Best Homeo Doctor

পাকস্থলী ক্ষত কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

পাকস্থলী ক্ষত (Gastric Ulcer) হল পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ শ্লৈষ্মিক স্তরের ক্ষতি বা ঘা হওয়া। এটি এক ধরনের পেপটিক আলসার এবং এটি পাকস্থলীতে এসিডের কারণে হতে পারে। পাকস্থলী ক্ষত সাধারণত পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ আবরণে ক্ষত সৃষ্টি করে, যা খাদ্য পচন প্রক্রিয়া এবং হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কারণ:

পাকস্থলী ক্ষতের কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে:

  1. হেলিকোব্যাকটর পাইলোরি (Helicobacter pylori) ব্যাকটেরিয়া:
    • এই ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীতে প্রবেশ করে শ্লৈষ্মিক আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হেলিকোব্যাকটর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া পেটে এসিডের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শীতলতা তৈরি করে, যার ফলে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।
  2. অতিরিক্ত এসিড উৎপাদন:
    • অতিরিক্ত এসিড উৎপাদন পাকস্থলীর শ্লৈষ্মিক আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং পাকস্থলীতে ঘা সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত এসিড সাধারণত খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণে হতে পারে।
  3. ননস্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs):
    • দীর্ঘকালব্যাপী NSAIDs (যেমন, ইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিন) গ্রহণ পাকস্থলীর শ্লৈষ্মিক আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হয়।
  4. অতিরিক্ত মদ্যপান:
    • মদ্যপান পাকস্থলীর শ্লৈষ্মিক আবরণকে আঘাত করে এবং এসিড উৎপাদন বাড়ায়, যার ফলে পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।
  5. ধূমপান:
    • ধূমপান পাকস্থলীর শ্লৈষ্মিক আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি করতে সহায়তা করতে পারে।
  6. মানসিক চাপ:
    • দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ বা উদ্বেগ পাকস্থলীর এসিড উৎপাদন বাড়ায়, যা পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।
  7. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
    • অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, ভাজা খাবার, চকলেট, ক্যাফেইন, এবং অতিরিক্ত তেল বা চর্বি যুক্ত খাবার পাকস্থলীর ক্ষতি করতে পারে।

লক্ষণ:

পাকস্থলী ক্ষতের লক্ষণগুলো সাধারণত কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  1. পেটের ব্যথা:
    • পাকস্থলীতে একটি তীব্র, গম্ভীর বা ঝাঁঝালো ব্যথা অনুভূত হয়, যা খাবার খাওয়ার পর বৃদ্ধি পেতে পারে অথবা খালি পেটে অনুভূত হতে পারে।
  2. অরুচি (Loss of Appetite):
    • পাকস্থলী ক্ষতের কারণে রোগী অরুচি অনুভব করতে পারেন এবং খাবার খেতে অনিচ্ছুক থাকতে পারেন।
  3. বমি বা বমির অনুভূতি:
    • রোগী কখনও কখনও বমি বা বমির অনুভূতি অনুভব করতে পারেন, বিশেষ করে খাবারের পর।
  4. ওজন কমে যাওয়া:
    • পাকস্থলীর ক্ষতের কারণে পেটের ব্যথা এবং খাবারে অরুচি থাকার ফলে রোগী সাধারণত ওজন হারাতে পারেন।
  5. রক্তবর্ণ বা কালো মল:
    • পাকস্থলীর ক্ষত থেকে রক্তপাত হলে পায়খানার রঙ কালো বা রক্তাক্ত হয়ে যেতে পারে। এটি গুরুতর এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
  6. পেট ফাঁপা বা অতিরিক্ত গ্যাস:
    • পাকস্থলীর ক্ষত থাকা রোগীরা অতিরিক্ত গ্যাস বা পেট ফাঁপা অনুভব করতে পারেন।

প্রতিকার:

পাকস্থলী ক্ষতের চিকিৎসার জন্য কিছু সাধারণ পদ্ধতি রয়েছে:

  1. ঔষধ:
    • প্রটন পাম্প ইনহিবিটরস (PPIs): পাকস্থলীর এসিড উৎপাদন কমিয়ে ক্ষত সারাতে সহায়তা করে। যেমন ওমেপ্রাজোল, ইসোমেপ্রাজোল, ল্যানসোমেপ্রাজোল
    • এইচ২ রিসেপ্টর ব্লকারস (H2 blockers): এসিড উৎপাদন কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন রেনিটিডিন, ফামোটিডিন
    • অ্যান্টিবায়োটিকস: যদি হেলিকোব্যাকটর পাইলোরি সংক্রমণ হয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, যেমন অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজল
    • এন্টিঅ্যাসিড: এসিড শোষণ করতে সাহায্যকারী ওষুধ, যেমন ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড
    • অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ঔষধ: প্রদাহ কমাতে ব্যবহার করা হয়, তবে সেগুলি পাকস্থলীর ক্ষত আরও বাড়াতে পারে, তাই এগুলি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
  2. ডায়েট:
    • হালকা খাবার খাওয়া: পাকস্থলীর ক্ষত হলে পেটের ওপর চাপ কমানোর জন্য হালকা, সহজ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত, যেমন সেদ্ধ ভাত, সেদ্ধ আলু, সেদ্ধ মাংস।
    • ভাজা বা মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করা: অতিরিক্ত তেল, মশলা বা চকলেটের খাবার পরিহার করা উচিত, যা পাকস্থলীর ক্ষত বাড়াতে পারে।
    • ছোট পরিমাণে খাবার খাওয়া: খাবারগুলো ছোট পরিমাণে কয়েকবার খাওয়া উচিত, যাতে পাকস্থলীতে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
  3. ধূমপান এবং মদ্যপান পরিহার:
    • ধূমপান এবং মদ্যপান পাকস্থলীর শ্লৈষ্মিক আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তাই এগুলো পরিহার করা উচিত।
  4. মানসিক চাপ কমানো:
    • মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম, ধ্যান বা শিথিলকরণ কৌশল অবলম্বন করা উচিত।
  5. চিকিৎসকের পরামর্শ:
    • দীর্ঘকালীন বা তীব্র পেটের ব্যথা, রক্তপাত, বমি বা কালো মল দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

যখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • যদি পেটের ব্যথা তীব্র হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  • যদি পায়খানায় রক্ত দেখা যায় বা গা dark ় মল দেখা যায়।
  • যদি বমি বা বমির সঙ্গে রক্ত থাকে।
  • যদি খাবারের প্রতি অরুচি বা স্থূলতা দেখা দেয়।

পাকস্থলী ক্ষত সাধারণত চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তবে এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়, কারণ এটি গুরুতর সমস্যায় পরিণত হতে পারে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *