Best Homeo Doctor

পেরিকার্ডাইটিস কি, কারন,লক্ষন,প্রতিকার

পেরিকার্ডাইটিস (Pericarditis) হলো হৃদপিণ্ডের চারপাশে থাকা ঝিল্লি বা পর্দা (পেরিকার্ডিয়াম) এর প্রদাহ। পেরিকার্ডিয়াম হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং এটি হৃদপিণ্ডের মুভমেন্টে সাহায্য করে। যখন এই পর্দায় প্রদাহ হয়, তখন এটি হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে এবং কখনও কখনও এতে ব্যথা বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

কারণ:

  1. ভাইরাস সংক্রমণ: ভাইরাসের সংক্রমণ, বিশেষ করে কক্সসাকিভাইরাস বা এডেনোভাইরাস, পেরিকার্ডাইটিস সৃষ্টি করতে পারে।
  2. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, যেমন টিউবারকুলোসিস বা স্ট্রেপ্টোকোক্কাস, পেরিকার্ডাইটিস সৃষ্টি করতে পারে।
  3. ফাঙ্গাল সংক্রমণ: কিছু ফাঙ্গাল সংক্রমণও পেরিকার্ডিয়ামের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
  4. হার্ট অ্যাটাক (Myocardial infarction): হার্ট অ্যাটাকের পর পেরিকার্ডিয়ামে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে, যা পেরিকার্ডিটিস সিসিনড্রোম নামে পরিচিত।
  5. অটোইমিউন রোগ: সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমেটোসাস (SLE) বা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA) এর মতো অটোইমিউন রোগগুলিও পেরিকার্ডাইটিস সৃষ্টি করতে পারে।
  6. ট্রমা বা আঘাত: হৃদপিণ্ডে আঘাত বা অস্ত্রোপচার পরবর্তী অবস্থায়ও পেরিকার্ডাইটিস হতে পারে।
  7. বেশি রক্তচাপ: দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপের কারণে পেরিকার্ডিয়ামের প্রদাহ হতে পারে।
  8. কিডনি সমস্যাগুলি: কিডনি ফেইলিওর বা কিডনি রোগের কারণে পেরিকার্ডিয়ামের প্রদাহ হতে পারে।
  9. অজ্ঞাত (Idiopathic): কখনও কখনও পেরিকার্ডাইটিসের সঠিক কারণ জানা যায় না, এটি তখন আইডিওপ্যাথিক বলা হয়।

লক্ষণ:

  1. বুকে ব্যথা: পেরিকার্ডাইটিসের প্রধান লক্ষণ হলো বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যথা, যা সাধারণত শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় বৃদ্ধি পায় এবং শোয়া অবস্থায় খারাপ হতে পারে।
  2. শ্বাসকষ্ট: বুকের ব্যথা এবং প্রদাহের কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
  3. ফুলে যাওয়া (Swelling): পায়ে বা পেটের দিকে ফুলে যাওয়ার অনুভূতি থাকতে পারে।
  4. তাপ বা জ্বর: প্রদাহের কারণে সামান্য জ্বর থাকতে পারে।
  5. মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা: হার্টের কার্যকারিতা প্রভাবিত হলে মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
  6. কাশি: কিছু ক্ষেত্রে শুকনো কাশি হতে পারে, যা ব্যথার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
  7. হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া: প্রদাহের কারণে হৃদস্পন্দন বাড়তে পারে।

প্রতিকার:

  1. ওষুধ:
    • এন্টিইনফ্ল্যামেটরি (Anti-inflammatory) ওষুধ: প্রদাহ কমাতে অ্যাসপিরিন বা ইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা হতে পারে।
    • কোলচিসিন: কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে কোলচিসিনও প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হতে পারে।
    • স্টেরয়েডস (Steroids): কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে স্টেরয়েড চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে, তবে এটি শুধুমাত্র চিকিৎসকের নির্দেশে নেওয়া উচিত।
    • অ্যান্টিবায়োটিকস: যদি প্রদাহের কারণ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিকস দেওয়া হতে পারে।
  2. বিপরীত অবস্থান: শোয়ার সময় মাথা উঁচু রেখে শোয়া, যাতে বুকের ব্যথা কিছুটা কমে আসে।
  3. অস্ত্রোপচার: যদি পেরিকার্ডিয়ামে তরল জমে যায় বা প্রদাহ বেশী গভীর হয়, তাহলে অস্ত্রোপচার বা পারিকার্ডিওসেন্টেসিস (তরল বের করে দেওয়া) প্রয়োজন হতে পারে।
  4. বিশেষ জীবনযাত্রার পরিবর্তন:
    • বিশ্রাম নেওয়া: শারীরিক কার্যকলাপ কমিয়ে বিশ্রাম নিন।
    • পানি পানের পরিমাণ বাড়ানো: শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
    • নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ: পেরিকার্ডাইটিস যদি দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়, তাহলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পেরিকার্ডাইটিস যদি সময়মতো সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি হার্টের আরো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন হার্ট ফেইলিওর বা হার্ট অ্যাটাক। তাই যদি উপসর্গগুলো দেখা দেয়, দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *