প্রস্টেটাইটিস (Prostatitis) হলো প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ, যা পুরুষদের একটি সাধারণ সমস্যা। প্রস্টেট গ্রন্থি মূত্রথলির নিচে অবস্থিত এবং এটি বীর্য উৎপাদনে সহায়ক। প্রস্টেটাইটিস বিভিন্ন কারণে হতে পারে, এবং এটি সাধারণত ব্যথা, অস্বস্তি, বা অন্যান্য মূত্রজনিত লক্ষণের সাথে সম্পর্কিত।
প্রস্টেটাইটিসের কারণ:
১. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: প্রস্টেটাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, যা সাধারণত মূত্রনালীর মাধ্যমে প্রস্টেট গ্রন্থিতে প্রবেশ করে। এটি ব্যাকটেরিয়াল প্রস্টেটাইটিস নামে পরিচিত। 2. এনার্জি বা চাপ: দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক চাপ, বিশেষ করে বাইকে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা বা অন্যান্য শারীরিক পরিশ্রমের কারণে প্রস্টেটের উপর চাপ পড়ে, যা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। 3. ক্রনিক প্রদাহজনিত রোগ: কিছু পুরুষদের প্রস্টেটের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হতে পারে, যা প্রস্টেটাইটিসের জন্য সঞ্চালিত হয়, তবে এতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকে না। এটি ক্রনিক নন–ব্যাকটেরিয়াল প্রস্টেটাইটিস। 4. যৌন সংক্রমণ: যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে কিছু রোগ যেমন গনোরিয়া বা ক্ল্যামিডিয়া প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। 5. মূত্রথলির প্রদাহ: মূত্রথলিতে প্রদাহ (যেমন সিস্টাইটিস) প্রস্টেট গ্রন্থিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। 6. অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন: বেশি অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন খাওয়া প্রস্টেট গ্রন্থির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। 7. অবস্থানগত সমস্যা বা স্ট্রেস: মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত উদ্বেগও প্রস্টেটের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে।
প্রস্টেটাইটিসের লক্ষণ:
- মূত্রের সমস্যাগুলি: মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা, বার বার মূত্রত্যাগের অনুভূতি, বা তীব্র তৃষ্ণা হতে পারে।
- অণ্ডকোষ ও পেটের নিচে ব্যথা: প্রস্টেটাইটিসের ফলে অণ্ডকোষ, মলদ্বার, বা পেটের নিচের অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
- যন্ত্রণাদায়ক মূত্রত্যাগ: মূত্রত্যাগের সময় বা পরবর্তী সময়ে পীড়াদায়ক অনুভূতি বা জ্বালা হতে পারে।
- মূত্রে রক্ত বা মেঘলা রঙ: কখনও কখনও মূত্রে রক্ত বা মেঘলা রঙ দেখা যেতে পারে।
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি (জ্বর): সংক্রমণের কারণে শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি (জ্বর) হতে পারে।
- যৌন সমস্যা: লিঙ্গের মধ্যে ব্যথা, যৌন উত্তেজনায় সমস্যা, বা বীর্যপাতের সময় ব্যথা হতে পারে।
- বদলে যাওয়া মেজাজ বা মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন: প্রস্টেটাইটিসের কারণে শরীরের অস্বস্তির সাথে মানসিক চাপও বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা হতে পারে।
প্রস্টেটাইটিসের প্রতিকার:
- অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ: যদি প্রস্টেটাইটিস ব্যাকটেরিয়াল কারণে হয়, তবে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক prescribed করা হয়। ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত সময়কাল অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
- অ্যানালগেসিক ওষুধ: ব্যথা কমানোর জন্য অ্যানালগেসিক বা ব্যথানাশক ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে।
- অলিম্পিক চাপ কমানো: দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা বা অতিরিক্ত শারীরিক চাপ বা উত্তোলন এড়ানো।
- কিছু বিশেষ খাবার এড়ানো: ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, মসলাযুক্ত খাবার, বা তেলযুক্ত খাবার প্রস্টেট গ্রন্থির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তাই এগুলি এড়ানো উচিত।
- সিটস বাথ (Sitz Bath): গরম পানিতে বসে থাকা বা সিটস বাথ গ্রহণ করে প্রস্টেটের এলাকায় আরাম পাওয়া যেতে পারে।
- পর্যাপ্ত পানি পান করা: মূত্রথলির স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
- কিছু ধরণের শল্যচিকিৎসা: যদি রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয় বা খুব গুরুতর হয়, তবে সার্জারির মাধ্যমে প্রস্টেট গ্রন্থির সমস্যা সমাধান করা হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক প্রস্টেটাইটিসের জন্য:
- এলপিপি ট্রিটমেন্ট: ক্রনিক প্রস্টেটাইটিসের জন্য জীবনের গুণমান উন্নত করতে কিছু আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন এলপিপি (Lifestyle and Pelvic Physiotherapy), সাইকোলজিক্যাল থেরাপি, বা মানসিক চাপ কমানোর কৌশল ব্যবহৃত হতে পারে।
- বাইয়োলজিক্যাল থেরাপি: নতুন কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি যা ক্রনিক প্রস্টেটাইটিসের জন্য কার্যকর হতে পারে, সে সম্পর্কে ডাক্তার পরামর্শ দিতে পারেন।
যদি প্রস্টেটাইটিসের লক্ষণগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা গুরুতর হয়ে ওঠে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।