Best Homeo Doctor

প্রমেহ কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

প্রমেহ (Syphilis) একটি যৌনবাহিত সংক্রমণ (STI), যা ট্রপোনেমা প্যালিডাম (Treponema pallidum) নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এটি সাধারণত নিরাপদ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়, তবে এটি শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও অন্য মাধ্যমে (যেমন গর্ভাবস্থায় মা থেকে শিশুর কাছে) ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রমেহের কিছু বিশেষ পর্যায় থাকে, এবং এটি দ্রুত চিকিৎসা না করলে শরীরে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

কারণ:

প্রমেহের কারণ হলো ট্রপোনেমা প্যালিডাম নামক ব্যাকটেরিয়া, যা প্রধানত যৌন সম্পর্ক (ভ্যাজাইনাল, অরাল, অ্যানাল) বা গর্ভাবস্থায় মা থেকে শিশুর মাধ্যমে ছড়ায়। এটি শরীরের ক্ষত, আলসার বা চামড়ায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

প্রমেহের সংক্রমণের কারণ হতে পারে:

  1. অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক: কন্ডম ব্যবহার না করা বা নিরাপদ যৌন আচরণ না করা প্রমেহের প্রধান কারণ।
  2. মাতৃ থেকে শিশুতে সংক্রমণ: গর্ভাবস্থায় সংক্রামিত মা তার শিশুকে প্রমেহের মাধ্যমে সংক্রমিত করতে পারেন (এটি সাধারণত জন্মের সময় ঘটে)।
  3. বাহ্যিক সংস্পর্শ: প্রমেহের ক্ষত বা আলসারে সরাসরি সংস্পর্শ হলে (যেমন চুম্বনের মাধ্যমে) এটি ছড়াতে পারে।

লক্ষণ:

প্রমেহের লক্ষণগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত হয় এবং সাধারণত চারটি পর্যায়ে বিভক্ত থাকে:

প্রথম পর্যায় (Primary stage):

  1. ক্ষত বা আলসার: সংক্রমণের প্রথম লক্ষণ হল লিঙ্গ, মূত্রনালী, যোনি বা মাংসপেশিতে এক বা একাধিক ছোট, গোলাকার ক্ষত বা আলসার যা চিকন ব্যথাহীন হয়। এটি সাধারণত ৩-৬ সপ্তাহ ধরে থাকে এবং নিজে নিজে সেরে যায়।
  2. লক্ষণহীন পর্যায়: কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি কোনো লক্ষণ সৃষ্টি না করে নিজে নিজে চলে যায়, তবে ব্যাকটেরিয়া শরীরে অবস্থান করে।

দ্বিতীয় পর্যায় (Secondary stage):

  1. চামড়ায় ্যাশ: শরীরের বিভিন্ন স্থানে (বিশেষ করে হাত এবং পায়ের তলাতে) লালচে র‍্যাশ হতে পারে।
  2. পৃথক ক্ষত: মুখের ভেতরে বা লিঙ্গের উপর অতিরিক্ত ক্ষত তৈরি হতে পারে।
  3. দেহে আলসার বা ফোসকা: জ্বর, মাথাব্যথা, গা-ঘর্ম হওয়া, গলার ব্যথা বা শরীরের অন্যান্য অংশে ক্ষত বা ফোসকা তৈরি হতে পারে।
  4. লসিকা গ্রন্থির স্ফীতি: শারীরিক পর্যায়ে লসিকা গ্রন্থির আকার বেড়ে যেতে পারে।

লুকানো বা ল্যাটেন্ট পর্যায় (Latent stage):

  • এই পর্যায়ে প্রমেহের কোনো লক্ষণ থাকে না, কিন্তু ব্যাকটেরিয়া শরীরে অবস্থান করে এবং পরবর্তী সময় এটি আবার সক্রিয় হতে পারে।

তৃতীয় পর্যায় (Tertiary stage):

  • এটি প্রমেহের সর্বাধিক মারাত্মক পর্যায়, যা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করতে পারে। এই পর্যায়ে প্রমেহ হার্ট, মস্তিষ্ক, যকৃত, মজ্জা বা হাড়ের ক্ষতি করতে পারে, এবং এটি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
  • মস্তিষ্কে বা স্নায়ুতে ক্ষতি হওয়া, হার্টের রোগ (যেমন, আর্সার্টারির ক্ষতি) বা এমনকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নষ্ট হয়ে যাওয়া।

প্রতিকার:

প্রমেহের চিকিৎসা সম্ভব এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করলে এটি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। যদি এটি কোনো পর্যায়ে চলে যায়, তবে রোগটি গুরুতর হয়ে উঠতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

  1. অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা:
    • প্রমেহের চিকিৎসার জন্য সাধারণত পেনিসিলিন (Penicillin) ব্যবহৃত হয়। এটি একটি অ্যান্টিবায়োটিক যা খুবই কার্যকর এবং দ্রুত রোগটি সারাতে সাহায্য করে।
    • পেনিসিলিনের প্রয়োগ সুনির্দিষ্ট ডোজ অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়া হয়।
  2. যৌন সঙ্গীর চিকিৎসা:
    • যদি আপনি প্রমেহে আক্রান্ত হন, তবে আপনার সমস্ত যৌন সঙ্গীকে চিকিৎসা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রোগটির পুনরাবৃত্তি বা ছড়ানো রোধ করতে সাহায্য করবে।
  3. যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সতর্কতা:
    • কন্ডম ব্যবহারের মাধ্যমে প্রমেহ সহ অন্যান্য যৌনবাহিত রোগের থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
    • যৌন সম্পর্কের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, বিশেষত একাধিক সঙ্গী বা নিরাপদ যৌন অভ্যাস না থাকা বিপজ্জনক হতে পারে।
  4. প্রতিরোধ:
    • প্রমেহের মত যৌনবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য নিরাপদ যৌন সম্পর্ক নিশ্চিত করতে হবে। কন্ডম ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
    • রোগটি দ্রুত চিহ্নিত করার জন্য যৌন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত, বিশেষত যদি আপনি বা আপনার সঙ্গী প্রমেহ বা অন্য কোনো যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত হন।
  5. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ:
    • যদি প্রমেহের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তারা সঠিক চিকিৎসা শুরু করতে পারেন এবং রোগটি থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করতে পারেন।

মনে রাখতে হবে:

প্রমেহ দ্রুত চিকিৎসা না করলে এটি গুরুতর শারীরিক জটিলতা তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে তৃতীয় পর্যায়ে। তাই যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে তা উপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *