Best Homeo Doctor

পৌনপুনিক জ্বর কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

পৌনপুনিক জ্বর (Relapsing Fever) হলো এমন একটি ধরনের জ্বর, যেখানে কিছু দিনের জন্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় (জ্বর), তারপর কিছু সময়ের জন্য স্বাভাবিক হয়ে যায়, এবং পরবর্তীতে আবার জ্বর ফিরে আসে। এটি সাধারণত একাধিক চক্রের মধ্যে ঘটে, যেখানে জ্বরের পর্যায় এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রার পর্যায় alternates করে।

পৌনপুনিক জ্বর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাকটেরিয়া বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে, তবে কিছু ভাইরাসও এই ধরনের জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।

পৌনপুনিক জ্বরের কারণ:

  1. লেইশম্যানিয়াসিস (Leishmaniasis):
    • এটি একটি পরজীবী সংক্রমণ যা প্রাথমিকভাবে মশার কামড় থেকে ছড়ায়। তবে, এটি অনেক সময় পৌনপুনিক জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।
  2. বোরেলিয়া ইনফেকশন (Borrelia Infection):
    • বোরেলিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হওয়া লাইম ডিজিজ বা টিকা বোরেলিওসিস (Tick-borne relapsing fever) পৌনপুনিক জ্বরের অন্যতম কারণ। এটি মূলত টিক দ্বারা ছড়ায়।
  3. টাইফয়েড (Typhoid Fever):
    • টাইফয়েড একটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (Salmonella typhi) যা দীর্ঘস্থায়ী পৌনপুনিক জ্বরের সৃষ্টি করতে পারে।
  4. ম্যালেরিয়া (Malaria):
    • ম্যালেরিয়া একটি অত্যন্ত সাধারণ সংক্রমণ যা কিছু সময়ের জন্য তাপমাত্রা বাড়িয়ে পরে আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। এর কারণ হল প্লাসমোডিয়াম পরজীবী
  5. টিউবারকিউলোসিস (TB):
    • টিবি (Tuberculosis) এক ধরণের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যা শরীরে পৌনপুনিক জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।
  6. জ্বরের কারণ হিসাবে ভাইরাস: কিছু ভাইরাস যেমন কক্সাকি ভাইরাস বা ডেঙ্গু ভাইরাস বা চিকুনগুনিয়া ভাইরাস যে কোনো ধরনের পৌনপুনিক জ্বর সৃষ্টি করতে পারে।
  7. অটোইমিউন রোগ (Autoimmune diseases): কিছু অটোইমিউন রোগ যেমন লুপাস বা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস-এও পৌনপুনিক জ্বর দেখা দিতে পারে।

পৌনপুনিক জ্বরের লক্ষণ:

  1. জ্বরের উত্থান পতন: তাপমাত্রা কিছু দিন সর্দি বা অন্যান্য সংক্রমণজনিত কারণে বৃদ্ধি পায় এবং পরে কিছু সময়ের জন্য তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায়। এরপর আবার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  2. শরীরের দুর্বলতা: জ্বরের কারণে শরীর দুর্বল এবং ক্লান্ত হয়ে যায়। যেহেতু এটি ধীরে ধীরে হয়, তাই শক্তির অভাব এবং অস্বস্তি হতে পারে।
  3. মাথাব্যথা: জ্বরের সময় মাথাব্যথা হতে পারে, বিশেষত শিখরে জ্বরের সময়।
  4. শরীরের ব্যথা: গাঁটে বা পেশীতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  5. শীতল অনুভূতি বা কাঁপুনি: জ্বরের সময় শীতল অনুভূতি বা কাঁপুনি হতে পারে।
  6. ঘাম হওয়া: যখন তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে, তখন প্রচুর ঘাম হতে পারে।
  7. বমি বা বমি ভাব: কখনও কখনও জ্বরের সাথে বমি বা বমি ভাবও দেখা দিতে পারে।

পৌনপুনিক জ্বরের প্রতিকার:

  1. ডাক্তারের পরামর্শ: পৌনপুনিক জ্বরের ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বিভিন্ন সংক্রমণ বা গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে।
  2. অ্যান্টিবায়োটিক: যদি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (যেমন টিউবারকিউলোসিস, টাইফয়েড) বা বোরেলিয়া বা প্লাসমোডিয়াম পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট হয়, তবে চিকিৎসক সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধ দেবেন।
  3. বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত পানি: শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি।
  4. প্যারাসিটামল: তাপমাত্রা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা অন্যান্য জ্বর কমানোর ওষুধ নিতে হতে পারে।
  5. ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট: খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ভিটামিন ডি, সি এবং খনিজ উপাদান যুক্ত করতে হবে, যাতে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
  6. শরীর ঠান্ডা রাখা: ঠাণ্ডা সেঁক বা ঠান্ডা পানিতে স্নান করা শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  7. বিশেষ ইনফেকশন বা পরজীবী নিরাময়: যদি টিকবোর্ন ফিভার বা অন্য পরজীবী সংক্রমণের কারণে জ্বর হয়, তবে অ্যান্টিপারাসাইটিক মেডিসিন প্রয়োজন হতে পারে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • যদি জ্বর ৩ দিন বা তার বেশি থাকে।
  • তীব্র মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঘাম, বা শরীরে ্যাশ দেখা দেয়।
  • যদি তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়ে যায়।
  • যদি জ্বরের সাথে বমি, বিভ্রান্তি, বা অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দেয়।

পৌনপুনিক জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং এটি যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয় তবে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *