Best Homeo Doctor

নবজাত শিশুর মাথায় টিউমার কি,কারন,লক্ষন,প্রতিকার

নবজাত শিশুর মাথায় টিউমার বলতে মাথার স্ক্যাল্প, মস্তিষ্ক, বা অন্য যে কোনও অংশে টিউমারের সৃষ্টি হতে পারে। এটি একটি অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি বা স্ফীতি, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে মাথায় টিউমার সাধারণত বিনাইন (benign) বা সাধারণত ক্ষতিকারক নয় এবং বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি সেরে যায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ম্যালিগন্যান্ট (malignant) টিউমারও হতে পারে, যা চিকিৎসা প্রয়োজন।

নবজাত শিশুর মাথায় টিউমারের কারণ:

নবজাত শিশুর মাথায় টিউমারের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে:

  1. বিনাইন টিউমার:
    • সিস্ট (Cysts): নবজাতক শিশুদের মাথায় পানি বা তরল ভরা সিস্ট তৈরি হতে পারে। সাধারণত এটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেরে যায় এবং ক্ষতিকারক নয়।
    • হেমাটোমা (Hematoma): জন্মের সময় মাথায় চাপ বা আঘাতের কারণে রক্ত জমে একটি হেমাটোমা তৈরি হতে পারে। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সময়ের সাথে সেরে যায়।
  2. ম্যালিগন্যান্ট টিউমার:
    • ক্যান্সার (Cancer): নবজাতক শিশুদের মধ্যে কিছু ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, যেমন ব্রেন ক্যান্সার বা নিউরোব্লাস্টোমা (Neuroblastoma) হতে পারে, যা দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন।
  3. জেনেটিক কারণ:
    • কিছু টিউমার জন্মগতভাবে হতে পারে এবং এটি শিশুর বংশগতির কারণে হতে পারে।
  4. বিকৃত কোষের বৃদ্ধি (Cell Mutation):
    • জন্মের সময় কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা মিউটেশন ঘটতে পারে, যার ফলে টিউমার তৈরি হতে পারে।

নবজাত শিশুর মাথায় টিউমারের লক্ষণ:

নবজাতকের মাথায় টিউমারের কিছু সাধারণ লক্ষণ হতে পারে, যেমন:

  1. স্ফীতি বা গুটি (Swelling or Lump):
    • শিশুর মাথায় স্ফীতি বা গুটি দেখা যেতে পারে, যা টিউমারের প্রধান লক্ষণ হতে পারে।
  2. হেমাটোমা বা রক্ত জমা:
    • জন্মের সময় শিশুর মাথায় আঘাতের কারণে রক্ত জমে ছোট বা বড় আকারে একটি স্ফীতি তৈরি হতে পারে।
  3. মাথার আকারে পরিবর্তন:
    • যদি টিউমারটি মস্তিষ্কে বা মাথার অন্য অংশে হয়, তবে মাথার আকার বা গঠন পরিবর্তিত হতে পারে।
  4. কান্না বা অস্বস্তি:
    • টিউমারের কারণে শিশুর মাথায় ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে, যার কারণে শিশুটি বেশি কান্না করতে পারে।
  5. স্নায়ুর সমস্যা:
    • কিছু টিউমার মস্তিষ্কে অবস্থান করলে স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন চোখের দৃষ্টি কমে যাওয়া, অবসন্নতা, বা মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা কমে যাওয়া।
  6. শরীরের অন্যান্য লক্ষণ:
    • কখনও কখনও শিশুর শরীরের অন্যান্য অংশে সমস্যা, যেমন খাওয়া না চাওয়া বা ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

নবজাত শিশুর মাথায় টিউমারের প্রতিকার:

নবজাতক শিশুর মাথায় টিউমারের চিকিৎসা তার ধরণ এবং অবস্থার ওপর নির্ভর করে:

  1. বিনাইন টিউমার:
  • নিরীক্ষণ: অনেক সময় বিনাইন টিউমারের ক্ষেত্রে চিকিৎসক কেবল পর্যবেক্ষণ করতে বলেন, কারণ কিছু টিউমার নিজে থেকেই সেরে যায়।
  • ড্রেনেজ বা সার্জারি: কিছু সিস্ট বা হেমাটোমা অপসারণের জন্য সার্জারি করা হতে পারে। তবে এটি সাধারণত খুবই ছোট পরিসরে হয়।
  1. ম্যালিগন্যান্ট টিউমার (ক্যান্সার):
  • সার্জারি: যদি টিউমারটি ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সার হয়, তবে চিকিৎসক প্রথমে টিউমারটি অপসারণের জন্য সার্জারি করতে পারেন।
  • কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি: ক্যান্সারের জন্য কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি প্রয়োগ করা হতে পারে। এটি টিউমারের কোষগুলো ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • অপারেশন বা অস্ত্রোপচার: যদি মস্তিষ্কের কোনো টিউমার থাকে, তবে অপারেশন বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এটি অপসারণ করা হতে পারে।
  1. সিস্ট বা হেমাটোমা:
  • অবস্থার উপর নির্ভর: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিস্ট বা হেমাটোমা শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেরে যায়, তবে কখনও কখনও যদি সমস্যা থাকে, তাহলে সার্জারি বা ড্রেনেজের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হতে পারে।
  1. পুনঃপরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ:
  • শিশুর মাথায় টিউমার হওয়ার পর চিকিৎসক নিয়মিত পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দেন, বিশেষ করে যদি টিউমারটির প্রকৃতি নির্ধারণ করা প্রয়োজন হয়।

প্রতিরোধ:

  1. গর্ভাবস্থায় যত্ন:
    • গর্ভাবস্থায় একটি সঠিক জীবনযাপন এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে শিশুর মাথায় কোন ধরনের সমস্যা বা টিউমারের ঝুঁকি কমে যেতে পারে।
  2. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
    • গর্ভবতী মহিলাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও আলট্রাসোনোগ্রাফি করা উচিত, যাতে শিশুর মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সঠিক অবস্থান ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা যায়।
  3. জন্মকালীন আঘাতের যত্ন:
    • শিশুর জন্মের সময় মাথায় আঘাত যাতে না লাগে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে এর প্রতিকার করা উচিত।

শেষ কথা:

নবজাতক শিশুর মাথায় টিউমার হওয়া একটি গুরুতর বিষয় হলেও অধিকাংশ সময় এটি বিনাইন হয়ে থাকে এবং সময়ের সাথে সেরে যায়। তবে যদি টিউমারটি ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সারজাতীয় হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ এবং তত্ত্বাবধানে রাখা শিশুর জন্য সর্বোত্তম ফলদায়ক হতে পারে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *