নাভী বৃদ্ধি (Umbilical hernia) হলো একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে নাভীর চারপাশের পেশী বা ত্বক দুর্বল হয়ে যায় এবং এর মাধ্যমে অন্ত্রের অংশ বা অন্য কোনো অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বেরিয়ে আসতে থাকে। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও এটি হতে পারে।
নাভী বৃদ্ধির কারণ:
- জন্মগত কারণ: অনেক শিশু জন্মের সময় নাভীর চারপাশের পেশী সম্পূর্ণভাবে বন্ধ না হওয়ায়, নাভী থেকে অন্ত্রের অংশ বাইরে বেরিয়ে আসে। এটি সাধারণত জন্মের পর কয়েক মাসের মধ্যে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়।
- অতিরিক্ত চাপ: দীর্ঘ সময় ধরে হাঁচি দেওয়া, কাশি হওয়া, ভারী কিছু তোলা বা মূত্রত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ পড়লে নাভী অঞ্চলে পেশী দুর্বল হতে পারে, যার ফলে হেরনিয়া তৈরি হতে পারে।
- অতিরিক্ত শারীরিক ওজন: অতিরিক্ত ওজন বা মেদ জমলে ত্বক এবং পেশী উপর চাপ তৈরি হয়, যা নাভী এলাকায় হেরনিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় গর্ভের বেড়ে যাওয়া আকার এবং পেটের চাপও নাভী বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
- বয়স: প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে নাভী বৃদ্ধি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে যদি তাদের পেশী দুর্বল হয়ে থাকে বা আগের কোনো শল্যচিকিৎসা থাকে।
নাভী বৃদ্ধির লক্ষণ:
- নাভী অঞ্চলে ফুলে ওঠা বা বের হওয়া: নাভীর চারপাশে একটি ছোট বা বড় ফুটো সৃষ্টি হয়ে এর মাধ্যমে অন্ত্রের অংশ বা মেদ বেরিয়ে আসে।
- ব্যথা বা অস্বস্তি: হালকা ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে তীব্র শারীরিক পরিশ্রমের সময় বা হাঁটাচলা করার সময়।
- ফুলে ওঠা আরও বাড়ানো: যদি নাভী অঞ্চলে মাংসপিণ্ড বা ফোলা অংশ দেখা দেয়, তা তখন বেশি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, বিশেষ করে হাঁটার বা বসে থাকার সময়।
- ব্যথার তীব্রতা বৃদ্ধি: কিছু ক্ষেত্রে, নাভী বৃদ্ধির কারণে তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি একটি গুরত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
- মাথা ঘুরানো বা বমি আসা: কিছু ক্ষেত্রে, নাভী বৃদ্ধির কারণে অন্ত্রের কোনো অংশ আটকে যেতে পারে, যার ফলে পেটের ব্যথা, মাথা ঘোরা বা বমি হতে পারে। এটি একটি জরুরি চিকিৎসা পরিস্থিতি হতে পারে।
নাভী বৃদ্ধির প্রতিকার:
- শল্যচিকিৎসা (Surgical repair): সবচেয়ে সাধারণ এবং কার্যকরী চিকিৎসা হলো শল্যচিকিৎসা, যেখানে ডাক্তার নাভীর চারপাশের পেশীকে শক্ত করে সেলাই দিয়ে ঠিক করে দেন। এটি সাধারণত নাভী বৃদ্ধির নিরাময় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- শরীরের চাপ নিয়ন্ত্রণ: যাদের নাভী বৃদ্ধির কারণে সমস্যা হচ্ছে, তাদের ভারী কিছু তোলা বা অতিরিক্ত শারীরিক চাপ এড়িয়ে চলা উচিত।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত শারীরিক ওজন বা মেদ ঝরানোও নাভী বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম এতে সাহায্য করতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের ব্যান্ডেজ ব্যবহার: কিছু ক্ষেত্রে, নাভী বৃদ্ধির জন্য বিশেষ ধরনের ব্যান্ডেজ বা বেল্ট ব্যবহার করা হতে পারে, যা সমস্যা মোকাবেলায় সাহায্য করে।
- অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি ওষুধ: ব্যথা বা প্রদাহ কমানোর জন্য অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ (যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন) চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে।
যখন চিকিৎসকের সাহায্য প্রয়োজন:
- যদি নাভী বৃদ্ধি অত্যন্ত ব্যথাদায়ক হয়।
- যদি এটি আরও বড় হতে থাকে বা পেটের মধ্যে একটি আটকে থাকা অংশ দেখা দেয়, যা গ্যাস্ট্রিক বা অন্ত্রের সমস্যার কারণ হতে পারে।
- যদি নাভী বৃদ্ধির কারণে পেটের অংশে ঘুরানো বা বমি হতে থাকে।
- যদি কোন ফোলা অংশ বা ফুটো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে শুরু করে, তখন অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সারাংশ: নাভী বৃদ্ধি সাধারণত গুরুতর না হলেও, এটি সময়মতো চিকিৎসা না নিলে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে শল্যচিকিৎসা করা হলে সমস্যা সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব।