প্রসাব আঁটকে থাকা (Urinary Retention) কী?
প্রসাব আঁটকে থাকা (Urinary retention) হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে মুত্রথলী পূর্ণ হয়ে যায়, কিন্তু মুত্র বের হতে পারে না বা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়। এটি একটি মেডিকেল জরুরি অবস্থা হতে পারে এবং প্রাথমিকভাবে মুত্রবাহিনীর স্নায়ু বা পেশীর সমস্যা, মুত্রনালীতে বাধা, বা মুত্রথলীর শক্তি কম হওয়ার কারণে ঘটে।
কারণ:
প্রসাব আঁটকে থাকার বিভিন্ন কারণ হতে পারে, যেমন:
- মুত্রনালী বা মুত্রথলীতে বাধা:
- প্রস্টেট বৃদ্ধি (পুরুষদের ক্ষেত্রে): বৃদ্ধ প্রস্টেট মুত্রনালীতে চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে মুত্র থেমে যায় বা বের হতে পারে না।
- মুত্রনালীতে স্ট্রিকচার (sphincter dysfunction): মুত্রনালীতে সঙ্কীর্ণতা বা বাধা সৃষ্টি হলে প্রসাব বের হতে অসুবিধা হয়।
- নিউরোলজিক্যাল সমস্যা:
- মেরুদণ্ড বা স্নায়ুর সমস্যা: মেরুদণ্ডের আঘাত বা স্নায়ু ক্ষতির কারণে মুত্রথলীর সংকোচন বা প্রসাবের নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে।
- স্ট্রোক বা পারকিনসনস ডিজিজ: স্নায়ু সংক্রান্ত রোগও প্রসাব আঁটকে থাকার কারণ হতে পারে।
- মুত্রথলীর পেশীর দুর্বলতা: মুত্রথলীর পেশী (Bladder muscle) ঠিকভাবে সংকুচিত হতে না পারলে প্রসাব বের হতে সমস্যা হয়।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন, এন্টিডিপ্রেসেন্ট বা পেইন কিলার মুত্রপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- মুত্রথলীতে ইনফেকশন: ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) বা মুত্রথলীর প্রদাহের কারণে প্রসাবের সমস্যা হতে পারে।
- এনেস্থেসিয়া: মেধা বা সার্জারির পর এনেস্থেসিয়া (Anesthesia) প্রয়োগের ফলে মুত্রথলী বা মুত্রবাহিনী স্নায়ু কিছু সময়ের জন্য অক্ষম হয়ে যেতে পারে।
- মূত্রনালীতে ব্লক: মূত্রথলীর পাথর বা টিউমার মুত্রনালী বা মুত্রথলীতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে প্রসাব আঁটকে থাকে।
লক্ষণ:
প্রসাব আঁটকে থাকার কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:
- মুত্রথলীতে পূর্ণতার অনুভূতি: আপনি মুত্র করতে ইচ্ছুক হলেও মুত্র বের হতে পারে না।
- পেটের নীচে চাপ বা ব্যথা: মুত্রথলীতে পূর্ণতার কারণে পেটের নীচে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- মুত্র ত্যাগের সময় সমস্যা: প্রসাব শুরু না হওয়া বা থেমে থেমে আসা।
- ব্যথা বা অস্বস্তি: প্রসাবের সময় ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হওয়া।
- অত্যাধিক প্রসাবের অনুভূতি: যদিও প্রসাব পুরোপুরি বের হয় না, তবুও মুত্র থলিতে পূর্ণতার অনুভূতি থাকে।
- শারীরিক দুর্বলতা বা অসুস্থতা: দীর্ঘস্থায়ী প্রসাব আঁটকে থাকা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যার ফলে শারীরিক দুর্বলতা বা অসুস্থতা অনুভূত হতে পারে।
প্রতিকার:
প্রসাব আঁটকে থাকার চিকিৎসা এর কারণের উপর নির্ভর করে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কিছু সাধারণ প্রতিকার পদ্ধতি হল:
- ঔষধ:
- অ্যালফা–ব্লকারস (যেমন, টামসুলোসিন) প্রস্টেট সমস্যার কারণে মুত্রনালীকে শিথিল করে প্রসাব বের হতে সাহায্য করতে পারে।
- ব্যথানাশক ওষুধ বা অ্যান্টিস্পাসমোডিকস মুত্রথলীতে শিথিলতা এনে ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- ক্যাটেটার ব্যবহার:
- যদি প্রসাব বের হতে না পারে, তবে চিকিৎসক ক্যাটেটারের মাধ্যমে মুত্র বের করার ব্যবস্থা নিতে পারেন।
- ক্যাথেটারাইজেশন হল একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটি পাতলা টিউব মুত্রথলীতে প্রবেশ করিয়ে প্রসাব বের করা হয়।
- সার্জারি:
- যদি মুত্রথলীতে পাথর বা টিউমার থাকে, তাহলে তা অপসারণের জন্য সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।
- পুরুষদের জন্য যদি প্রস্টেট বৃদ্ধি বা হাইপারট্রফি সমস্যা হয়, তবে প্রস্টেট অপসারণ বা সার্জারি করা হতে পারে।
- বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত পানি পান:
- পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং প্রচুর পরিমাণে শরীরচর্চা করা মুত্রের প্রবাহ ঠিক রাখতে সাহায্য করতে পারে।
- নিউরোস্টিমুলেশন:
- যদি স্নায়ু সমস্যার কারণে প্রসাব আঁটকে থাকে, তবে নিউরোস্টিমুলেশন বা স্নায়ু ট্রেইনিং কার্যকর হতে পারে।
- লিফট থেরাপি বা ফিজিক্যাল থেরাপি:
- মুত্রথলীর পেশী শক্তিশালী করতে ফিজিক্যাল থেরাপি বা প্যেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করতে হতে পারে।
সতর্কতা:
প্রসাব আঁটকে থাকা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে কিডনি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বা মুত্রথলীতে আঘাত বা ইনফেকশন হতে পারে। এজন্য এটি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।