Best Homeo Doctor

ফাইলেরিয়া কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

ফাইলেরিয়া (Filariasis) একটি পরজীবী রোগ, যা ফাইলেরিয়াল ওয়ার্ম দ্বারা সৃষ্ট। এই রোগটি প্রধানত মশা বা অন্যান্য পিপঁড়ে দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। ফাইলেরিয়া মানবদেহের লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম (লসিকাংশ নলিকা) আক্রমণ করে এবং এটি খুবই মারাত্মক হতে পারে যদি সঠিক চিকিৎসা না করা হয়।

ফাইলেরিয়ার কারণ:

ফাইলেরিয়া মূলত ফিলারিয়া পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই পরজীবী সাধারণত ফাইলেরিয়াল ওয়র্ম নামে পরিচিত। এই রোগের মূল কারণ তিনটি প্রজাতির ফাইলেরিয়াল পরজীবী:

  1. Wuchereria bancrofti
  2. Brugia malayi
  3. Brugia timori

এই পরজীবীগুলি সাধারণত মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। মশার কামড়ে যখন এই পরজীবী মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, তখন তা লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের মধ্যে বাসা বাঁধে এবং সংক্রমণ সৃষ্টি করে।

ফাইলেরিয়ার ছড়ানোর উপায়:

ফাইলেরিয়া রোগ মূলত মশার মাধ্যমে ছড়ায়, বিশেষ করে আনোফিলিস মশা (Anopheles mosquito) এবং Culex মশা। এই মশাগুলি ফাইলেরিয়ার পরজীবী এর ডিম বা লার্ভা শরীরে ধারণ করে এবং মানুষের শরীরে কামড় দেওয়ার মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়।

ফাইলেরিয়ার লক্ষণ:

ফাইলেরিয়ার লক্ষণগুলি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী এবং ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে উপসর্গ তীব্র হতে পারে, আবার কিছু ক্ষেত্রে তেমন কোন লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। প্রধান লক্ষণগুলো হল:

  1. লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমে ফুলে ওঠা (Lymphedema):
    • শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষত পা, হাঁটু, এবং অন্ডকোষে ফুলে উঠতে পারে। এটি হাইড্রোসিল বা এডেমা নামে পরিচিত, যেখানে শরীরের অংশগুলো অতিরিক্ত তরল পদার্থ জমে ফুলে যায়।
  2. অন্ডকোষ বা বগলে ফোলা:
    • পুরুষদের মধ্যে ফাইলেরিয়া রোগ সাধারণত অন্ডকোষে ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে, যা কষ্টকর এবং অস্বস্তিকর হতে পারে। এটি ফাইলেরিয়াল স্ক্রোটাল এলিভেশন নামে পরিচিত।
  3. পা বা হাতের ফোলা (Elephantiasis):
    • দীর্ঘমেয়াদী ফাইলেরিয়ার কারণে পা বা হাতের বড় আকার ধারণ করা শুরু হতে পারে, যা হাতির পা বা এলিফ্যান্টিয়াসিস (Elephantiasis) নামে পরিচিত।
  4. সার্বিক অস্বস্তি:
    • শরীরে ব্যথা, অবসাদ, দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব হতে পারে।
  5. গা dark দাগ (Bruising):
    • যেহেতু ফাইলেরিয়া অনেক সময় লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের সোজাসোজি আঘাত করে, কিছু ক্ষেত্রে গা dark ় দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা যেতে পারে।
  6. জ্বর এবং সর্দি:
    • ফাইলেরিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে জ্বর এবং সর্দি হতে পারে, বিশেষ করে ইনফেকশনের শুরুর দিকে।
  7. পিপঁড়ে কামড়ে জ্বালা:
    • কিছু ক্ষেত্রে মশার কামড়ে অতিরিক্ত জ্বালা বা চুলকানি হতে পারে।
  8. লিম্ফ্যাটিক এনফ্লামেশন (Lymphatic Inflammation):
    • আক্রমণকারী পরজীবী লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমে প্রবেশ করলে, সে অঞ্চলটি ফুলে যেতে পারে এবং ত্বকে সুরক্ষা ব্যবস্থা শুরু হতে পারে।

ফাইলেরিয়ার প্রতিকার:

ফাইলেরিয়া মূলত অ্যান্টিফাইলেরিয়াল ড্রাগ দ্বারা চিকিৎসা করা হয়, তবে অন্যান্য প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনুসরণ করা প্রয়োজন। ফাইলেরিয়ার প্রতিকার ও চিকিৎসার উপায়গুলো নিম্নরূপ:

  1. মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট (Antifilarial Medication):
    • ফাইলেরিয়া আক্রান্তদের জন্য দিএইফেনাইলহাইড্রাজিনিন (Diethylcarbamazine – DEC), ইভরমেকটিন (Ivermectin) এবং অ্যাবারমেকটিন (Albendazole) নামক কিছু অ্যান্টি-ফাইলেরিয়াল ঔষধ ব্যবহৃত হয়। এই ঔষধগুলি পরজীবীকে শরীর থেকে দূর করতে সাহায্য করে।
  2. লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের যত্ন:
    • ফাইলেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের ফোলা স্থান কমানোর জন্য নিয়মিত মালিশ করা উচিত, বিশেষত পায়ে। এছাড়া হালকা উত্তাপ বা গরম পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থানে সেঁক দিলে ফোলাভাব কমতে সাহায্য করতে পারে।
  3. পানি তরলজাতীয় খাবার:
    • শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে প্রচুর পানি এবং তরলজাতীয় খাবার (যেমন স্যুপ, ফলের রস) গ্রহণ করা উচিত।
  4. ব্যথানাশক ইনফ্লামেশন কমানোর ঔষধ:
    • ইনফ্লামেশন ও ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  5. প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা:
    • ফাইলেরিয়া প্রতিরোধ করতে মশার কামড় থেকে বাঁচার ব্যবস্থা নিতে হবে। মশার নেট ব্যবহার করা, মশারির ভিতরে থাকার ব্যবস্থা করা এবং মশার প্রতিকারক ক্রিম ব্যবহার করা।
  6. মশা নিধন:
    • ফাইলেরিয়া ছড়ানোর মূল মাধ্যম হলো মশা, তাই মশার দমন করতে হবে। ঘর বা আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখতে হবে, যেখানে মশার বংশবিস্তার হতে পারে।
  7. প্রতিরোধী ওষুধের সেবন:
    • কিছু অঞ্চলে যেখানে ফাইলেরিয়া বেশি দেখা যায়, সেখানে প্রতিরোধী চিকিৎসা হিসেবে ভ্রমণের আগে বা এলাকায় থাকার সময় নিয়মিত অ্যান্টি-ফাইলেরিয়াল ঔষধ (যেমন DEC, Albendazole) গ্রহণ করা যেতে পারে।
  8. সামাজিক সচেতনতা:
    • ফাইলেরিয়া একটি সেকেন্ডারি রোগ, যাতে মূলত স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। মশার কামড় ও পরজীবী থেকে বাঁচার জন্য স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ফাইলেরিয়া প্রতিরোধের উপায়:

  1. মশার কামড় থেকে প্রতিরোধ:
    • মশারি ব্যবহার, মশার প্রতিকারক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার এবং মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে হবে।
  2. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ:
    • ফাইলেরিয়া আক্রান্ত অঞ্চলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসরণ করা এবং ভ্যাকসিন বা প্রাক-চিকিৎসা গ্রহণ করা।
  3. নিষ্ক্রিয় মশার জায়গা পরিষ্কার রাখা:
    • মশার উত্থান রোধ করতে জলাধার বা অপরিষ্কার জায়গাগুলি পরিষ্কার রাখা।
  4. সামাজিক শিক্ষামূলক কর্মসূচী:
    • ফাইলেরিয়া নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যাতে এটি দ্রুত শনাক্ত করা ও চিকিৎসা করা সম্ভব হয়।

নোট: ফাইলেরিয়া একটি গুরুতর রোগ, তবে এটি সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *