Best Homeo Doctor

প্রসবান্তে রক্তস্রাব কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

প্রসবান্তে রক্তস্রাব (Postpartum Bleeding) হলো সন্তান জন্ম দেওয়ার পর একথেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে গর্ভাশয় থেকে রক্তপাত হওয়া। এটি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া, যা প্রতিটি মায়ের মধ্যে ঘটে, তবে কখনো কখনো এটি অতিরিক্ত বা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এই রক্তস্রাবের মাধ্যমে শরীর অতিরিক্ত রক্ত ও অন্যান্য উপাদান বের করে, যা গর্ভধারণের সময় গর্ভাশয়ে জমে ছিল। তবে যদি রক্তস্রাব অত্যধিক হয়ে ওঠে বা কোনো জটিলতা দেখা দেয়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রসবান্তে রক্তস্রাবের কারণ:

  1. গর্ভাশয়ের সঙ্কোচন:
    • গর্ভধারণের পর গর্ভাশয়ের পেশী সংকুচিত হতে থাকে, যা রক্তস্রাবের অন্যতম কারণ। এটি প্রাকৃতিকভাবে গর্ভাশয় থেকে অতিরিক্ত রক্ত পরিষ্কার করে।
  2. গর্ভাশয়ে অবশিষ্ট প্লেসেন্টা বা প্লেসেন্টাল টিস্যু:
    • কখনো কখনো, গর্ভাশয়ে কিছু প্লেসেন্টাল টিস্যু বা অংশ রেখে আসে, যা রক্তপাতের কারণ হতে পারে। প্লেসেন্টাল টিস্যু যদি পুরোপুরি পরিষ্কার না হয়, তবে তা অতিরিক্ত রক্তস্রাব সৃষ্টি করতে পারে।
  3. গর্ভাশয়ের আঘাত:
    • শিশুর জন্মের সময় গর্ভাশয়ে আঘাত বা ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, যার কারণে রক্তপাত হতে পারে। বিশেষ করে যদি সিজারিয়ান অপারেশন বা অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে।
  4. গর্ভাশয়ের টোন (Tone) কমে যাওয়া:
    • কিছু ক্ষেত্রে, গর্ভাশয়ের পেশী যদি যথাযথভাবে সংকুচিত না হয় (যেমন, অতিরিক্ত প্রসবের কারণে), তবে এটি অতিরিক্ত রক্তপাত সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হেমোরেজ (Hemorrhage) হতে পারে।
  5. হরমোনাল সমস্যা:
    • প্রসবের পর, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা রক্তস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে, বিশেষত প্রোল্যাকটিনের (দুধ উৎপাদন হরমোন) সমস্যা হলে।
  6. রক্তের সমস্যা:
    • কিছু মহিলার রক্তের গুণগত সমস্যা বা রক্তস্বল্পতা (এনিমিয়া) থাকতে পারে, যার ফলে রক্তপাত বেশি হতে পারে।
  7. গর্ভাশয়ের সংক্রমণ:
    • যদি প্রসবের পরে গর্ভাশয়ে সংক্রমণ (এন্ডোমেট্রাইটিস) ঘটে, তবে এটি অতিরিক্ত রক্তপাত সৃষ্টি করতে পারে।
  8. প্লেসেন্টাল অবরোধ বা অন্য জটিলতা:
    • কিছু ক্ষেত্রে, গর্ভধারণের পর প্লেসেন্টা পুরোপুরি আলাদা না হওয়ার কারণে রক্তস্রাব হতে পারে। এটি “প্লেসেন্টাল রিটেনশন” (Placental Retention) হিসেবে পরিচিত।

প্রসবান্তে রক্তস্রাবের লক্ষণ:

  1. রক্তপাতের পরিমাণ:
    • সাধারণত প্রথম কয়েক দিন রক্তস্রাব বেশি হতে পারে, যা ধীরে ধীরে কমে আসে। এটি প্রাথমিকভাবে রক্তস্রাবের রঙে গা dark ় লাল হতে পারে, তারপর রক্তপাতের রঙ হালকা হয়ে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়।
    • সাধারণত রক্তস্রাব প্রথম ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বেশি থাকে, পরে এটি কমে যায়। প্রথম সপ্তাহে রক্তস্রাব অনেকটাই চলে আসে, এবং পরবর্তী সময়ে এটি হালকা হয়ে যায়।
  2. দুর্বলতা বা ক্লান্তি:
    • অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে মায়ের মধ্যে দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে, বিশেষত যদি রক্তস্বল্পতা ঘটে।
  3. কামড়ানোর অনুভূতি বা পেট ব্যথা:
    • প্রসব পরবর্তী সময়ে কিছু মহিলার গর্ভাশয়ে কামড়ানোর অনুভূতি বা পেটের নিচের অংশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এটি গর্ভাশয়ের সংকোচন বা আঘাতের কারণে হতে পারে।
  4. মলমূত্রের সমস্যার অনুভূতি:
    • কখনো কখনো অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে মহিলার মলমূত্রের সমস্যা বা বার বার মূত্রত্যাগের অনুভূতি হতে পারে।
  5. শরীরে প্রদাহ:
    • যদি গর্ভাশয়ে সংক্রমণ থাকে, তবে এটি শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে, শরীরের সারা অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।

প্রসবান্তে রক্তস্রাবের প্রতিকার:

  1. স্বাভাবিক রক্তস্রাবের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম:
    • প্রসবের পর প্রথম কিছু দিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাশয়ের সঠিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে সহায়তা করবে এবং অতিরিক্ত রক্তপাত কমাতে সাহায্য করবে।
  2. সন্তান খাওয়ানো:
    • শিশুকে সঠিকভাবে স্তনপান করানো গর্ভাশয়ের সঙ্কোচন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং এটি রক্তস্রাব কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  3. মেডিকেল মনিটরিং:
    • যদি রক্তপাত অতিরিক্ত হয়, অথবা যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
    • চিকিৎসক প্রয়োজন হলে বিশেষ পরীক্ষা (যেমন আলট্রাসনোগ্রাফি) করে সঠিক কারণ চিহ্নিত করতে পারেন।
  4. রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা:
    • অতিরিক্ত রক্তপাত হলে রক্তস্বল্পতা (এনিমিয়া) হতে পারে। এই ক্ষেত্রে সঠিক খাদ্যাভ্যাস (রক্তের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবার) এবং চিকিৎসকের পরামর্শে আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণ করা যেতে পারে।
  5. গর্ভাশয়ের টিস্যু পরিষ্কার করা:
    • যদি গর্ভাশয়ে প্লেসেন্টার বা টিস্যু থাকে, তবে চিকিৎসক এটি পরিষ্কার করার জন্য কিউটেজ (Curettage) বা অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
  6. সংক্রমণ প্রতিরোধ:
    • প্রসবের পর গর্ভাশয়ে যদি সংক্রমণ হয়ে থাকে, তবে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা দিতে পারেন।
  7. ঔষধের ব্যবহার:
    • কিছু ক্ষেত্রে, চিকিৎসক গর্ভাশয়ের সংকোচন আরও শক্তিশালী করার জন্য ঔষধ (যেমন অক্সিটোসিন) ব্যবহার করতে পারেন, যা রক্তপাত কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  8. হরমোন থেরাপি:
    • যদি হরমোনাল সমস্যা থাকে, তবে চিকিৎসক হরমোন থেরাপি দিতে পারেন।

উপসংহার:

প্রসবান্তে রক্তস্রাব একটি সাধারণ প্রক্রিয়া হলেও, কখনো কখনো এটি অতিরিক্ত বা বিপজ্জনক হতে পারে। সাধারণত এটি এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে কমে যায়, তবে অতিরিক্ত রক্তপাত বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চিকিৎসা এবং মনিটরিংয়ের মাধ্যমে প্রসব পরবর্তী রক্তস্রাব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *