একাধিকবার হয় এবং সঙ্গী লক্ষণ যেমন তীব্র পেটব্যথা, জ্বর বা রক্তসহ বমি থাকে।
  • যদি বমির সঙ্গে রক্ত আসে।
  • যদি বমির কারণে শরীরের তরল পদার্থের অভাব হয় এবং ডিহাইড্রেশন শুরু হয়।
  • যদি বমি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে।

বমি সাধারণত শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলেও, যদি এটি গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *