Best Homeo Doctor

নেফ্রোটিক সিনড্রোম কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

নেফ্রোটিক সিনড্রোম (Nephrotic Syndrome) হলো একটি কিডনি সম্পর্কিত রোগ, যা কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমে সমস্যা সৃষ্টি করে। এই রোগের ফলে কিডনি পেশীর অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। নেফ্রোটিক সিনড্রোমের কারণে শরীরে প্রোটিনের অভাব দেখা দেয়, যা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

নেফ্রোটিক সিনড্রোমের কারণ:

নেফ্রোটিক সিনড্রোমের কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:

  1. প্রাথমিক কিডনি রোগ (Primary Kidney Disease):
    • গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস: এটি কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমের প্রদাহ, যা নেফ্রোটিক সিনড্রোম সৃষ্টি করতে পারে।
    • ফোকাল সেগমেন্টাল গ্লোমেরুলোস্ক্লেরোসিস (FSGS): এই রোগে কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমে স্কার টিস্যু তৈরি হয়, যার কারণে প্রোটিন মূত্রের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।
    • মিনিমাল চেঞ্জ ডিজিজ (Minimal Change Disease): এটি এক ধরনের অটোইমিউন রোগ, যা সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
  2. দ্বিতীয় কিডনি রোগ (Secondary Kidney Disease):
    • ডায়াবেটিস মেলিটাস: দীর্ঘস্থায়ী ডায়াবেটিস কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমে ক্ষতি করতে পারে, যা নেফ্রোটিক সিনড্রোম সৃষ্টি করে।
    • হাইপারটেনশন (High Blood Pressure): উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি করে এবং নেফ্রোটিক সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়ায়।
    • লুপাস (Systemic Lupus Erythematosus): এটি একটি অটোইমিউন রোগ যা কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
    • হেপাটাইটিস, HIV, বা অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণ: কিছু ভাইরাল সংক্রমণও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করে নেফ্রোটিক সিনড্রোম সৃষ্টি করতে পারে।
  3. জেনেটিক কারণ:
    • কিছু ক্ষেত্রে, নেফ্রোটিক সিনড্রোম বংশগত হতে পারে। বিশেষত, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোটিক সিনড্রোম (শিশুদের মধ্যে) কখনো কখনো জেনেটিক কারণে ঘটে।
  4. প্রতিষেধক বা সাপ্লিমেন্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
    • কিছু ওষুধ বা সাপ্লিমেন্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে নেফ্রোটিক সিনড্রোম দেখা দিতে পারে।

নেফ্রোটিক সিনড্রোমের লক্ষণ:

নেফ্রোটিক সিনড্রোমের কিছু সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ হলো:

  1. অতিরিক্ত শরীরের জল ধারণ (Edema):
    • শরীরে জল জমে যাওয়ার কারণে পায়ে, পেট, চোখের নিচে ফোলা বা স্বেলিং হতে পারে। সাধারণত এটি প্রথমে পায়ের পাতা এবং পায়ের গোড়ালিতে দেখা যায়।
  2. প্রোটিনুরিয়া (Proteinuria):
    • মূত্রে অতিরিক্ত প্রোটিন থাকা, যা মূত্রের সাদা রং দেখানোর কারণ হতে পারে। এটি কিডনি ফিল্টারিং সিস্টেমের অকার্যকারিতার লক্ষণ।
  3. হাইপোঅ্যালবুমিনেমিয়া (Hypoalbuminemia):
    • রক্তে প্রোটিনের (বিশেষ করে অ্যালবুমিন) কম পরিমাণ দেখা যায়। এর ফলে রক্তের প্রোটিনের ঘাটতি হয় এবং শরীরের মধ্যে জল জমা হতে পারে।
  4. কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উচ্চতা:
    • রক্তে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের স্তর বৃদ্ধি পেতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  5. থাকানোর অভাব (Anorexia):
    • কিছু রোগী খাবারের প্রতি অনীহা অনুভব করেন এবং খাবার খেতে চান না।
  6. মাথা ব্যথা এবং ক্লান্তি:
    • প্রোটিনের অভাব, জল জমা এবং কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে ক্লান্তি এবং মাথা ব্যথা হতে পারে।
  7. শ্বাসকষ্ট:
    • শরীরে অতিরিক্ত জল জমে গেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, বিশেষ করে শোওয়ার সময়ে।

নেফ্রোটিক সিনড্রোমের প্রতিকার:

নেফ্রোটিক সিনড্রোমের চিকিৎসা এবং প্রতিকার নির্ভর করে তার কারণ ও লক্ষণের ওপর। এটি চিকিৎসা না করলে কিডনি ব্যর্থতা বা অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিছু সাধারণ প্রতিকার পদ্ধতি:

  1. ওষুধ:
    • কোর্টিকোস্টেরয়েড (Steroids): অনেক ক্ষেত্রে গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস বা মিনিমাল চেঞ্জ ডিজিজের চিকিৎসা হিসেবে স্টেরয়েড দেওয়া হয়।
    • ইমিউনসপ্রেসিভ ওষুধ: যদি স্টেরয়েডের মাধ্যমে ভালো ফল না পাওয়া যায়, তবে ইমিউনসপ্রেসিভ (যেমন, সাইক্লোফসফামাইড, মাইকোফেনোলেট) ওষুধ ব্যবহার করা হতে পারে।
    • ডায়ুরেটিকস (Diuretics): শরীরের অতিরিক্ত জল অপসারণের জন্য ডায়ুরেটিক (পানী কমানোর) ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
    • এন্টিহাইপারটেনসিভ ড্রাগস: উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য ওষুধ (যেমন ACE ইনহিবিটর) দেওয়া যেতে পারে।
    • হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া (Hypercholesterolemia) নিয়ন্ত্রণের জন্য স্ট্যাটিন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হতে পারে।
  2. ডায়েট:
    • লবণ কমানো: শরীরে জল জমা ও ফোলাভাব কমাতে লবণের পরিমাণ কমানো উচিত।
    • প্রোটিন: পেশী গঠন এবং অন্যান্য শরীরের কার্যকলাপ বজায় রাখতে প্রোটিনের পরিমাণ ঠিকভাবে খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়, তবে অত্যধিক প্রোটিনও শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
    • কম চর্বি উচ্চ আঁশ: কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কম রাখতে কম চর্বি এবং বেশি আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে।
  3. কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বা ডায়ালিসিস:
    • যদি কিডনি পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে যায়, তবে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বা ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হতে পারে।
  4. রেগুলার মেডিক্যাল চেকআপ:
    • নিয়মিতভাবে কিডনির কার্যকারিতা এবং রক্ত পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।

পরামর্শ:

নেফ্রোটিক সিনড্রোম একটি গুরুতর কিডনি সমস্যা, তবে যথাযথ চিকিৎসা এবং মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি কেউ নেফ্রোটিক সিনড্রোমের লক্ষণ অনুভব করেন, যেমন শরীরে জল জমা বা প্রোটিন মূত্রে বের হওয়া, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *