Best Homeo Doctor

প্যারালাইসিস কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

প্যারালাইসিস হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরের এক বা একাধিক অংশের পেশী সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এটি সাধারণত মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতির কারণে হয়, এবং এটি শরীরের স্বাভাবিক গতি এবং কাজকর্মের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে।

প্যারালাইসিসের কারণ:

প্যারালাইসিসের কারণ বিভিন্ন হতে পারে, এর মধ্যে কিছু প্রধান কারণ হল:

  1. স্ট্রোক (Stroke):
    • মস্তিষ্কে রক্ত ​​সরবরাহে বাধা ঘটলে স্ট্রোক ঘটে, যা মস্তিষ্কের একটি অংশের কার্যকারিতা বন্ধ করে দেয় এবং প্যারালাইসিস সৃষ্টি করতে পারে। স্ট্রোকের কারণে শরীরের এক বা একাধিক অংশের পেশী অচল হয়ে যেতে পারে।
  2. ট্রমা বা আঘাত (Trauma or Injury):
    • মেরুদণ্ডের আঘাত বা দুর্ঘটনা (যেমন গাড়ি দুর্ঘটনা, ফ্যাল) স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে প্যারালাইসিস হতে পারে। মেরুদণ্ডের ওপর আঘাত পেলে পেছনের অংশের পেশীগুলি প্যারালাইজ হতে পারে।
  3. নিউরোলজিকাল রোগ (Neurological Disorders):
    • স্নায়ুতন্ত্রের কিছু রোগ যেমন গিলিয়ানবার সিঞ্জ্রোম (Guillain-Barré syndrome), এলএস (ALS) (Amyotrophic Lateral Sclerosis), মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis) ইত্যাদি প্যারালাইসিসের কারণ হতে পারে। এসব রোগ স্নায়ু ধ্বংস করতে পারে এবং মস্তিষ্ক ও শরীরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত করতে পারে।
  4. মস্তিষ্কের টিউমার (Brain Tumor):
    • মস্তিষ্কের টিউমার স্নায়ু বা মস্তিষ্কের কোনো অংশে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে প্যারালাইসিস হতে পারে।
  5. সার্বিক স্নায়ু রোগ (Peripheral Nerve Disorders):
    • স্নায়ুতন্ত্রের বা স্নায়ু অঞ্চলের ক্ষতি হলে প্যারালাইসিস হতে পারে। এটি স্নায়ু সংক্রমণ বা আঘাতের কারণে হতে পারে।
  6. ইনফেকশন (Infection):
    • কিছু সংক্রমণ যেমন মেনিনজাইটিস বা মস্তিষ্কের অন্যান্য সংক্রমণ প্যারালাইসিস সৃষ্টি করতে পারে। এসব সংক্রমণ স্নায়ুতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং স্নায়ু পরিচালনা করতে ব্যর্থ হতে পারে।
  7. পলিও (Polio):
    • পোলিও (Poliomyelitis) একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা স্নায়ুতে আক্রমণ করে এবং প্যারালাইসিস সৃষ্টি করতে পারে। পোলিও সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে এটি প্রাপ্তবয়স্কদেরও আক্রান্ত করতে পারে।
  8. ডায়াবেটিস (Diabetes):
    • দীর্ঘস্থায়ী ডায়াবেটিস স্নায়ু ক্ষতি করতে পারে, যা ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি (Diabetic Neuropathy) সৃষ্টি করতে পারে এবং প্যারালাইসিসের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
  9. অটোইমিউন রোগ (Autoimmune Diseases):
    • কিছু অটোইমিউন রোগ যেমন মায়াস্থেনিয়া গ্রাভিস (Myasthenia Gravis) এবং লুপাস (Lupus) স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত করে প্যারালাইসিস সৃষ্টি করতে পারে।
  10. বেরি বেরি (Beriberi):
    • ভিটামিন বি১ (থিয়ামিন) এর অভাবেও স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে, যা প্যারালাইসিসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

প্যারালাইসিসের লক্ষণ:

প্যারালাইসিসের লক্ষণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, এর মধ্যে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. শরীরের এক বা একাধিক অংশের শক্তিহীনতা (Weakness in One or More Parts of the Body):
    • প্যারালাইসিসের কারণে এক বা একাধিক অংশের পেশী শক্তিহীন হয়ে পড়ে। এটি সাধারণত হাত, পা বা শরীরের অন্য কোনো অংশে হতে পারে।
  2. হাত বা পায়ের অচল বা নড়াচড়া না করা (Inability to Move Limbs):
    • প্যারালাইসিসের ফলে শারীরিক অঙ্গের এক বা একাধিক অংশে নড়াচড়া করার ক্ষমতা হারানো যেতে পারে।
  3. বক্তৃতার সমস্যা (Speech Difficulty):
    • মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতির কারণে কথা বলতে সমস্যা হতে পারে, এবং কিছু ক্ষেত্রে কথা বলা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  4. শ্বাসকষ্ট (Difficulty in Breathing):
    • যদি প্যারালাইসিস শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুর ওপর প্রভাব ফেলে, তাহলে শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে।
  5. অস্বাভাবিক অনুভূতি (Abnormal Sensations):
    • প্যারালাইসিসের কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে সিঁড়ি, ঝাঁকুনি বা অবশ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে।
  6. পেইন বা ব্যথা (Pain or Discomfort):
    • কিছু ক্ষেত্রে, প্যারালাইসিসের কারণে তীব্র ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে স্নায়ু বা পেশী ক্ষতিগ্রস্ত হলে।
  7. দৃষ্টির সমস্যা (Vision Problems):
    • কিছু প্যারালাইসিসের কারণে দৃষ্টি blurry বা ডাবল ভিশন হতে পারে।
  8. কান্না বা হাসির অনিয়ন্ত্রিত অবস্থা (Uncontrolled Crying or Laughing):
    • মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণে কিছু মানুষের হাসি বা কান্না নিয়ন্ত্রণের সমস্যা হতে পারে।

প্যারালাইসিসের প্রতিকার:

প্যারালাইসিসের চিকিৎসা তার কারণ এবং শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত কিছু চিকিৎসা ও প্রতিকার রয়েছে:

  1. ডাক্তারী পরামর্শ (Medical Consultation):
    • প্যারালাইসিসের চিকিৎসার জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, চিকিৎসক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণ করতে পারবেন।
  2. ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy):
    • প্যারালাইসিসের কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে শক্তিহীনতা বা অচলতা ঘটলে, ফিজিওথেরাপি বা শারীরিক চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এতে পেশী শক্তিশালী করা, গতি ফেরানো এবং কাঁধ, হাত বা পা সচল রাখা যায়।
  3. ওষুধ (Medications):
    • প্যারালাইসিসের কারণ অনুযায়ী কিছু ওষুধ দেওয়া হতে পারে। যেমন স্ট্রোকের পর অ্যান্টিকোঅ্যাগুল্যান্টস, স্নায়ু সমস্যা নিরাময়ের জন্য স্নায়ু শক্তির ওষুধ, বা প্রদাহ কমানোর জন্য স্টেরয়েডস।
  4. সার্জারি (Surgery):
    • মেরুদণ্ড বা মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত বা সমস্যা থাকলে শল্যচিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। তবে এটি রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে।
  5. মাথার ঘাড়ের নিরাপত্তা (Neck and Head Safety):
    • দুর্ঘটনা বা আঘাতের কারণে প্যারালাইসিস হলে মাথা বা ঘাড়ের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। শারীরিক চাপ কমানোর জন্য মেডিকেল সরঞ্জাম বা নেক ব্রেস ব্যবহার করা হতে পারে।
  6. মনোসামাজিক সহায়তা (Psychosocial Support):
    • প্যারালাইসিস একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলতে পারে, তাই কাউন্সেলিং, মানসিক সহায়তা এবং সঠিক পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  7. স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা (Healthy Lifestyle):
    • সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম প্যারালাইসিসের ক্ষেত্রে দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়ক হতে পারে।

শেষ কথা:

প্যারালাইসিস একটি গুরুতর অবস্থার মধ্যে পড়ে, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঠিক চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি এবং মনোযোগী যত্নের মাধ্যমে অনেক রোগীই পুনরায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *