Best Homeo Doctor

প্রসবান্তে শিশু স্তনদুধ না খাওয়ার কারন,লক্ষন,প্রতিকার

প্রসবান্তে শিশু স্তনদুধ না খেলে (Newborn Refusing Breastfeeding) একটি উদ্বেগজনক সমস্যা হতে পারে, তবে এটি অনেক সময় অস্থায়ী সমস্যা হিসেবে দেখা যায়। স্তনদুধ শিশুদের জন্য সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবার এবং এর মাধ্যমে শিশু বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এবং অ্যান্টিবডি পায় যা তার সুস্থতা ও উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি নবজাতক স্তনদুধ না খায়, তবে এর পেছনে কিছু কারণ থাকতে পারে এবং সেগুলোর প্রতিকারও আছে।

প্রসবান্তে শিশু স্তনদুধ না খাওয়ার কারণ:

  1. প্রথম সময়ে স্তনদুধের আসতে সমস্যা:
    • কিছু মায়ের প্রথম কয়েক দিন স্তনদুধ আসতে সময় নিতে পারে, যার কারণে শিশুর কাছে যথেষ্ট দুধ পৌঁছাতে পারে না। শিশুটি তখন অনীহা বা বিরক্তি অনুভব করতে পারে।
  2. শিশুর পেট বা গলা সমস্যা:
    • শিশুর যদি পেটের সমস্যা (যেমন গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য) বা গলার সমস্যা (যেমন সর্দি বা ঠান্ডা) থাকে, তবে তাকে স্তনদুধ খাওয়াতে অসুবিধা হতে পারে।
  3. দুধের প্রবাহ কম হওয়া:
    • মায়ের স্তনে দুধের প্রবাহ যদি কম হয় বা মায়ের দুধ বের হতে সময় নেয়, তবে শিশুটি খেতে না চাওয়ার জন্য বিরক্ত হতে পারে।
  4. অস্বাভাবিক অবস্থান বা ভুল চোষা কৌশল:
    • যদি মা বা শিশু সঠিকভাবে স্তন নেন না বা শিশু স্তন চুষতে পারছে না (যেমন, স্তন ঠিকভাবে না ধরলে), তখন শিশুর খাওয়া প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
  5. শিশুর স্বাস্থ্য সমস্যা:
    • কিছু শারীরিক সমস্যা যেমন মুখের মাংসপিণ্ড বা প্যালেটের সমস্যা (যেমন, ফিসহিপ), কান বা গলা সংক্রমণ, বা জন্মগত সমস্যা শিশুর স্তনদুধ খাওয়াতে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
  6. মায়ের উদ্বেগ বা চাপ:
    • মা যদি অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন বা মানসিক চাপ অনুভব করেন (যেমন স্তনদুধ দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা), তাহলে শিশুরাও বিরক্ত বা অস্থির হতে পারে এবং তারাও স্তনদুধ খেতে চায় না।
  7. শিশুর অভ্যস্ততার অভাব:
    • কিছু শিশু প্রথমদিকে স্তনদুধ খাওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না থাকতে পারে বা যেসব শিশুর প্রাথমিকভাবে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো হয়েছে, তারা স্তনদুধের জন্য অভ্যস্ত হতে সময় নিতে পারে।
  8. দুধের স্বাদ পরিবর্তন:
    • কখনও কখনও মায়ের খাওয়া খাবারের কারণে স্তনদুধের স্বাদ পরিবর্তিত হতে পারে, যার কারণে শিশু সেটি খেতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।

প্রসবান্তে শিশুর স্তনদুধ না খাওয়ার লক্ষণ:

  1. খাবারে অনীহা:
    • শিশুটি স্তন খাওয়ার সময় একেবারে অস্বীকৃতি জানায় বা কয়েক মিনিটের বেশি স্তন চুষতে চায় না।
  2. অস্বস্তি বা বিরক্তি:
    • শিশুটি স্তন নেওয়ার সময় অস্বস্তি বা বিরক্তি দেখায়, যেমন মুখ গুজে রাখা, পাগলিয়ে হাঁটা, বা কাঁদা।
  3. ভিন্ন খাবারের প্রতি আগ্রহ:
    • কিছু শিশু তাদের মায়ের স্তনদুধের পরিবর্তে ফর্মুলা বা বোতল দুধ নিতে আগ্রহী হতে পারে, যা স্তনদুধ খাওয়ার প্রতি অনীহার লক্ষণ হতে পারে।
  4. অনেক ঘুমানো বা অতিরিক্ত তন্দ্রাচ্ছন্নতা:
    • শিশুটি যদি বেশি ঘুমিয়ে থাকে বা দুর্বল অনুভব করে, তবে এটি তার খাওয়া না চাওয়ার একটি লক্ষণ হতে পারে।
  5. বিরক্তি বা অস্থিরতা:
    • শিশুরা স্তন চুষতে চায় না এবং বিরক্তি বা অস্থিরতা দেখায় যখন তাকে স্তন দেওয়া হয়।
  6. ওজন হ্রাস:
    • যদি শিশুটি পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ না খায়, তবে তার ওজন বাড়তে সমস্যা হতে পারে এবং এটি একটি লক্ষণ হতে পারে যে শিশুটি যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি পাচ্ছে না।

প্রসবান্তে শিশুর স্তনদুধ না খাওয়ার প্রতিকার:

  1. মায়ের দুধের প্রবাহ বাড়ানো:
    • মায়ের দুধের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে জল পান করা, সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, এবং বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। শিশুকে স্তনদান করানোর আগে উষ্ণতা প্রদান (যেমন গরম কাপড় দিয়ে স্তন ম্যাসাজ করা) দুধের প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
  2. শিশুর অবস্থান সঠিক করা:
    • মায়ের উচিত শিশুকে সঠিকভাবে স্তন ধরানো এবং নিশ্চিত করা যে শিশুর মুখে স্তন পুরোপুরি ঢোকানো হয়েছে। এটি শিশুকে সঠিকভাবে দুধ খাওয়াতে সাহায্য করবে।
  3. শিশুকে আরামদায়ক পরিবেশে রাখা:
    • শিশুকে খাওয়ানোর সময় শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। খুব বেশি শব্দ বা অস্থিরতা শিশুর খাওয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
  4. প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
    • যদি শিশুর গলা, পেট বা অন্য কোন শারীরিক সমস্যা থাকে, যেমন সর্দি, গ্যাস, বা কোষ্ঠকাঠিন্য, তবে এটি চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে সমাধান করা উচিত।
  5. পেশাদার সহায়তা:
    • যদি শিশুটি স্তনদুধ খেতে না চায় বা এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়, তাহলে ল্যাকটেশন কনসালটেন্ট বা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তারা মায়ের স্তনদুধ খাওয়ানোর কৌশল, শিশুর খাওয়া সমস্যা এবং অন্যান্য চিকিত্সা পরামর্শ দিতে পারে।
  6. মায়ের উদ্বেগ কমানো:
    • মায়ের মানসিক চাপ কমানো এবং তাকে স্তনদুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী করা উচিত। মায়ের মনোবল বৃদ্ধি করলে শিশুও সুস্থভাবে দুধ খাবে।
  7. আলতোভাবে স্তনদুধ খাওয়ানো:
    • কিছু শিশুর জন্য অল্প অল্প করে স্তনদুধ খাওয়ানো ভালো হতে পারে, যেমন প্রথমে ছোট পরিমাণে দুধ দেওয়া এবং ধীরে ধীরে সময় বাড়ানো।
  8. ফর্মুলা দুধ বিকল্প:
    • যদি মায়ের দুধ কম আসে বা শিশুর কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, তবে ফর্মুলা দুধ হিসেবে একটি বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, তবে তা করার আগে শিশুর ডাক্তার বা ল্যাকটেশন কনসালটেন্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শেষ কথা:

শিশুদের স্তনদুধ না খাওয়ার সমস্যা সাধারণত কিছু সময়ের জন্য থাকে এবং এটি অনেক ক্ষেত্রে সঠিক যত্ন এবং মনোযোগের মাধ্যমে সমাধান করা যায়। তবে, যদি শিশুর খাওয়া সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা এর পেছনে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *