পিঠে ব্যথা (Back Pain) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরের পিঠের কোনও অংশে ব্যথা অনুভূত হয়, যা হালকা থেকে তীব্র হতে পারে। এটি মেরুদণ্ড, পেশী, বা স্নায়ুর ক্ষতি বা চাপের কারণে হতে পারে। পিঠে ব্যথা বেশ সাধারণ একটি সমস্যা, যা জীবনের কোনো না কোনো সময় প্রায় সকলেরই হয়ে থাকে।
কারণ:
পিঠে ব্যথা হতে পারে বিভিন্ন কারণে, এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হল:
- পেশী বা লিগামেন্ট টান (Muscle or Ligament Strain):
- অতিরিক্ত পরিশ্রম, ভারী কিছু তোলার সময় ভুলভাবে বা অতিরিক্তভাবে শারীরিক পরিশ্রমের কারণে পেশী বা লিগামেন্টে টান বা আঘাত লাগতে পারে, যা ব্যথা সৃষ্টি করে।
- হেরনিয়েটেড ডিস্ক (Herniated Disc):
- মেরুদণ্ডের ডিস্কের ভেতরের অংশ বেরিয়ে গিয়ে স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি করলে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
- অস্টিওআর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis):
- মেরুদণ্ডের জয়েন্টগুলিতে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হওয়া, যেখানে জয়েন্টগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা সৃষ্টি হয়।
- পিত্তথলি বা কিডনির সমস্যা (Gallbladder or Kidney Issues):
- কিডনিতে পাথর বা কিডনি সংক্রমণও পিঠের নিচে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
- স্কোলিওসিস বা কাইফোসিস (Scoliosis or Kyphosis):
- মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিক বাঁক, যেমন স্কোলিওসিস (পিঠ বাঁকা হয়ে যাওয়া) বা কাইফোসিস (পিঠের উপরের অংশে অতিরিক্ত বাঁক) পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে।
- গর্ভাবস্থা (Pregnancy):
- গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হয়ে থাকে, বিশেষত পেছনের অংশে। এটা প্রেগন্যান্সির কারণে শরীরের ভারসাম্য পরিবর্তন হওয়ার কারণে হতে পারে।
- স্ট্রেস বা মানসিক চাপ (Stress):
- মানসিক চাপের কারণে পেশী সংকুচিত হতে পারে, যা পিঠে ব্যথা সৃষ্টি করে।
- পোস্টার বা শরীরের অবস্থান (Posture or Body Position):
- দীর্ঘ সময় এক অবস্থানে বসে থাকা, বিশেষ করে কম্পিউটারে কাজ করা বা মোবাইল ব্যবহার করার কারণে শরীরের সঠিক অবস্থান না রাখলে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
- স্নায়ু সংকুচিত হওয়া (Nerve Compression):
- মেরুদণ্ডের স্নায়ু চাপের মধ্যে পড়লে পিঠে ব্যথা হতে পারে। সায়াটিকা (Sciatica) এর কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে, যা পায়ের দিকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- টিউমার বা ক্যান্সার (Tumors or Cancer):
- মেরুদণ্ডে টিউমার বা ক্যান্সার থাকলে পিঠে ব্যথা হতে পারে, তবে এটি খুবই বিরল।
লক্ষণ:
পিঠে ব্যথার সাধারণ লক্ষণগুলো হতে পারে:
- পিঠে ব্যথা বা অস্বস্তি:
- সাধারণভাবে পিঠের যে কোনো অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
- পায়ের বা পিঠের শিরশিরে অনুভূতি:
- স্নায়ুর চাপ বা সংকুচিত হওয়ার কারণে পায়ে শিরশিরে অনুভূতি হতে পারে, বা পা অবশ হয়ে যেতে পারে।
- হাঁটা বা দাঁড়ানো কঠিন হওয়া:
- তীব্র পিঠের ব্যথা হাঁটা বা দাঁড়ানোর সময় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- পিঠের বিশেষ কোনো অংশে চাপ অনুভূতি:
- পিঠের নির্দিষ্ট অংশে চাপ বা ব্যথা থাকতে পারে।
- গোড়ালির দিকে ব্যথা ছড়ানো:
- স্নায়ুর সমস্যা বা ডিস্কের কারণে পিঠের ব্যথা পায়ের গোড়ালির দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- ব্যথার সাথে কোমরে বা পিঠে জ্বালা ভাব:
- ব্যথার সাথে গরম অনুভূতি বা জ্বালাভাব থাকতে পারে।
- মূত্রের সমস্যা বা পায়খানার সমস্যা:
- স্নায়ু চাপের কারণে মূত্র বা পায়খানার সমস্যা হতে পারে। তবে এই ধরনের সমস্যা গুরুতর হতে পারে, যা চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন।
প্রতিকার:
পিঠে ব্যথা কমাতে কিছু সাধারণ চিকিৎসা এবং প্রতিকার রয়েছে:
- বিশ্রাম (Rest):
- মেরুদণ্ডের ব্যথা হলে প্রথমে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। তবে, দীর্ঘ সময় এক জায়গায় শুয়ে না থেকে মাঝে মাঝে হাঁটাহাঁটি করা উচিত।
- গরম বা ঠাণ্ডা সেঁক (Hot or Cold Therapy):
- ঠাণ্ডা সেঁক প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, এবং গরম সেঁক পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে।
- ব্যথানাশক ওষুধ (Pain Relievers):
- প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন বা অন্যান্য ব্যথানাশক ওষুধ ব্যথা কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ফিজিক্যাল থেরাপি (Physical Therapy):
- বিশেষ ধরনের ব্যায়াম এবং ম্যানুয়াল থেরাপি পিঠের ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
- পোস্টার কোরেকশন (Postural Correction):
- সঠিক ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। খারাপ ভঙ্গিতে বসলে বা দাঁড়ালে পিঠে ব্যথা বৃদ্ধি পায়।
- শরীরের শক্তি বৃদ্ধি (Strengthening Exercises):
- পিঠের পেশী শক্তিশালী করতে কিছু বিশেষ ব্যায়াম করা উচিত। এগুলি ফিজিক্যাল থেরাপিস্টের পরামর্শে করা উচিত।
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট (Stress Management):
- মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা শিথিলকরণ কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে।
- চিরোপ্র্যাকটিক কেয়ার (Chiropractic Care):
- চিরোপ্র্যাকটিক কেয়ার পিঠের সমস্যা এবং স্নায়ু চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- অপারেশন (Surgery):
- যদি ডিস্কের সমস্যা বা গুরুতর স্নায়ু সংকুচিত হওয়া থাকে, তবে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
- যদি ব্যথা একাধিক দিন স্থায়ী হয় বা তীব্র হয়ে যায়।
- যদি পা বা হাত অবশ হয়ে যায় বা শিরশিরে অনুভূতি থাকে।
- যদি পিঠে তীব্র ব্যথার সাথে শ্বাসকষ্ট, জ্বর বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়।
- যদি ব্যথা পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে বা হাঁটার সমস্যা হয়।
- যদি মূত্র বা পায়খানার সমস্যা দেখা দেয়।
পিঠের ব্যথা সাধারণত কিছু সময়ের মধ্যে কমে যায়, তবে যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়ে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।