Best Homeo Doctor

পিত্তথলিতে ইনফেকশন কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

পিত্তথলিতে ইনফেকশন (Cholecystitis) হল পিত্তথলির মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোনো সংক্রমণ হওয়ার ফলস্বরূপ প্রদাহ এবং অন্যান্য সমস্যা। পিত্তথলি হল সেই অঙ্গ যা লিভারের নিচে অবস্থিত এবং পিত্ত (bile) ধারণ করে, যা হজমে সহায়তা করে। ইনফেকশন হলে পিত্তথলি ব্যথা, প্রদাহ ও জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণত, পিত্তথলির পাথরের কারণে ইনফেকশন ঘটে, কিন্তু কখনো কখনো ইনফেকশন অন্য কারণেও হতে পারে।

পিত্তথলিতে ইনফেকশনের কারণ:

  1. পিত্তথলিতে পাথর: পিত্তথলিতে পাথর জমে গেলে তা পিত্তথলির মধ্যে ব্লক সৃষ্টি করে, যার কারণে পিত্তথলির কার্যকারিতা ব্যাহত হয় এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। এই ব্লক বা অবরোধ সংক্রমণের জন্য একটি প্রধান কারণ।
  2. ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ: পিত্তথলিতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটলে, এটি প্রদাহ সৃষ্টি করে। সাধারণত, ফেকাল ব্যাকটেরিয়া (যেমন, E. coli, Klebsiella, Enterococcus) এই ধরনের ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে।
  3. পিত্তনালি অবরোধ: পিত্তথলি বা পিত্তনালির মধ্যে কোনো অবরোধ হলে, পিত্তবাহী নালিগুলির প্রবাহ ব্যাহত হয়, যা সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
  4. অতিরিক্ত গাঁজন বা খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে পিত্তথলিতে চাপ পড়তে পারে, যা ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
  5. ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা: ডায়াবেটিস বা স্থূলতা (অতিরিক্ত ওজন) পিত্তথলিতে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়, কারণ এসব অবস্থায় শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়।
  6. গর্ভাবস্থা: গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে হরমোনাল পরিবর্তন এবং পিত্তথলির কাজের পরিবর্তনের কারণে ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

পিত্তথলিতে ইনফেকশনের লক্ষণ:

পিত্তথলিতে ইনফেকশনের লক্ষণগুলো সাধারণত নিম্নলিখিতভাবে দেখা যায়:

  1. ডান পাঁজরের নিচে তীব্র ব্যথা: পিত্তথলিতে ইনফেকশন হলে, বিশেষ করে পাথরের কারণে, ডান পাঁজরের নিচে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা প্রায়ই তীব্র ও স্থায়ী হয়।
  2. জ্বর ঠাণ্ডা অনুভূতি: ইনফেকশন সৃষ্টির ফলে শরীরে জ্বর আসতে পারে, এবং কখনো কখনো ঠাণ্ডা লাগা বা শীতল অনুভূতি হতে পারে।
  3. বমি এবং বমি ভাব: পিত্তথলির ইনফেকশনের কারণে বমি বা বমি ভাব দেখা দিতে পারে। খাবার খাওয়ার পর অস্বস্তি এবং বমির অনুভূতি হতে পারে।
  4. হজমের সমস্যা: গ্যাস, অম্বল, পেট ফোলা বা তীব্র অস্বস্তি হতে পারে। বিশেষত, খাবার খাওয়ার পর পেটে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে।
  5. পিত্তের রঙ পরিবর্তন: যদি পিত্তথলির ইনফেকশন গুরুতর হয়, তবে মল হালকা রঙের হতে পারে এবং প্রস্রাব গা dark ় হয়ে যেতে পারে।
  6. লিভারের সমস্যা: কখনো কখনো পিত্তথলির ইনফেকশনের কারণে লিভারের সমস্যাও দেখা দিতে পারে, যার ফলে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যেতে পারে (জন্ডিস)।

পিত্তথলিতে ইনফেকশনের প্রতিকার:

পিত্তথলিতে ইনফেকশনের চিকিৎসা সঠিকভাবে করা না হলে, এটি গুরুতর পরিস্থিতিতে পরিণত হতে পারে। ইনফেকশন নিরাময়ের কিছু পদ্ধতি:

  1. অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি: ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে, চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার মাধ্যমে ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সাধারণত ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়।
  2. পিত্তথলির অপসারণ (Cholecystectomy): যদি পিত্তথলির ইনফেকশন গুরুতর হয় এবং পাথর থাকলে, পিত্তথলি অপসারণের (Cholecystectomy) প্রস্তাব করা হতে পারে। এটি সাধারণত ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে করা হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হয়।
  3. প্রাকৃতিক প্রতিকার:
    • লেবুর রস: লেবু পিত্তথলির সমস্যা কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি ইনফেকশন কমাতে একা যথেষ্ট নয়।
    • আলফালফা: এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা পিত্তথলির ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  4. ডায়েট কন্ট্রোল: পিত্তথলির সমস্যা ও ইনফেকশন কমাতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা উচিত, বিশেষত কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা। অতিরিক্ত মাংস, ফাস্ট ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
  5. বিশ্রাম পর্যাপ্ত পানি: যদি পিত্তথলির ইনফেকশন ঘটে, তাহলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

পিত্তথলিতে ইনফেকশন বা প্রদাহের লক্ষণ দেখা দিলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ইনফেকশন বা পাথরের কারণে পিত্তথলি অপসারণের প্রয়োজন হতে পারে, যা অত্যন্ত কার্যকরী।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *