পাকস্থলীর ক্যান্সার (Stomach Cancer) বা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার হচ্ছে পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ কোষগুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ক্যান্সারের কারণে এটি পকস্থলীতে ক্ষতি সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত পাকস্থলীর শ্লেষ্মা এবং তার আশেপাশের টিস্যুগুলিকে আক্রান্ত করে এবং পরে অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাকস্থলীর ক্যান্সার ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে, তাই এটি অনেক সময় দেরিতে ধরা পড়ে।
কারণ:
পাকস্থলীর ক্যান্সারের সঠিক কারণ জানা না গেলেও কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়:
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অধিক পরিমাণে মাংস, চর্বিযুক্ত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া, অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবারও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
- হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি (Helicobacter pylori) সংক্রমণ: এই ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলীর আলসারের কারণ এবং দীর্ঘদিন ধরে এই সংক্রমণ থাকলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- ধূমপান: তামাকের ব্যবহার পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়।
- পাকস্থলীর অ্যালসার: দীর্ঘস্থায়ী পাকস্থলীর আলসারের কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- জেনেটিক কারণ: যদি পরিবারে কেউ পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকে, তবে তারও এই রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন: অ্যালকোহলও পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- অতিরিক্ত ওজন বা মোটা হওয়া: স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনও পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- বয়স ও লিঙ্গ: বয়স বাড়ার সাথে সাথে এবং পুরুষদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
লক্ষণ:
পাকস্থলীর ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গ খুব স্পষ্ট নাও হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:
- পেটের ব্যথা: পাকস্থলীতে বা পেটের উপরের দিকে ব্যথা অনুভব হতে পারে, বিশেষত খাওয়ার পর।
- অস্বাভাবিক ক্ষুধামন্দা: খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া বা খাওয়ার ইচ্ছা না হওয়া।
- ওজন কমে যাওয়া: অজানা কারণে হঠাৎ করে শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
- অস্বস্তি বা পরিপূর্ণতা অনুভব করা: খাবার খাওয়ার পর অতিরিক্ত পরিপূর্ণতা অনুভব করা বা পেট ভারি লাগা।
- বমি বা বমি বমি ভাব: বিশেষত খাবার খাওয়ার পর বা কোন কিছু হজম না হওয়া।
- রক্তক্ষরণ: মলের সঙ্গে রক্ত দেখা যাওয়া বা কালো রঙের মল হওয়া (পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণের কারণে)।
- অবসাদ বা ক্লান্তি: শরীরে শক্তি কম অনুভব হওয়া এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি।
- গলা বা বুকের মধ্যে অস্বস্তি: গলা বা বুকের মধ্যে জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি হতে পারে।
প্রতিকার:
পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরণ, পর্যায়, এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী। কিছু সাধারণ চিকিৎসার পদ্ধতি:
- সার্জারি (অস্ত্রোপচার): ক্যান্সার আক্রান্ত পাকস্থলীর অংশ বা পুরো পাকস্থলী অপসারণ করা যেতে পারে। যদি ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তবে অস্ত্রোপচার করা খুবই কার্যকরী হতে পারে।
- কেমোথেরাপি: ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার জন্য কেমোথেরাপি চিকিৎসা দেওয়া হয়। এটি অপারেশনের পর বা ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে ব্যবহার করা হতে পারে।
- রেডিয়েশন থেরাপি: ক্যান্সারের কোষগুলো ধ্বংস করার জন্য রেডিয়েশন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়।
- টার্গেটেড থেরাপি: এই থেরাপিতে ক্যান্সারের কোষগুলোতে সুনির্দিষ্টভাবে লক্ষ্যমাত্রা রেখে ঔষধ প্রয়োগ করা হয়।
- ইমিউনোথেরাপি: শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ইমিউনোথেরাপি ব্যবহৃত হতে পারে।
- প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মাধ্যমে উপশম: যদি ক্যান্সার খুব উন্নত পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং নিরাময়ের সম্ভাবনা না থাকে, তবে রোগীর যন্ত্রণা কমানোর জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশম চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রতিরোধ:
পাকস্থলীর ক্যান্সারের কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, বিশেষত বেশি তাজা ফলমূল, শাকসবজি এবং ফাইবারযুক্ত খাবার।
- ধূমপান এবং অ্যালকোহল পরিহার: তামাক ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখুন।
- পাকস্থলীর আলসার ও ইনফেকশন চিকিৎসা: হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি সংক্রমণ থাকলে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা নিলে পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেকটা সফল হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।