Best Homeo Doctor

প্রস্রাব বন্ধ হওয়ার কারন,লক্ষন,প্রতিকার

প্রস্রাব বন্ধ (Urinary Retention) হল এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি তার মূত্রাশয় সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে খালি করতে পারে না। এর ফলে প্রস্রাবের চাপে অস্বস্তি বা ব্যথা হতে পারে, এবং মূত্রাশয়ে অতিরিক্ত প্রস্রাব জমে থাকতে পারে, যা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কারণ:

প্রস্রাব বন্ধ হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. মূত্রনালির অবরোধ: মূত্রনালিতে কোনো অবরোধ (যেমন পাথর, টিউমার, বা ক্যান্সার) থাকলে প্রস্রাব সহজে বের হতে পারে না।
  2. প্রস্রাবনালির প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা: পুরুষদের ক্ষেত্রে, বৃহদায়ু (Prostate) বৃদ্ধি বা অন্যান্য সমস্যার কারণে মূত্রনালিতে চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা প্রস্রাব বন্ধ হতে সাহায্য করে।
  3. স্নায়ুজনিত সমস্যা: মূত্রাশয় এবং মূত্রনালির স্নায়ু সঠিকভাবে কাজ না করলে প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্নায়ু আঘাত, স্ট্রোক বা প্যারালাইসিস এর কারণে।
  4. দীর্ঘস্থায়ী ক্যাটেটার ব্যবহার: যদি দীর্ঘসময় ধরে মূত্রথলিতে ক্যাটেটার (Urinary Catheter) ব্যবহার করা হয়, তখন মূত্রাশয়ে স্বাভাবিক কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
  5. ইনফেকশন বা প্রদাহ: মূত্রনালি বা মূত্রাশয়ে সংক্রমণ (যেমন ইউটিআই) বা প্রদাহ থাকলে প্রস্রাবের প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
  6. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু বিশেষ ওষুধ যেমন অ্যান্টি-হিস্টামাইন, ডিপ্রেসেন্ট, বা এ্যান্টি-কোলিনার্জিক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে।
  7. মধুমেহ (ডায়াবেটিস): মধুমেহ রোগী হবার কারণে স্নায়ু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, যা মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করে।
  8. গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থার শেষের দিকে শিশুর চাপের কারণে মূত্রাশয় প্রভাবিত হতে পারে এবং প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  9. মূত্রাশয়ের মাংসপেশীর দুর্বলতা: মূত্রাশয়ের পেশী দুর্বল হয়ে গেলে, এটি প্রস্রাবের সঠিক নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

লক্ষণ:

প্রস্রাব বন্ধ হওয়ার কিছু লক্ষণ হতে পারে:

  1. মূত্রাশয়ের চাপ বা অস্বস্তি: প্রস্রাব না হওয়ার কারণে মূত্রাশয়ে অস্বস্তি বা চাপ অনুভূত হতে পারে।
  2. বারবার প্রস্রাবের অনুভূতি: যদিও প্রস্রাব করা সম্ভব হচ্ছে না, তারপরও একজন ব্যক্তি বারবার প্রস্রাবের অনুভূতি পেতে পারে।
  3. প্রস্রাব করার জন্য চেষ্টা করা: অনেক সময়, মূত্রাশয়ের পূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও, একজন ব্যক্তি প্রস্রাব করার জন্য চেষ্টা করে, কিন্তু এটি বের হতে পারে না।
  4. পেটের নিচে ব্যথা বা ফুলে ওঠা: মূত্রাশয়ে অতিরিক্ত প্রস্রাব জমে গেলে পেটের নিচে ব্যথা বা ফুলে ওঠা অনুভূত হতে পারে।
  5. রক্তাক্ত প্রস্রাব: কখনও কখনও মূত্রাশয়ে সমস্যা থাকার কারণে প্রস্রাবের সাথে রক্ত দেখা যেতে পারে।
  6. মূত্রের গন্ধ পরিবর্তন: দীর্ঘস্থায়ী প্রস্রাবের অবস্থায়, প্রস্রাবের গন্ধে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।

প্রতিকার:

প্রস্রাব বন্ধ হওয়ার চিকিৎসা মূলত কারণের উপর নির্ভর করে। তবে কিছু সাধারণ প্রতিকার এবং চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে:

  1. ক্যাটেটার ব্যবহার: যদি প্রস্রাব পুরোপুরি বন্ধ হয়ে থাকে, তবে মূত্রাশয়ে ক্যাটেটার স্থাপন করা হতে পারে যাতে প্রস্রাব বের হতে পারে।
  2. অ্যান্টিবায়োটিক বা চিকিৎসা: যদি প্রস্রাব বন্ধ হওয়ার কারণ কোনো ইনফেকশন বা প্রদাহ হয়, তবে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য উপযুক্ত ওষুধ দিতে পারেন।
  3. ওষুধ পরিবর্তন: যদি প্রস্রাব বন্ধ হওয়ার কারণ কোনো ওষুধ হয়ে থাকে, তবে চিকিৎসক ওই ওষুধ পরিবর্তন করতে পারেন।
  4. বিশেষ ব্যায়াম: কিছু ক্ষেত্রে, মূত্রাশয়ের পেশী শক্ত করার ব্যায়াম (যেমন কেগেল ব্যায়াম) সহায়ক হতে পারে।
  5. সার্জারি: যদি বৃহদায়ুর বৃদ্ধি বা মূত্রনালির অবরোধের কারণে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে থাকে, তবে অস্ত্রোপচার বা চিকিৎসা প্রস্তাবিত হতে পারে।
  6. ভ্রূণ ভাজন পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় যদি প্রস্রাব বন্ধ হয়ে থাকে, তবে বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত পানি পান করা হতে পারে, এবং গুরুতর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সহায়তা নেয়া উচিত।
  7. স্নায়ু পুনরুদ্ধার থেরাপি: স্নায়ুজনিত কারণে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে থাকলে, স্নায়ু থেরাপি বা ফিজিওথেরাপি কার্যকর হতে পারে।

প্রস্রাব বন্ধ হওয়া একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে এবং এটি দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। তাই এই ধরনের সমস্যা অনুভূত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *