ফেরিনজাইটিস (Pharyngitis) হল গলার পেছনের অংশ বা ফ্যারিঞ্জ (pharynx)-এ প্রদাহ। এটি সাধারণত গলাব্যথা সৃষ্টি করে এবং কখনও কখনও শ্বাস নিতে বা গিলতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ফেরিনজাইটিস ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হতে পারে, তবে অন্য কারণেও এটি হতে পারে।
ফেরিনজাইটিসের কারণ:
- ভাইরাল সংক্রমণ (Viral Infection):
- সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, করোনাভাইরাস, অ্যাডেনোভাইরাস (Adenovirus) ইত্যাদি ভাইরাসের কারণে ফেরিনজাইটিস হতে পারে। এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
- ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (Bacterial Infection):
- স্ট্রেপটোকোক্কাল ব্যাকটেরিয়া (Streptococcus) দ্বারা ব্যাকটেরিয়াল ফেরিনজাইটিস হয়। এটি এক ধরনের গুরুতর সংক্রমণ, এবং অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
- অ্যালার্জি (Allergies):
- ধূলিকণিকা, পলল, ফুলের রেণু, বা পশুর পশমের প্রতি অ্যালার্জির কারণে গলায় প্রদাহ হতে পারে।
- ধূমপান (Smoking):
- ধূমপান গলার শ্লেষ্মা এবং টিস্যুতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা ফেরিনজাইটিসের কারণ হতে পারে।
- এয়ার পলিউশন (Air Pollution):
- দূষিত বাতাস বা রাসায়নিক উপাদান গলার প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
- মুখের শুষ্কতা (Dry Throat):
- শুষ্ক পরিবেশ বা অতিরিক্ত কথা বলা, চিৎকার করা গলার শুষ্কতা সৃষ্টি করতে পারে।
- গ্যাস্ট্রোইসোফ্যাগিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD):
- পেটের এসিড যদি খাদ্যনালী থেকে গলার দিকে উঠে আসে (এসিড রিফ্লাক্স), তা গলার প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
ফেরিনজাইটিসের লক্ষণ:
- গলা ব্যথা (Sore Throat):
- গলা ব্যথা হল ফেরিনজাইটিসের প্রধান লক্ষণ। গলার ভিতর ব্যথা অনুভূত হতে পারে, যা খেতে বা কথা বলতে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
- গলা চুলকানি বা অস্বস্তি (Scratchy or Dry Throat):
- গলার মধ্যে শুষ্কতা বা চুলকানি অনুভূতি হতে পারে।
- জ্বর (Fever):
- ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে জ্বর উঠতে পারে।
- কাঁপুনির অনুভূতি (Chills):
- কিছু ক্ষেত্রে জ্বরের সাথে কাঁপুনি অনুভূত হতে পারে।
- কাশি (Cough):
- ফেরিনজাইটিসের সাথে সাধারণত কাশি থাকতে পারে, বিশেষ করে ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে।
- গলার ভিতরে কিছু আটকে থাকার অনুভূতি (Lump in the Throat):
- গলা বা খাদ্যনালীতে কিছু আটকে থাকার অনুভূতি হতে পারে।
- শরীরের অস্বস্তি (Body Aches):
- ভাইরাল সংক্রমণের কারণে শরীরে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
- গলা থেকে মিউকাস বের হওয়া (Mucus Discharge):
- গলা থেকে শ্লেষ্মা বের হতে পারে। এটি ভাইরাল সংক্রমণ বা এলার্জির কারণে হতে পারে।
ফেরিনজাইটিসের প্রতিকার:
- গলা বিশ্রাম (Voice Rest):
- অতিরিক্ত কথা বলা বা চিৎকার করা থেকে বিরত থাকুন, যাতে গলা পুনরুদ্ধার পায়।
- পানি ও তরল পান করুন:
- গলা শিথিল করতে এবং শুষ্কতা কমাতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। গরম চা, মধু ও লেবু মিশিয়ে পান করলে এটি আরও উপকারি হবে।
- গার্গল করুন:
- গরম লবণ পানিতে গার্গল করলে গলা পরিষ্কার ও শিথিল হয়, এবং প্রদাহ কমায়।
- ব্রিউড হট স্টিম:
- গরম পানি দিয়ে স্টিম নিন বা গরম ভাপ নিলে গলার শুষ্কতা এবং প্রদাহ কমে।
- মধু ও আদা:
- মধু গলা শিথিল করে এবং আদা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। গরম পানিতে মধু বা আদা মিশিয়ে পান করতে পারেন।
- ওষুধ:
- প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ সেবন করলে ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
- গলা স্প্রে বা থ্রোট লজেঞ্জ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এলার্জি ওষুধ:
- যদি অ্যালার্জি কারণে ফেরিনজাইটিস হয়, তবে অ্যান্টিহিস্টামিন বা অন্য এলার্জি ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ধূমপান পরিহার করুন:
- ধূমপান পরিহার করুন, কারণ এটি গলার প্রদাহ বাড়িয়ে দেয়।
- ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্রাম:
- যদি ফেরিনজাইটিস ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হয়, তাহলে বিশ্রাম নেওয়া এবং জলবসন্ত বা সর্দি থেকে নিজেকে রক্ষা করা জরুরি।
- ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক:
- যদি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (যেমন স্ট্রেপটোকোক্কাল ইনফেকশন) হয়, চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হতে পারে।
সতর্কতা:
- যদি গলা ব্যথা এক সপ্তাহের বেশি থাকে, অথবা যদি শ্বাসকষ্ট, উচ্চ জ্বর, গলার মধ্যে ফোলা বা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- যদি গলা থেকে রক্তপাত হয়, তা গুরুতর পরিস্থিতির নির্দেশ হতে পারে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
ফেরিনজাইটিস সাধারণত ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে এবং সঠিক চিকিৎসা ও বিশ্রাম দিয়ে এটি সাধারণত সেরে যায়। তবে যদি গুরুতর লক্ষণ থাকে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।