Best Homeo Doctor

প্রসবান্তিক মূত্রাবরোধ কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

প্রসবান্তিক মূত্রাবরোধ (Postpartum Urinary Retention) হলো প্রসবের পর মূত্রাশয়ের কাজ করার সমস্যা, যেখানে মায়ের মূত্রত্যাগে বিলম্ব বা অসুবিধা হয়। এই সমস্যা সাধারণত গর্ভধারণ বা প্রসবের পর দেখা দেয় এবং এটি মায়ের জন্য বেশ অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে। মূত্রাবরোধের ফলে মূত্র সঞ্চিত হতে থাকে, যা মূত্রাশয়ের সংক্রমণ বা অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রসবান্তিক মূত্রাবরোধের কারণ:

  1. প্রসবকালীন চাপ:
    • প্রসবের সময় মূত্রাশয়ের উপর চাপ তৈরি হতে পারে। শিশুর মাথা বা শরীর মূত্রাশয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে মূত্রাশয়ের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে, ফলে মূত্রাবরণ সৃষ্টি হতে পারে।
  2. মূত্রাশয়ের টিস্যুর ক্ষতি:
    • প্রাকৃতিক প্রসবের সময় অথবা সিজারিয়ান অপারেশনের ফলে মূত্রাশয়ের আশপাশের টিস্যু বা স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে। এর কারণে মূত্রাশয় সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যার ফলে মূত্রাবরোধ হতে পারে।
  3. এপিসিওটোমি বা প্রসবকালীন সেলাই:
    • যদি মায়ের পেরিনিয়ামে (যৌনাঙ্গের আশপাশ) সেলাই করা হয়, তাহলে তা মূত্রাশয়ের স্নায়ু বা টিস্যুতে আঘাত দিতে পারে এবং মূত্রাবরণ সৃষ্টি করতে পারে।
  4. মূত্রাশয়ের অস্বাভাবিক প্রসারণ:
    • প্রসবের সময় মূত্রাশয় অতিরিক্ত প্রসারিত হতে পারে, যা মূত্রাশয়ের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং মূত্রাবরোধ সৃষ্টি করতে পারে।
  5. হরমোনাল পরিবর্তন:
    • প্রসবের পর শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনগুলো মূত্রাশয়ের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা দিতে পারে।
  6. শারীরিক বা মানসিক চাপ:
    • প্রসবের পর মায়ের শারীরিক ও মানসিক চাপ অনেক বাড়ে, যার কারণে মূত্রের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
  7. অ্যানেস্থেশিয়া বা ব্যথানাশক ওষুধ:
    • সিজারিয়ান অপারেশন বা অন্যান্য প্রসবের সময় প্রয়োগ করা অ্যানেস্থেশিয়া বা ব্যথানাশক ওষুধ মূত্রাশয়ের স্বাভাবিক কাজের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে মূত্রাবরণ হতে পারে।
  8. পানি বা তরল পানের কম পরিমাণ:
    • প্রসবের পর যদি মায়ের শরীরে পানির পরিমাণ কম থাকে বা অতিরিক্ত পেসি থাকে, তাহলে মূত্রাশয় স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না।

প্রসবান্তিক মূত্রাবরোধের লক্ষণ:

  1. মূত্রত্যাগে বিলম্ব:
    • প্রসবের পর মায়ের মূত্রত্যাগে বিলম্ব হতে পারে বা মূত্রপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  2. পেটের নিচে চাপ অনুভূতি:
    • মূত্রাশয়ে মূত্র জমে থাকলে পেটের নিচে চাপ বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
  3. মূত্রাশয়ের পূর্ণতা:
    • মূত্রাশয় পূর্ণ হয়ে যেতে পারে, যার ফলে মায়ের পেট ফুলে যেতে পারে এবং মূত্রত্যাগের সময় অসুবিধা হতে পারে।
  4. মূত্রদ্বার থেকে সামান্য মূত্র নিঃসরণ:
    • মূত্রাবরোধের কারণে মূত্রপ্রবাহ শুরু হতে সময় নেয় এবং কিছু ক্ষেত্রে একবারে খুব সামান্য মূত্র নিঃসৃত হয়।
  5. মূত্রাশয়ের সংক্রমণ:
    • মূত্রাবরোধের কারণে মূত্রাশয়ে মাইক্রোবায়াল সংক্রমণ হতে পারে, যার ফলে পেটব্যথা, জ্বর, এবং মূত্রের সঙ্গতি পরিবর্তন হতে পারে।
  6. শরীরের অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি:
    • মূত্রাবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, শ্বাসকষ্ট বা শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রসবান্তিক মূত্রাবরোধের প্রতিকার:

  1. পানি বা তরল গ্রহণ বাড়ানো:
    • মায়ের শরীরে পানি বা তরলের পরিমাণ যথেষ্ট হলে মূত্রাশয়ের কার্যক্ষমতা ফিরে আসতে পারে। সঠিক পরিমাণে পানি পানে মূত্রপ্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে।
  2. মূত্রাশয়ের হালকা ম্যাসাজ:
    • মূত্রাশয়ের উপর হালকা চাপ বা ম্যাসাজ করা যেতে পারে, যাতে মূত্রাশয় শিথিল হয়ে এবং মূত্রপ্রবাহ সহজ হয়।
  3. গরম সেঁক:
    • মূত্রাশয়ের এলাকাতে গরম সেঁক দেওয়া মূত্রাশয়কে শিথিল করে এবং মূত্রপ্রবাহকে সহায়ক হতে পারে।
  4. মূত্রত্যাগের চেষ্টা:
    • প্রথম কয়েক দিন মায়ের মূত্রত্যাগে অসুবিধা হলে, তাকে ধীরে ধীরে মূত্রত্যাগের চেষ্টা করতে উৎসাহিত করা উচিত। এটি মূত্রাশয়কে কাজ করতে সহায়তা করবে।
  5. মূত্রাশয়ের পূর্ণতা নিরীক্ষণ:
    • যদি মায়ের মূত্রাশয় পূর্ণ হয়ে যায় এবং ব্যথা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করে, তবে তা ডাক্তার দ্বারা নিরীক্ষণ করা উচিত।
  6. মূত্রাশয়ের স্নায়ু বা টিস্যুর ক্ষত সেরে উঠতে সহায়তা:
    • যদি প্রসবকালীন সময়ে স্নায়ু বা টিস্যুর ক্ষতি হয়ে থাকে, তবে তা সেরে ওঠার জন্য যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
  7. মূত্রথেরাপি বা মেডিক্যাল টিউব ব্যবহার:
    • কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যদি মূত্রাবরোধ গুরুতর হয়, তবে মূত্রথেরাপি বা ক্যাথেটার ব্যবহার করা হতে পারে, যাতে মূত্রাশয় স্বাভাবিকভাবে খালি হতে পারে।
  8. পেশী বা মূত্রাশয়ের প্রশিক্ষণ:
    • মূত্রাশয়ের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশী শক্তিশালী করা যেতে পারে, যাতে মূত্রপ্রবাহের সমস্যা কমে যায়। এতে মূত্রাশয়ের স্নায়ু ও পেশী পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা হতে পারে।
  9. ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া:
    • যদি মূত্রাবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হয় বা গুরুতর হয়ে ওঠে, তবে একজন ইউরোলজিস্ট বা গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তারা উপযুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে সহায়তা করতে পারেন।

উপসংহার:

প্রসবান্তিক মূত্রাবরোধ একটি সাধারণ, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা এবং যত্ন নেওয়া হয়, তবে এটি সাধারণত কিছুদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। তবে, যদি সমস্যা গুরুতর হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের সাহায্য নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *