Best Homeo Doctor

পায়ে অসাড়তা কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

পায়ে অসাড়তা (Numbness in Legs) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে পায়ে বা পায়ের কোনো অংশে অনুভূতি কমে যায় বা পুরোপুরি চলে যায়। এটি সাধারণত অসুবিধা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করে, কারণ আপনি পায়ে কোনো ধরনের অনুভূতি পাচ্ছেন না বা খুব কম অনুভব করছেন। পায়ে অসাড়তা কখনও কখনও স্বাভাবিক হতে পারে, তবে যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা সহায়ক লক্ষণ যেমন ব্যথা, দুর্বলতা বা অস্বাভাবিক অনুভূতি থাকে, তাহলে এটি কোনো গুরুতর সমস্যা বা রোগের ইঙ্গিতও হতে পারে।

কারণ:

পায়ে অসাড়তার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, এবং এগুলি সাধারণত স্নায়ু, রক্ত প্রবাহ, বা শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে:

  1. পদ্মাসনে বসে থাকা বা দীর্ঘসময় একই পজিশনে থাকা (Pressure on Nerve):
    • এক জায়গায় দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার কারণে পায়ের স্নায়ু চাপের সম্মুখীন হতে পারে, যা অসাড়তার সৃষ্টি করতে পারে।
    • উদাহরণস্বরূপ, এক পা ক্রস করে বসে থাকা, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা বা শুয়ে থাকা পায়ের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
  2. স্নায়ুর সমস্যাগুলি (Nerve Issues):
    • পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি (Peripheral Neuropathy): এটি একটি অবস্থা যেখানে পায়ের স্নায়ুগুলিতে ক্ষতি হয়, সাধারণত ডায়াবেটিস, ভাইরাল সংক্রমণ বা বিষাক্ত পদার্থের কারণে।
    • adikopathy: পিঠের স্নায়ু চাপের কারণে পায়ে অসাড়তা হতে পারে, বিশেষ করে যখন স্পাইনাল ডিস্ক স্লিপ করে বা সংকুচিত হয়।
  3. রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা (Poor Circulation):
    • এথেরোস্ক্লেরোসিস (Atherosclerosis): এটি একটি অবস্থা যেখানে রক্তনালীর মধ্যে প্রদাহ এবং তেল জমে রক্ত প্রবাহ কমে যেতে পারে, যার ফলে পায়ে অসাড়তা হতে পারে।
    • ভেরিকোস ভেইন (Varicose Veins): পায়ের শিরায় রক্তের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হলে অসাড়তা বা অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।
  4. আঘাত বা ইনজুরি (Injury or Trauma):
    • পায়ের বা পিঠের কোনো আঘাতের কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে পায়ে অসাড়তা হতে পারে।
  5. হরমোনাল পরিবর্তন (Hormonal Changes):
    • গর্ভাবস্থায়, বিশেষত তৃতীয় ত্রৈমাসিকে, হরমোনাল পরিবর্তন এবং শরীরের অতিরিক্ত চাপের কারণে পায়ে অসাড়তা হতে পারে।
  6. কীটনিত্ত এবং অন্যান্য রোগ (Other Conditions):
    • মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis): এটি একটি স্নায়ুজনিত রোগ, যেখানে স্নায়ুর প্রোটেক্টিভ কোট (মাইলিন শীথ) ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
    • স্ট্রোক (Stroke): যদি কোনো অংশের স্নায়ু কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তাহলে পায়ে অসাড়তা এবং দুর্বলতা হতে পারে।
    • বিষাক্ত পদার্থ (Toxins): কিছু ক্ষেত্রে, বিষাক্ত পদার্থ যেমন মদ্যপান বা অতিরিক্ত ওষুধের কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  7. অ্যালকোহল বা ড্রাগ ব্যবহার (Alcohol or Drug Use):
    • অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মাদকদ্রব্য গ্রহণের কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং পায়ে অসাড়তা সৃষ্টি করতে পারে।

লক্ষণ:

পায়ে অসাড়তা বা নাম্বনেস এর কিছু সাধারণ লক্ষণ:

  1. পায়ে অনুভূতির অভাব (Loss of Sensation):
    • পায়ের কোনো একটি অংশ বা পুরো পা অবশ হয়ে যেতে পারে, এবং আপনি সেখানে কোনো অনুভূতি অনুভব করতে পারবেন না।
  2. পায়ে শিরশির অনুভূতি (Tingling Sensation or “Pins and Needles”):
    • অসাড়তা সাধারণত শিরশির অনুভূতির সাথে আসে, যা পায়ে “পিন এবং নিডলস” এর মতো অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত স্নায়ু চাপে সৃষ্টি হয়।
  3. দুর্বলতা বা অস্বস্তি (Weakness or Discomfort):
    • অসাড়তা সাধারণত পায়ে দুর্বলতা বা অস্বস্তির অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে, ফলে চলাফেরা করা কঠিন হতে পারে।
  4. চলাফেরায় সমস্যা (Difficulty Walking):
    • যদি পায়ে অসাড়তা বেশি থাকে, তাহলে হাঁটা বা চলাফেরা করতে অসুবিধা হতে পারে, কারণ পায়ে শক্তি বা সমন্বয় কমে যেতে পারে।
  5. ব্যথা (Pain):
    • অসাড়তার সাথে কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে যখন পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা রক্ত প্রবাহ কমে যায়।

প্রতিকার:

পায়ে অসাড়তা নির্ভর করে এর কারণের উপর, তবে সাধারণ কিছু প্রতিকার এবং চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে:

  1. বিশ্রাম এবং অবস্থান পরিবর্তন (Rest and Changing Positions):
    • যদি দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে অসাড়তা হয়, তাহলে অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে এবং হাঁটাহাঁটি বা সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
  2. আইস সেঁক (Ice or Heat Therapy):
    • পায়ে কোনো ধরনের আঘাতের কারণে অসাড়তা হয়ে থাকলে, বরফ বা গরম সেঁক দিয়ে চাপ কমানো যেতে পারে। তবে, রক্ত প্রবাহের সমস্যা থাকলে গরম সেঁক ব্যবহার করা ভালো।
  3. বিশেষ ব্যায়াম (Exercises):
    • স্নায়ু এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করার জন্য নিয়মিত কিছু হালকা ব্যায়াম করা উচিত। যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং ব্যায়াম স্নায়ু চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  4. ওজন নিয়ন্ত্রণ (Weight Management):
    • অতিরিক্ত ওজন পায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তাই সঠিক ওজন বজায় রাখাটা জরুরি।
  5. ভিটামিন এবং মিনারেল গ্রহণ (Vitamin and Mineral Intake):
    • পায়ে অসাড়তা যদি নিউরোপ্যাথির কারণে হয়, তাহলে ভিটামিন বি-১২, ম্যাগনেসিয়াম বা অন্যান্য স্নায়ু সহায়ক উপাদান গ্রহণ সহায়ক হতে পারে।
  6. চিকিৎসক পরামর্শ (Doctor Consultation):
    • যদি অসাড়তা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা শিরশির অনুভূতি এবং ব্যথার সাথে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষত যদি স্ট্রোক, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস বা অন্য গুরুতর রোগের সম্ভাবনা থাকে।
  7. ওষুধ (Medications):
    • চিকিৎসক যদি স্নায়ুজনিত রোগ বা ইনফেকশন শনাক্ত করেন, তবে সঠিক ওষুধ দেওয়ার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হতে পারে। বিশেষ করে, নিউরোপ্যাথির জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ prescribed হতে পারে।
  8. কর্মরত অবস্থানে পরিবর্তন (Changing Work Habits):
    • যদি কাজের কারণে পায়ে অসাড়তা হয়ে থাকে, তবে কাজের পজিশন পরিবর্তন বা নিয়মিত বিরতি নেওয়া উচিত।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন:

  • যদি অসাড়তা বা শিরশির অনুভূতি চলতে থাকে এবং ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
  • যদি পায়ে দুর্বলতা বা প্যারালাইসিস (অক্ষমতা) দেখা যায়।
  • যদি পায়ে ব্যথা, ফোলা বা অন্য কোনো লক্ষণ থাকে যা স্ট্রোক বা গুরুতর স্নায়ুজনিত সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
  • যদি পায়ে অসাড়তার সাথে অনুভূতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি হার্টের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, অথবা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ থাকে।

এছাড়া, যদি আপনার কোনো নির্দিষ্ট রোগ (যেমন ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, ম্যালেরিয়া, কিডনি রোগ ইত্যাদি) থাকে, তখন পায়ে অসাড়তা আপনার জন্য এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কেত হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *