Best Homeo Doctor

পোড়া মারাত্মক কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

পোড়া মারাত্মক (Severe burn) হলো এমন এক ধরনের ত্বক বা শরীরের আঘাত, যা গভীরভাবে ত্বক, পেশী বা অন্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি একটি চিকিৎসাগত জরুরি অবস্থা এবং এর জন্য দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।

মারাত্মক পোড়ার কারণ:

  1. তীব্র তাপ: গরম তরল পদার্থ (যেমন গরম পানি, স্যুপ, তেল), আগুন, বা গরম বস্তুতে ত্বক বা শরীরের অংশের সংস্পর্শে আসা।
  2. বিদ্যুৎ বা বৈদ্যুতিক আঘাত: বৈদ্যুতিক শক বা সরাসরি বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে আসা।
  3. রাসায়নিক পদার্থ: ক্ষতিকর রাসায়নিক বা কেমিক্যালের সাথে ত্বকের যোগাযোগ হতে পারে, যেমন অ্যাসিড বা ক্ষার।
  4. সূর্যের অতিরিক্ত তাপ: দীর্ঘ সময় ধরে সরাসরি সূর্যের আলোতে থাকা (যা খুব বেশি তীব্র সানবার্নের কারণে হতে পারে)।
  5. নিরাপত্তাহীন গ্যাস বা অগ্নিকাণ্ড: গ্যাস লিক বা অগ্নিকাণ্ডের ফলে তীব্র তাপ সৃষ্টি হয়ে মারাত্মক পোড়া হতে পারে।

মারাত্মক পোড়ার লক্ষণ:

  1. গভীর ক্ষত: মারাত্মক পোড়ার ফলে ত্বকের উপরের স্তর ছাড়াও ত্বক, পেশী বা অন্য অঙ্গের গভীর অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  2. কালো বা সাদা ত্বক: পোড়া জায়গা কালো, সাদা বা বাদামী হয়ে যেতে পারে, যা ত্বকের গভীর ক্ষতির লক্ষণ।
  3. পানি বা পুঁজের ফোলানো (ব্লিস্টার): মারাত্মক পোড়া থেকে বড় বড় ফোলানো বা ব্লিস্টার (ফোলানো) সৃষ্টি হতে পারে, যা মারাত্মক ক্ষতি বা ইনফেকশনের দিকে ইঙ্গিত দেয়।
  4. তীব্র ব্যথা: পোড়া জায়গায় প্রচণ্ড ব্যথা বা জ্বালা অনুভূত হতে পারে। তবে গুরুতর পোড়ায় ব্যথার অনুভূতি কম বা সম্পূর্ণ চলে যেতে পারে (যেহেতু ত্বকের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে)।
  5. শরীরের অন্য অংশের প্রদাহ: মারাত্মক পোড়া শক সৃষ্টি করতে পারে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে প্রদাহ বা সিস্টেমিক রিঅ্যাকশন দেখা দিতে পারে।
  6. হালকা বা ভারী জ্বর: মারাত্মক পোড়া থেকে শরীরে প্রদাহ ও ইনফেকশন হতে পারে, যার ফলে জ্বর উঠতে পারে।
  7. হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি বা রক্তচাপ কমে যাওয়া: মারাত্মক পোড়া শক সৃষ্টি করে এবং এটি রক্তচাপ কমাতে পারে।

মারাত্মক পোড়ার প্রতিকার:

  1. ফিল্ড চিকিৎসা (প্রাথমিক চিকিৎসা):
    • ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলা: মারাত্মক পোড়া হলে ত্বককে ঠাণ্ডা বা কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে নিন। তবে খুব বেশি ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করবেন না, এটি ত্বকে শক সৃষ্টি করতে পারে।
    • অবিলম্বে চিকিৎসা নিতে হবে: মারাত্মক পোড়া ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যেতে হবে।
    • পোড়া স্থানে কোনও কিছু লাগাবেন না: পোড়া জায়গায় কোনো তেল, মলম বা ক্রিম লাগাবেন না, কারণ এটি ক্ষতিকে আরও বাড়াতে পারে এবং ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে।
  2. চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা:
    • অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথা উপশমকারী ওষুধ: গুরুতর পোড়া থেকে আক্রান্ত ত্বক বা শরীরের অংশে ইনফেকশন হতে পারে। চিকিৎসক ব্যথা উপশম, অ্যান্টি-বায়োটিক বা অন্যান্য ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করবেন।
    • ফোলানো (Blister) তোলা বা অপসারণ: বড় ব্লিস্টার বা ফোলানো পুঁজি হলে সেগুলো চিকিৎসকই উপযুক্তভাবে খুলে দেবেন।
    • ত্বকের গ্রাফটিং: কিছু ক্ষেত্রে, যদি ত্বক গুরুতরভাবে পুড়ে যায় এবং সেগুলি সেরে না যায়, তবে চিকিৎসক ত্বক গ্রাফটিং (যাতে মৃত ত্বক সরিয়ে নতুন ত্বক বসানো হয়) করতে পারেন।
  3. পানি পান শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখা: মারাত্মক পোড়া শরীরের হাইড্রেশন কমিয়ে দিতে পারে। এজন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং ইনফ্লুড ভরাট করা প্রয়োজন।
  4. এমার্জেন্সি সাপোর্ট:
    • অক্সিজেন সাপোর্ট: গুরুতর পোড়ার কারণে শরীর শক বা শ্বাসকষ্টের মধ্যে পড়তে পারে, তখন অক্সিজেন সাপোর্ট প্রদান করা হতে পারে।
    • প্লাজমা বা রক্তের সাপোর্ট: মারাত্মক পোড়া রোগীর রক্তচাপ কমে যেতে পারে, তখন রক্ত বা প্লাজমা সাপোর্ট দেওয়া হতে পারে।

সাবধানতা:

  • প্রতিবার পোড়া থেকে বাঁচতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবলম্বন করা: বাড়িতে বা বাইরে কাজ করার সময় নিরাপত্তা নিয়ম মেনে চলা উচিত, যেমন গরম তরল বা বস্তু থেকে নিরাপদে থাকা, সানস্ক্রীন ব্যবহার করা, বৈদ্যুতিক তারের কাছ থেকে নিরাপদে থাকা ইত্যাদি।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখা: শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রাখতে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা জরুরি।

মারাত্মক পোড়া জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে, তাই দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *