Best Homeo Doctor

প্রসবের ফুল না পড়া কারন,লক্ষন,প্রতিকার

প্রসবের ফুল না পড়া (Failure of the Placenta to Deliver) বা প্ল্যাসেন্টার বাকি থাকা হল এমন একটি অবস্থা যেখানে প্রসবের পরও প্ল্যাসেন্টা (যা শিশুকে গর্ভে পুষ্টি এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে) পুরোপুরি বের হয়ে আসে না এবং কিছু অংশ গর্ভে রয়ে যায়। এটি একটি গুরুতর চিকিৎসাগত অবস্থা হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন।

কারণ:

প্রসবের ফুল বা প্ল্যাসেন্টার সঠিকভাবে বের না হওয়ার কিছু কারণ থাকতে পারে:

  1. প্ল্যাসেন্টা অ্যাডহেরেন্স (Placental adhesion): যখন প্ল্যাসেন্টা জরায়ুর দেওয়ালের সাথে খুব শক্তভাবে লেগে থাকে, তখন এটি পুরোপুরি বের হতে পারে না। এটি একটি রোগ যার নাম প্ল্যাসেন্টা অ্যাক্রেটা (Placenta Accreta) বা প্ল্যাসেন্টা ইনভ্যাজিটা (Placenta Increta), যেখানে প্ল্যাসেন্টা জরায়ুর দেয়ালে গভীরভাবে লেগে থাকে।
  2. প্ল্যাসেন্টা প্রেসিভা (Placenta Previa): যখন প্ল্যাসেন্টা জরায়ুর নীচের অংশে থাকে এবং গর্ভাশয়ের মুখে (Cervix) প্রবাহিত হয়, এটি গর্ভাশয় থেকে পুরোপুরি বের হতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
  3. অসুখী প্রসব প্রক্রিয়া: যদি প্রসবের সময় জরায়ুর সঙ্কোচন (Contractions) যথেষ্ট শক্তিশালী না হয় বা প্রসব যথাযথভাবে না হয়, তবে প্ল্যাসেন্টা বের হতে দেরি হতে পারে।
  4. মায়ের অতিরিক্ত রক্তস্রাব: যদি প্রসবের সময় মায়ের রক্তস্রাব বেশি হয় বা জরায়ুর স্বাভাবিক সংকোচন বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে প্ল্যাসেন্টা বের না হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  5. সিজেরিয়ান প্রসব: সিজারিয়ান (C-section) অপারেশন পরবর্তী সময়ে প্ল্যাসেন্টা বের না হওয়া বা আঠাল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  6. লম্বা সময় ধরে প্রসব: দীর্ঘ সময় ধরে প্রসবের প্রক্রিয়া চলতে থাকলে প্ল্যাসেন্টার বের হতে সময় নিতে পারে।
  7. গর্ভের অন্যান্য জটিলতা: কিছু বিশেষ পরিস্থিতি যেমন গর্ভের অস্বাভাবিক অবস্থান বা ইনফেকশনও এই সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

লক্ষণ:

প্রসবের ফুল বা প্ল্যাসেন্টার না পড়ার কিছু লক্ষণ হতে পারে:

  1. রক্তস্রাব: প্রসবের পর যদি রক্তস্রাব বেশি হয় এবং প্ল্যাসেন্টা পুরোপুরি বের না হয়, তবে তা গুরুতর অবস্থার ইঙ্গিত হতে পারে।
  2. ব্যথা বা অস্বস্তি: প্রসবের পর গর্ভাশয়ে ব্যথা বা অস্বস্তি থাকতে পারে, যদি প্ল্যাসেন্টা পুরোপুরি বের না হয়।
  3. হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া: প্ল্যাসেন্টার আংশিকভাবে বের না হওয়ার কারণে মায়ের রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
  4. পেটের নিচের দিকে চাপ অনুভব: যদি প্ল্যাসেন্টা কিছুটা অবশিষ্ট থাকে, তবে পেটের নিচের দিকে চাপ বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
  5. গর্ভাশয়ে অনুভূত অস্বাভাবিক গন্ধ: কখনো কখনো প্ল্যাসেন্টার না পড়ার কারণে গর্ভাশয়ে সঙ্কুচিত অংশের কারণে অস্বাভাবিক গন্ধ হতে পারে।

প্রতিকার:

প্রসবের ফুল না পড়া হলে তৎকালীন চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে:

  1. শল্যচিকিৎসা (Surgical intervention): যদি প্ল্যাসেন্টা বের না হয় এবং গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি হয়, তবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্ল্যাসেন্টা বের করা হতে পারে।
  2. অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি: যদি কোনো সংক্রমণ ঘটে থাকে, তবে অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি প্রয়োগ করা হতে পারে।
  3. রক্ত সঞ্চালন বা রক্তদান: যদি রক্তস্রাব বেশি হয়, তবে রক্ত বা প্লাজমা সঞ্চালন করা হতে পারে।
  4. ওষুধের মাধ্যমে প্রসব চলতে সাহায্য: কখনও কখনও, প্ল্যাসেন্টা পুরোপুরি বের হতে না পারলে, চিকিৎসক ওষুধ ব্যবহার করে জরায়ু সংকোচন বাড়াতে পারেন, যাতে প্ল্যাসেন্টা বের হতে সহায়তা হয়।
  5. ইন্টারভেনশনিস্ট ডেলিভারি: কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষজ্ঞরা সিজারিয়ান (C-section) অপারেশনের মাধ্যমে প্ল্যাসেন্টা এবং শিশুকে আলাদা করতে পারেন।

প্রতিরোধ:

প্রসবের ফুল না পড়া বা প্ল্যাসেন্টার আংশিকভাবে না বের হওয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মায়ের শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে, এটি কিছুটা প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি মা:

  1. গর্ভধারণের সময় নিয়মিত চিকিৎসক পরামর্শ নেন।
  2. অতিরিক্ত গর্ভধারণ বা দীর্ঘ সময় ধরে গর্ভাবস্থা থাকলে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করেন।
  3. প্রসবের সময় পেশাদার চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকেন, যেন কোন সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত সমাধান করা যায়।

প্রসবের ফুল না পড়া গুরুতর পরিস্থিতি হতে পারে, তাই এ ধরনের কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *