Best Homeo Doctor

প্লিহার বৃদ্ধি কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

প্লিহার বৃদ্ধি (Splenomegaly) হল একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে প্লিহার আকার বেড়ে যায়, অর্থাৎ প্লিহা স্বাভাবিক আকারের চেয়ে বড় হয়ে যায়। প্লিহা (Spleen) হল একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্তের শ্বেত কণিকা তৈরি করতে সহায়তা করে, মৃত রক্তকণিকা ভেঙে ফেলে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য কাজ করে।

কারণ:

প্লিহার বৃদ্ধি (Splenomegaly) হওয়ার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে প্রধান কিছু কারণ হলো:

  1. লিভার ডিজিজ:
    লিভারের বিভিন্ন অসুখ যেমন সিরোসিস বা হেপাটাইটিস এর কারণে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে এবং প্লিহার আকার বেড়ে যায়।
  2. ইনফেকশন:
    বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা প্যারাসাইট দ্বারা সংক্রমণ প্লিহা বৃদ্ধি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ম্যালেরিয়া, মোনোনিউক্লিওসিস, টিবি (টিউবারকিউলোসিস), সিফিলিস ইত্যাদি সংক্রমণ।
  3. হেমাটোলজিক রোগ:
    রক্তের রোগ যেমন সেল সিকেল অ্যানিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া বা হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া প্লিহার বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
  4. ক্যান্সার:
    লিম্ফোমা, লিউকেমিয়া বা অন্যান্য ক্যান্সারের কারণে প্লিহার বৃদ্ধি হতে পারে, যেখানে ক্যান্সারের কোষগুলি প্লিহাতে চলে আসে।
  5. এডিসন ডিজিজ (Addison’s disease):
    এটি একটি হরমোনাল রোগ, যেখানে অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড কাজ না করার কারণে প্লিহার আকার বৃদ্ধি পেতে পারে।
  6. গাউচার ডিজিজ (Gaucher’s disease):
    এটি একটি জেনেটিক রোগ যা প্লিহার আকার বৃদ্ধি করে। এই রোগে শরীরে সেরিব্রাল কোষ এবং প্লিহার সঞ্চিত থাকে।
  7. সিস্টিক ফাইব্রোসিস (Cystic fibrosis):
    এটি একটি জেনেটিক রোগ যেখানে শ্বাসপ্রশ্বাস ও অন্যান্য অঙ্গের কার্যক্রমে সমস্যা হয় এবং প্লিহার আকার বৃদ্ধি হতে পারে।
  8. অটোলিমিউন রোগ:
    যেমন লুপাস (Systemic lupus erythematosus) বা রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস, যেগুলির ফলে প্লিহার বৃদ্ধি হতে পারে।
  9. প্লিহার ক্ষত বা আঘাত:
    প্লিহায় আঘাত বা ক্ষতির ফলে প্লিহার বৃদ্ধি ঘটতে পারে।

লক্ষণ:

প্লিহার বৃদ্ধি হলে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা দিতে পারে, তবে কখনও কখনও এটি কোনো লক্ষণ ছাড়াও হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. পেটের বাঁদিকে ব্যথা বা অস্বস্তি:
    প্লিহার বৃদ্ধি হলে পেটের বাঁ দিকে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে, বিশেষ করে স্লিনের অবস্থানে।
  2. পেট ফুলে যাওয়া বা চাপ অনুভূতি:
    প্লিহা বড় হওয়ার কারণে পেটের বাঁ পাশে ফুলে যাওয়া বা চাপ অনুভূত হতে পারে।
  3. বমি বা বমির অনুভূতি:
    প্লিহার বৃদ্ধি কিছু সময় বমি বা বমির অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে, কারণ প্লিহা অন্য অঙ্গগুলির ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
  4. অ্যানোমিয়া বা রক্তাল্পতা:
    প্লিহার বৃদ্ধি, বিশেষ করে হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়ার কারণে রক্তাল্পতা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  5. জ্বর শারীরিক দুর্বলতা:
    যদি প্লিহার বৃদ্ধি কোনো ইনফেকশন বা সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে, তবে জ্বর, শারীরিক দুর্বলতা এবং শরীরের অন্যান্য অসুস্থতা হতে পারে।
  6. রক্তক্ষরণ:
    প্লিহার বৃদ্ধির কারণে রক্ত জমাট বাঁধতে সমস্যা হতে পারে, যার ফলে সহজে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
  7. মূত্রের রঙ পরিবর্তন:
    কিছু ক্ষেত্রে, প্লিহার বৃদ্ধি এবং সেল সিকেল অ্যানিমিয়া বা হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়ার কারণে মূত্রের রঙ গা dark ় হতে পারে।

প্রতিকার:

প্লিহার বৃদ্ধি হলে তার কারণ নির্ণয় করা জরুরি, কারণ এটি মূলত underlying (মূল কারণ) রোগের উপসর্গ। নিচে কিছু সাধারণ প্রতিকার দেওয়া হল:

  1. মৌলিক রোগের চিকিৎসা:
    প্লিহার বৃদ্ধি সাধারণত underlying রোগের কারণে হয়, তাই সেই রোগের চিকিৎসা করা প্রাথমিক প্রতিকার। যেমন:

    • লিভার ডিজিজ বা সিরোসিসের চিকিৎসা।
    • ক্যান্সার বা রক্তের রোগের চিকিৎসা।
    • ইনফেকশন বা প্যারাসাইটের চিকিৎসা।
  2. অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি:
    যদি প্লিহার বৃদ্ধি কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি গ্রহণ করা যেতে পারে।
  3. রক্ত বা প্লাজমা ট্রান্সফিউশন:
    যদি হেমাটোলজিক সমস্যা যেমন অ্যানিমিয়া বা সেল সিকেল অ্যানিমিয়ার কারণে প্লিহা বৃদ্ধি হয়, তবে রক্ত বা প্লাজমা ট্রান্সফিউশন দেওয়া যেতে পারে।
  4. স্টেরয়েড থেরাপি:
    কিছু অটোলিমিউন রোগ যেমন লুপাস বা রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিসে স্টেরয়েড থেরাপি প্রয়োগ করা হতে পারে।
  5. সার্জারি বা প্লিহার অপসারণ:
    খুব বড় আকারের প্লিহা বা প্লিহার ক্ষতির কারণে কখনও কখনও অপারেশন বা প্লিহার অপসারণ (স্প্লেনেকটমি) করা হতে পারে।
  6. লিভার বা রক্ত রোগের জন্য বিশেষ খাবার:
    লিভার বা রক্তের সমস্যা থাকলে খাদ্যতালিকায় কিছু পরিবর্তন করতে হতে পারে, যেমন কম চর্বি, বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া এবং সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • যদি পেটের বাঁ পাশে ব্যথা বা অস্বস্তি থাকে।
  • যদি পেট ফুলে যায় এবং জ্বর ও দুর্বলতা থাকে।
  • যদি রক্তাল্পতার লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, বা ত্বকে হালকা রক্তচাপ।
  • যদি প্লিহার আঘাত বা কোনো সংক্রমণের কারণে বড় হয়ে যায় এবং চিকিৎসা প্রয়োজন।

প্লিহার বৃদ্ধি সাধারণত কোনো গম্ভীর শারীরিক সমস্যার সূচনা হতে পারে, তাই এটি উপেক্ষা করা উচিত নয় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *