Best Homeo Doctor

বগলের টিউমার কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

বগলের টিউমার হলো বগলে (অর্থাৎ, বাহুর নিচের অংশে) অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি বা স্ফীতি। এটি সাধারণত একটি গাঁট বা স্ফীতির মতো অনুভূত হয় এবং এটি benign (ভাল) বা malignant (মন্দ) হতে পারে। বগলের টিউমারের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে benign টিউমার থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্যান্সার বা লিম্ফোনোডের (lymph node) সমস্যা হতে পারে, যা গুরুতর হতে পারে।

বগলের টিউমার (Benign Malignant) এর কারণ:

বগলের টিউমার বিভিন্ন কারণে হতে পারে, তবে সাধারণত কিছু কারণ রয়েছে যেগুলি এটি তৈরি করতে পারে:

  1. লিম্ফ নোডের ফুলে যাওয়া: বগলে অনেক লিম্ফ নোড থাকে। কখনও কখনও সংক্রমণ, সর্দি, বা অন্যান্য রোগের কারণে লিম্ফ নোড ফুলে যেতে পারে, যা টিউমারের মতো অনুভূত হয়। এটি সাধারণত একটি সাময়িক সমস্যা।
  2. ব্যাকটেরিয়াল বা ভাইরাল সংক্রমণ: ব্যাকটেরিয়াল বা ভাইরাল সংক্রমণের কারণে লিম্ফ নোড ফোলা বা টিউমার সৃষ্টি হতে পারে। এটি সংক্রমণ বা ইনফেকশনের কারণে ঘটে।
  3. অতিরিক্ত ঘাম: অতিরিক্ত ঘাম বা বগলের আন্ডারআর্মে চুলকানি বা ত্বকের সমস্যা থেকেও কখনও কখনও টিউমার বা স্ফীতি হতে পারে।
  4. বিঞ্চ (Benign cyst): বগলে সাধারণত হরমোনের পরিবর্তন, ত্বকের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ বা আঘাতের কারণে একটি ছোট গুটি বা সিস্ট তৈরি হতে পারে, যা benign হয়।
  5. লিপোমা (Lipoma): এটি এক ধরনের মাংসপেশির টিউমার যা ফ্যাটের কোষ থেকে তৈরি হয়। এটি সাধারণত অদৃশ্য হয় এবং বেশিরভাগ সময় benign থাকে।
  6. বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার: বগলে টিউমার ক্যান্সারের কারণে হতে পারে, যেমন ব্রেস্ট ক্যান্সার, লিম্ফোমা, বা মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার।
  7. মেম্ব্রেনাল ফাইব্রোসিস (Fibrosis): বগলে কোনো পুরনো আঘাত বা টিউমারের ফলে ফাইব্রোসিস সৃষ্টি হতে পারে, যা টিউমারের মতো অনুভূত হয়।

বগলের টিউমার (Benign Malignant) এর লক্ষণ:

বগলের টিউমারের লক্ষণ টিউমারের ধরণ এবং আকারের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে, তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো:

  1. Benign (ভাল) টিউমারের লক্ষণ:
  • গুটি বা স্ফীতি: বগলে একটি ছোট গুটি বা স্ফীতি থাকতে পারে যা সাধারণত ব্যথাহীন।
  • আকারে পরিবর্তন: গুটিটি সময়ের সাথে ছোট বা বড় হতে পারে, তবে এটি সাধারণত ক্ষতিকর নয়।
  • হালকা অস্বস্তি: গুটিটি কখনও কখনও অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে, তবে এটি তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে না।
  • রঙের পরিবর্তন বা সাদা দাগ: টিউমার বা সিস্টের কাছে ত্বকের রঙ পরিবর্তন হতে পারে বা সাদা দাগ দেখা দিতে পারে।
  • আঁকশেনের অনুভূতি: কিছু benign টিউমারে ত্বকে বা আন্ডারআর্মে সামান্য আঁকশেন বা চুলকানি হতে পারে।
  1. Malignant (মন্দ) টিউমারের লক্ষণ:
  • দ্রুত বৃদ্ধি: টিউমার দ্রুত বৃদ্ধি পেলে এটি বিপজ্জনক হতে পারে।
  • ব্যথা বা অস্বস্তি: টিউমার ব্যথা বা অবিশ্বাস্য অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত যখন এটি সংবেদনশীল অংশে হয়।
  • গরম অনুভূতি বা লালচে হওয়া: টিউমার ফোলা হলে কিছু ক্ষেত্রে গরম বা লালচে হতে পারে।
  • রক্তপাত: টিউমার থেকে রক্তপাত হতে পারে, বিশেষত যদি এটি সংক্রমিত হয়ে যায়।
  • অস্বাভাবিক কোষ পরিবর্তন: টিউমারটি যদি দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী থাকে এবং আকারে বৃদ্ধি পায়, তবে এটি ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
  • বুকের বা বাহুর ব্যথা: যদি টিউমারটি কাছাকাছি কোনো অঙ্গ বা কোষে প্রভাব ফেলে, তবে বুক বা বাহুতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  • শরীরের অন্যান্য লক্ষণ: যেমন অবসন্নতা, তীব্র শ্বাসকষ্ট, অস্বাভাবিক ওজন কমানো, বা ক্ষুধামান্দ্য।

বগলের টিউমার (Benign Malignant) এর প্রতিকার:

বগলের টিউমারের চিকিৎসা তার ধরণ (benign বা malignant) এবং অবস্থার ওপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ চিকিৎসার পদ্ধতি হলো:

  1. Benign টিউমারের চিকিৎসা:
  • অপারেশন (সার্জারি): যদি টিউমারটি আকারে বড় হয়ে যায় বা অস্বস্তি সৃষ্টি করে, তবে এটি অপসারণের জন্য সার্জারি করা হতে পারে।
  • অ্যান্টিবায়োটিক: সংক্রমণের কারণে টিউমার হয়ে থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হতে পারে।
  • নিরীক্ষণ: অনেক সময় benign টিউমারগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং কোন ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না যদি তা ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে।
  • সিস্ট বা গুটি বের করা: যদি এটি সিস্ট বা ফ্যাট থেকে তৈরি হয়ে থাকে, তবে চিকিৎসক এটি বের করার পরামর্শ দিতে পারেন।
  1. Malignant টিউমারের চিকিৎসা (ক্যান্সার):
  • সার্জারি: ক্যান্সার আক্রান্ত টিউমারটি অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে, যদি এটি অপসারণযোগ্য হয়।
  • কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপি ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। এটি টিউমারের আকার কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  • রেডিওথেরাপি: রেডিওথেরাপি ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে যদি সার্জারি সম্ভব না হয়।
  • হরমোনথেরাপি: কিছু ক্যান্সার হরমোনের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়, সেক্ষেত্রে হরমোনথেরাপি ব্যবহার করা হয়।
  • ইমিউনোথেরাপি: শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শক্তিশালী করা হয়।

প্রতিরোধ:

  1. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখে।
  2. ধূমপান পরিহার: ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন ফুসফুস এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  3. বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা: যেমন সর্দি, ইনফেকশন বা অন্যান্য সংক্রমণ দ্রুত চিকিৎসা করা উচিত, যাতে লিম্ফ নোড ফোলা বা সংক্রমণ না বাড়ে।
  4. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: যদি বগলে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়, যেমন স্ফীতি বা গুটি, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শেষ কথা:

বগলের টিউমার সাধারণত benign (ভাল) হয়, তবে এটি কখনও কখনও ক্যান্সারের জন্য সংকেতও হতে পারে। তাই, বগলে কোনো অস্বাভাবিক গুটি বা স্ফীতি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *